মুফতি এনায়েত কবীর
চলছে ক্ষমার দশক। ফুরিয়ে যাচ্ছে গুনাহমুক্ত স্বচ্ছ জীবন লাভের অনন্য সুযোগ। অতীতে ক্ষমালাভের অনেক দশকের সাক্ষাৎ মিলেছে। কিন্তু ক্ষমার গৌরব কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি? ভবিষ্যতে কি এই দশকের সাক্ষাৎ পাবো? জানা নাই। তবে অনেকেই পাবেন না সেটা নিশ্চিত। অথচ ক্ষমা ছাড়া ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকারের।
সীমাহীন যন্ত্রণা এবং কষ্টের। তাই আলোকিত এবং সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে আসতে হবে ক্ষমার পথে। গ্রহণ করতে হবে মাগফিরাতের সৌরভ। মহান দয়ালু রব সেই ক্ষমার আহ্বান করছেন আমাদের। কোরআনে পাকের এরশাদ হয়েছে, তারা কেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসে না এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না। অথচ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। সূরা মায়েদা:৭৪।
কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর গুনাহের মাধ্যমে অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু। সুরা যুমার: ৫৩ গুনাহের ভারে আপনার জীবনটা নুয়ে পড়েছে?
পাপের কালিমায় হতাশা চেপে ধরেছে? আপনার পাপের পরিধি কি আকাশকেও ছুঁয়ে গেছে? যদি এমনটাই হয় তবু ক্ষমার দরজা বন্ধ নয়। আল্লাহর অবারিত রহমত আপনাকে ক্ষমার পথে আহবান করে। নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহর কসম। তোমাদের পাপে যদি আসমান জমিন পূর্ণ হয়ে যায়, এরপর তোমরা আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠ ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। মুসনাদে আহমদ: ৩/২৩৮
আল্লাহ ক্ষমাশীল। ক্ষমা প্রত্যাশীদের তিনি অনেক ভালোবাসে। ক্ষমা প্রত্যাশী বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা কেমন? এর সুন্দর একটি চিত্র পাওয়া যাবে সহিহ বুখারি হাদিসে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবীজি ইরশাদ করেন, বনী ইসরাঈলের এমন এক ব্যক্তি ছিল যে, নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল।
অতঃপর বের হয়ে একজন ধর্মগুরুকে জিজ্ঞেস করল, আমার তওবা কবুল হবার আশা আছে কি? ধর্মগুরু বলল, না। তখন সে তাকেও হত্যা করল। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ধর্মগুরু তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও।
সে রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বুক দ্বারা গন্তব্যের স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতারা তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ্ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও। এবং পিছনে ফেলে আসা স্থানকে (যেখানে হত্যাকান্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন- তোমারা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই তাকে ক্ষমা করা হল। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭০।
কোন মা-বাবা কি তার সন্তানের কষ্ট সহজে সইতে পারে? সন্তানের দুঃখ-কষ্টে কি মা-বাবা কখনো উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন? না, এমনটা কখনোই হয় না। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে মা-বাবার চাইতেও বেশি ভালোবাসেন। তাই তিনি চান না তার বান্দা গুনাহের কারণে শাস্তি পাক। কষ্টের মুখে পড়ুক। তাই তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
নবীজি বলেন, আল্লাহ তার রহমতকে একশ’ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ পাঠিয়েছেন। ঐ এক ভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্ট জগত পরস্পরের প্রতি দয়া করে। সহি বুখারী হাদিস নং- ৬০০০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৮৬৫
-এটি