শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কওমি শিক্ষার্থীদের মাদরাসা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে টিসি (ছাড়পত্র)র প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

টিসি (Transfer Certificate) বা ছাড়পত্র নিয়ে এক বিদ্যালয় পরিবর্তন করে অন্য বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। জেনারেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবস্থা থাকলেও কওমি মাদরাসায় নেই এমন কোন নিয়ম।

মাদরাসাগুলোতে রমজানের পর বছর শুরু হয়ে শেষ হয় শাবানে আরেক রমজানের আগে। নতুন শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থী এক মাদরাসা ছেড়ে অন্য মাদরাসায় ভর্তি হতে পারেন সহজেই, পূর্বের প্রতিষ্ঠানের কোন রকম টিসি বা ছাড়পত্র ছাড়াই।

দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এই নিয়মের ফলে অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। কেউ এক মাদরাসায় হেদায়াতুন নাহু শেষ করে অন্যকোন প্রতিষ্ঠানে শরহে বেকায়া অথবা জালালাইনেও ভর্তি হয়ে যান- এমন অভিযোগও শোনা যায়।

আবার বিভিন্ন কারণে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির অযোগ্য ঘোষণা করা হয় অনেক সময়। এদিকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে টিসি বা ছাড়পত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনায়েসেই সে ভর্তি হচ্ছে অন্য কোথাও।

এছাড়াও টিসি বা ছাড়পত্রের বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেকেই বার্ষিক পরীক্ষা না দিয়ে প্রতিষ্ঠান পাল্টানোর সুযোগ পেয়ে যান। এসবের বিপরীতে ভিন্ন চিত্রও রয়েছে।

অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রদের অন্য মাদরাসায় ভর্তির পক্ষে থাকেন না। তারা নিজের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীকে আটকে রাখতে চান। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।  এ নিয়ে আলেম শিক্ষাবিদ ও বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম


কী বলছেন শিক্ষাবিদেরা?

‘টিসি(ছাড়পত্র)র মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সহজেই যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়’

রাজধানীর দারুর রাশাদ মাদরাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকত আলী বলেছেন, মাদারাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় টিসি বা ছাড়পত্রের নিয়মের সংযোজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থা না থাকার কারণে শিক্ষাঙ্গনে অহরহ নৈরাজ্য চলছে।

তিনি বলেছেন, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক ঘাটতি দেখা যায়। তিনি বলেন, এক সময় এটা কল্পনাও করা যেত না যে শিক্ষার্থীরা মিথ্যা কথা বলবে, অনৈতিকভাবে অন্য মাদরাসায় গিয়ে ভর্তি হবে। কিন্ত এখন এটা বাস্তবতা, তাই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই নিয়ম-কানুন তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেছেন, আমরা যখন গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় পড়েছি তথন গওহরডাঙ্গা বোর্ডে এই নিয়ম ছিল; শিক্ষার্থীরা মাদরাসা পরিবর্তন করতে চাইলে তাদের আগের মাদরাসার ছাড়পত্র দেখাতে হত। এখন এই নিয়ম আছে কিনা জানা নেই। তবে এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয় সহজেই।

‘টিসি(ছাড়পত্র)র নিয়ম থাকলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে’

রাজধানীর বছিলায় অবস্থিত জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়ার শিক্ষা সচিব মুফতি আশরাফুজ্জামান বলেছেন, ‘এমন ব্যবস্থা না থাকা আমাদের জন্য অনেক বড় দুর্বলতা বলা যেতে পারে’।

‘এ কারণে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদরাসা পরিবর্তনের মানসিকতা দেখা যায়। অনেকে বছরের শেষ পরীক্ষা না দিয়েই নতুন শিক্ষাবর্ষে অন্য কোথাও গিয়ে ভর্তি হয়। এর ক্ষতির প্রভাব তো তার পুরো শিক্ষা জীবনে পড়ছে কিন্তু সে বুঝছে না। তাই ছাড়পত্রের নিয়ম থাকলে আর এমন হবে না’।

তিনি আরো বলেন, কোন ছাত্র যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে চায় এবং বছর শেষে মানসিকভাবে বার্ষিক পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষা কেন্দ্রিক পড়াশোনার মাধ্যমে তার যে শিক্ষাগত উন্নতি হওয়ার কথা ছিল সেটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।

‘আমি মনে করি গোটা শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনাটা অনেকটাই বিফল হয়ে পড়ে এতে করে। অতএব বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোনভাবেই যেন পরবর্তী জামাতে ভর্তি হতে না পারে তার জন্য টিসি এর পদ্ধতি অত্যন্ত জরুরী’।

তিনি বলেন, এমন নিয়ম না থাকার কারণে ছাত্র কম এমন মাদরাসাগুলো কোন ধরনের বাছ-বিচার ছাড়াই ছাত্র ভর্তি নিচ্ছে। এটা আসলে আপত্তিকর।

‘মোহাম্মদপুরের আঞ্চলিক মাদরাসাগুলো নিয়ে ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া নামে একটি বোর্ড সেখানে এমন নিয়ম রয়েছে, কোন শিক্ষার্থী এক মাদরাসায় ভর্তির অযোগ্য ঘোষিত হলে তাকে এই বোর্ডের মাদরাসাগুলোতে আর ভর্তি নেওয়া হয় না’।

‘এটা নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসতে পারে। তাহলে আস্তে আস্তে সব মাদরাসা এ নিয়ম অনুসরণ করবে এতে করে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে’ বলে মন্তব্য মুফতি আশরাফুজ্জামানের।

‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুসৃঙ্খল রাখতে এ নিয়ম অবশ্যই চালু হওয়া উচিত’

কওমি মাদারাসাগুলোতে আলোচনার বাইরে থেকে যাওয়া এ নিয়ম অবশ্যই চালু হওয়া উচিত বেলে মনে করেন রাজধানীর জামিয়া কারিমিয়া রামপুরার শিক্ষা সচিব মুফতী হেমায়েতুল্লাহ। 

তিনি বলেছেন, এ নিয়ম না থাকার কারণে অনেক সময় আরেক কোন প্রতিষ্ঠানের দাগি কোন শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজেই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রতিষ্ঠানের পবিবেশও নষ্ট করে তুলছে সে। তাই এমন নিয়ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেন তিনি।

শিক্ষা বোর্ডের ভাবনা কি এ বিষয়ে?

‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে বিষয়গুলোর সহজ সমাধান সম্ভব’

এ নিয়ম চালু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী বলেছেন, এতে উভয় সংকটের সম্ভবনা রয়েছে। যেমন শিক্ষার্থীরা এতে করে সহজেই আর  প্রতিষ্ঠান পাল্টাতে পারবে না।

‘অপর দিকে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের মানসিকতা এমন হয়ে থাকে যে শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও ভর্তি হতে দেয় না তখন তারা ছাড়পত্র দিবে না। এতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়বে’।

তিনি বলেন, ‘অনেক মাদরাসা তো এমনও রয়েছে যে তারা শিক্ষার্থীদের থেকে শপথ গ্রহণ করায় যেন তারা মাদরাসা পরিবর্তন না করে। তাই বিষয়টি কিছুটা জৈটিল বলে মতামত দিয়েছেন তিনি’।

‘এই জটিলতা থেকে উত্তরণে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আন্তরিক হলে বিষয়গুলোর সহজ সমাধা সম্ভব’।

‘এ নিয়ে বোর্ডের মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কিভাবে বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করা যায় এ নিয়ে এখনো চিন্তা-ভাবনা চলছে’- মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী।

‘টিসি(ছাড়পত্রে) ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম পূর্ণতাই পায় না’

সিলেট আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর বলেছেন টিসি বা ছাড়পত্রের নিয়ম চালু হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মে পূর্ণতাই পায় না।

তিনি বলেন, ‘এই নিয়ম না থাকার সুবাদে বড় বড় কিছু মাদরাসা অবাধে ছাত্র ভর্তি নিচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই এমন মাদরাসাগুলোও ধরা-বাধা ছাড়াই ছাত্র ভর্তি করছে। তাই এই নিয়ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে বোর্ডের মিটিং- এ একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে’।

আস্তে আস্তে এ নিয়ম বাস্তবতায় রূপ নিবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাওলালা আব্দুল বছীর ।

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ