ড. মুফতি হুমায়ুন কবির।।
সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়
প্রয়োজনে মসজিদের টাকা সুদী ব্যাংকে রাখা বৈধ। প্রয়োজন বলতে মসজিদের জেলায় কোনো ইসলামি ব্যাংক না থাকা বা কোনো সরকার বা দাতা সুদী ব্যাংকের একাউন্ট ব্যতীত কোনো অনুদান না দেওয়া ইত্যাদি।
বিনা প্রয়োজনে মসজিদের টাকা কোনো সুদী ব্যাংকে রাখা বৈধ নয়। যেখানে ইসলামী ব্যাংক পাওয়া যাবে না তাতে সুদী ব্যাংকে টাকা রাখতে পারবে। রাখলেও চলতি হিসাবে রাখবে; যাতে সুদ না নেওয়া হয়। তবে সেভিংস হিসাবে রাখলে এর সুদ না নেওয়ার চেয়ে নেওয়া উত্তম। নিয়ে তা সুদের খাতে খরচ করে দিবে। তথা গরীব, মিসকিন ও সমাজকল্যাণে খরচ করে দিবে।
খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী লিখেন, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের ব্যাপারে বিধান হলো তা কোনো ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করতে পারবে না ও পুণ্যের নিয়তে সদকা করতে পারবে না। তেমনি মসজিদের কোনো প্রয়োজনে সেই টাকা খরচ করতে পারবে না। বরং তা খরচ করতে হবে হারাম থেকে মুক্তির নিয়তে দুটি খাতে: এক. কোনো গরীব যে জাকাত খেতে পারে তাকে হারাম থেকে মুক্তির নিয়তে দিয়ে দেওয়া।
দুই. কোনো সমাজকল্যাণ তথা, রাস্তাঘাট মেরামত করা, পুল নির্মাণ করা ইত্যদি। তেমনি সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে ধার্যকৃত কর আদায় কর ও ঋণের সুদ আদায়ে খরচ করা যাবে। যে সকল কর ন্যায় ভিত্তিক আদায় করা হয় তাতে খরচ করা যাবে না। (খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী, জদিদ ফিকহি মাসায়িল, খ. ১, পৃ. ২৮১)।
খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী আরো লিখেন, সুদী ব্যাংকের মুনাফা তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া তাদেরকে সুদী কাজে সাহায্য করার নামান্তর। কেননা, তখন তারা এই টাকা কোনো কূফরী কাজেও ব্যবহার করতে পারে। তাই তা নিয়ে ফেলা জরুরী। তা নিয়ে সমাজ কল্যাণে বা ফকিরদের মাঝে সদকা করে দেওয়া জরুরী। (খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী, জদিদ ফিকহি মাসায়িল, খ. ৪, পৃ. ৫৪)।
আল্লামা তুয়াইজরী বলেন, মুসলিমদের উচিত ইসলামি ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা। নিরূপায় প্রয়োজনে সুদী ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবে। তবে এর সুদ গ্রহণ করা বৈধ হবে না। যদি কোনো কারণে সুদ এসে যায় তখন তা হারাম থেকে মুক্তির নিয়তে কল্যাণময় কাজে খরচ করে ফেলবে। যেমন, গরিব, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ও রাস্তা ঘাট মেরামত ইত্যাদি। (তুয়াইজরী, মুখতাচারুল ফিকহিল ইসলামি, পৃ. ৫১৯)।
মসজিদের টাকা পোস্ট অফিস ও সুদী ব্যাংকে এফডিআর করলে তা হারাম। কেননা, তারা সুদ ভিত্তিক ঋণ প্রদানের ইনকাম থেকে মুনাফা দিবে। আর তারা সুদভিত্তিক ডেপোজিট গ্রহণ করে। আর যে কোনো ইসলামি ব্যাংকে এফডিআর করা বৈধ।
কেননা, তারা মুরাবাহার মাধ্যমে মুনাফা করে গ্রাহককে মুনাফা প্রদান করে। তারা মুদারাবা ভিত্তিক ডেপোজিট গ্রহণ করে। তাদের প্রধান বিনিয়োগনীতি হলো কোনো পণ্য নিজেরা ক্রয় করে গ্রাহককে কিস্তিতে মুনাফার মাধ্যমে বিক্রি করে। যাকে বাইয়ুত তাকসীত মুরাবাহা বিল আজল বলে। তবে তাদের সকল মুরাবাহা শতভাগ শরীয়া ভিত্তিক নয়; অনেক সময় গ্রাহক ভুয়া ভাউচার পেশ করে লেনদেন সম্পন্ন করে যা ব্যাংক কর্মকর্তা খতিয়ে দেখে না যা কাগজে মুনাফা হলেও বাস্তবে সুদ।
আর ইসলামি ব্যাংকসমূহে বিশ্বব্যাংক বা বিদেশী সুইফট একাউন্ট বা জরিমানা বা শরীয়াবিরোধী লেনদেন দ্বারা যে সকল সুদ অর্জিত হয় তা তারা গ্রাহকদের বণ্টন করে না। তা তারা সমাজ কল্যাণমূলক কাজ তথা বৃত্তি, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও বন্যাদূর্গত এলাকা ইত্যাদিতে খরচ করে ফেলে। মূল বণ্টিত মুনাফাতে কিছু ভাউচারের ত্রুটি থাকায় উক্ত মুনাফা থেকে ব্যক্তি মালিকের জন্য কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ মুনাফা গরীব ও সমাজ কল্যাণে খরচ করা উচিত। যাতে সুদের সন্দেহ মুক্ত থাকা যায়।
সারকথা হলো, মসজিদের টাকা যে কোনো ইসলামী ব্যাংকে রাখা উচিত। তা থেকে প্রাপ্ত মুনাফা মসজিদে খরচ করতে বাধা নেই। মসজিদের জন্য সুদী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা অনুচিত। কোনো কারণে খুললেও তা চলতি হিসাবে রাখা উচিত। যদি সেভিংস একাউন্টে রাখে তখন তাতে প্রাপ্ত সুদ না নেওয়ার চেয়ে নেওয়া উত্তম। না নিলে তারা তা খেয়ে ফেলবে।
তা নিয়ে জাকাতের যোগ্য ব্যক্তিকে বা রাস্তাঘাট মেরামতের কাজে হারাম থেকে মুক্তির নিয়তে ব্যবহার করে দিবে। তেমনি জেনে শুনে সুদের দান গ্রহণ করা উচিত নয়। যদি কারো দান সম্পর্কে নিশ্চিত সে সুদের ইনকাম থেকেই দান করেছে তখনও তা ফকির বা সমাজকল্যাণে খরচ করা উচিত। তেমনি মসজিদ নির্মাণে সুদের টাকা গ্রহণ করা যাবে না। যদি করে ফেলে ভবিষ্যতে মসজিদের ইনকাম থেকে সেই পরিমাণ টাকা সদকা করে দিতে হবে।
-এটি