মুফতি আলাউদ্দিন আল আজাদ।।
রমজান মাস মোবারক মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের অতি নিকটবর্তী করে নিন। তাদের গুনাহ খাতা মাফ করে দেন, একটা আমলের প্রতিদান দ্বিগুন করে দেন।
পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। রমজান মাস পাওয়ার পরেও যারা নিজেদের গুনা খাতা মাফ করতে পারলো না তারা দুর্ভাগ্য হতভাগা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রমজান মাসের প্রতিদিন, প্রতিরাতে প্রতি সময়ে বান্দার দোয়া কবুল করে নেওয়া হয়। হযরত সালমান ফারসী রা. বলেন, একবার নবী করীম সা. আমাদেরকে শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দিলেন। এবং বললেন হে মানব মন্ডলী, তোমাদের প্রতি বিস্তার করেছে একটি মহান মাস। মোবারক মাস এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ রমজানের রোজা সমূহকে করেছেন তোমাদের উপর ফরজ।
রমজানের রাতে নামাজ পড়া কে করেছেন তোমাদের জন্য নফল, যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হল যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে ওই ব্যক্তির সমান হল যে অন্য মাসে ৭০ টি ফরজ আদায় করল।
রমজান সবরের মাস। আর সবরের সওয়াব হল বেহেশ্ত। রমজান সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা শে মাস যাতে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যে ব্যাক্তি এ মাসে কোন রোজাদার কে ইফতার করাবে,এটা তার জন্য তার গোনাহ সমূহের ক্ষমা সরুপ হবে। এবং দোযখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান, অথচ রোজাদারের সওয়াব কম হবে না। সাহাবীগণ বললেন আমরা বললাম ইয়া রাসুল আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির এমন সামর্থ্য রাখে না।
যা দিয়ে রোযাদারকে ইফতার করাতে পারে, নবী করীম সা. বলেন। আল্লাহ পাক এ সওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে তৃপ্তির সাথে খাওয়ায় আল্লাহপাক তাকে আমার হাউজে কাউসার হতে পানি পান করাবেন।
যার পর পুনারায় সে আর তৃষ্ণার্ত হবেনা, জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত। রমজান মাসের প্রথমদিকে রহমত, মধ্যম দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিকে হচ্ছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। আর যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের দাস-দাসীদের শ্রমিক-কর্মচারীর প্রতি কার্যভার লাঘব করে দিবে আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দিবেন। এবং তাকে দোযখ হতে মুক্তি দান করবেন। মেশকাতঃ-১৮৬৮।
রোজা রাখলে পূর্বের সগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়: হযরত আবু হোরায়রা রা. বলেন নবী করীম সা. বলেছেন যে ঈমানের সাথে সোয়াবের নিয়তে রমজানের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে। এবং ঈমানের সাথে সোয়াবের নিয়তে রমজানের রাত ইবাদাতে কাটাবে। তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে। আর যে ঈমানের সাথে সয়াবের নিয়তে কদরের রাত ইবাদতে কাটাবে। তার পূর্বকৃত গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে। মেশকাত,বুখারী,মুসলিম।
রোজাদারের মর্যাদা:
হযরত সাহাল ইবনে সাদ রা. বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন বেহেশতের আটটি দরজা আছে। তার মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান রোজাদারেরা ব্যতীত ওই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,রাসুল সা. ঘোষণা করেছেন,যে লোক রমজান মাসে রোজা রাখবে ঈমান অবস্থায় ও পণ্য মনে করে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন রোজা ও কোরআন রোজাদার বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে হে আল্লাহ আমি এই লোকটির রোজার দিন গুলোতে খানাপিনা যৌনপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছি।
অতএব তুমি এর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো। আর কোরান বলবে হে আল্লাহ আমি তাকে রাতের বেলা নিদ্রামগ্ন হতে বাধা দান করেছি,অতএব তুমি এর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো। অতঃপর এ দুটি জিনিসের শাফায়াত কবুল করা হবে। বাইহাকী, আহমদ, তাবরানী, হাকেম।
আসুন আমরা এ রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য বেশি বেশি আমল করি। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। আল্লাহর ভয়ে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক: খতিব কোনাবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গাজীপুর, ঢাকা।
-এটি