আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মুমিনের মন থাকে কোমল ও উদার। অন্যের কষ্টে নিজে কষ্ট পায়। অন্যের দুখে হয় দুঃখিত। তাই অপরের কষ্ট লাঘব করতে সে ছুটে যায় নিজ দায়িত্বে।
এই দায়িত্ব পালন করাকে সে নিজের অনুগ্রহ নয় বরং সৌভাগ্যের বিষয় মনে করে। কেন সৌভাগ্য মনে করে? কারণ একজন মুমিন বিশ্বাস করে, অন্যের কষ্ট লাঘব করলে কঠিন কেয়ামতের দিবসে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিপদসমূহ দূর করে দিবেন।
কেয়ামতের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া একজন মানুষের জন্য সৌভাগ্যের ছাড়া আর কি হতে পারে? এক হাদীসে নবীজি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কষ্ট লাঘব করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার বিপদসমূহ দূর করে দিবেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৮৯৩।
এ পৃথিবীতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আর এসব কষ্টের অন্যতম একটি কারণ হলো অর্থনৈতিক দুর্দশা। অর্থনৈতিক এই কষ্ট লাঘব করার জন্য ইসলাম যাকাত ও দান খায়রাতের বিধান দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দাতার জন্য দানগ্রহীতাকে অনুগ্রহের পাত্র বা তাচ্ছিল্য করা অন্যায়। কেননা দাতা মূলত দান খায়রাত বা যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে হকদারকে তার প্রাপ্য পৌঁছে দেয় মাত্র। কারণ একজন মুমিনের প্রতি আল্লাহর এ আদেশ হলো- واتوهم من مال الله الذي اتاكم এবং আল্লাহ যে সম্পদ তোমাদেরকে দিয়েছেন সেখান থেকে তাদেরকে দাও। সূরা নূর -৩৩
একজন মুমিন সম্পদের প্রকৃত মালিক নিজেকে মনে করে না। বরং বিশ্বাস করে যে, আমি আল্লাহর দেওয়া মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে উপার্জন করেছি মাত্র। আর এই মাধ্যম অন্যদেরকেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবাই সম্পদশালী হতে পারছে না।
তাই চেষ্টা সাধনার পর সম্পদ লাভ হওয়াটাও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। একজন মুমিন এও বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তাআলা তার সম্পদে আমাকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। সুতরাং সম্পদ তার হুকুম মতো খরচ করতে হবে। আল-কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, এবং তোমরা সেই সম্পদ থেকে দান করো যেই সম্পদে তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানানো হয়েছে। সূরা হাদীদ- ৭।
তাই দাতাদের এমন মানসিকতা হওয়া উচিত নয় যে আমার দান গ্রহণ করে সে ধন্য হয়েছে বরং এমন মানসিকতা হওয়া উচিত যে, গ্রহীতা আমার দান গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছে। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তার উছিলায় আমি একটি ইবাদত করতে পেরেছি।
মসজিদে ফরজ নামাজ আদায় করা হয় বলে মসজিদ সম্মানিত। সুতরাং যে আমার দানের টাকা গ্রহন করল সেও আমাকে নেকের সুযোগ করে দিল বলে সে আমার কাছে সম্মানিত। দান খায়রাতের গুরুত্ব প্রসঙ্গে এক হাদিসে নবীজি এরশাদ করেন, দান-খয়রাত দ্বারা সম্পদ কমে না এবং ক্ষমার কারণে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং -২৫৮৮।
অপর হাদিসে নবীজি ইরশাদ করেন, একটি খেজুরের অর্ধেক অংশ দ্বারা হলেও জাহান্নাম থেকে মুক্তির চেষ্টা করো। সহিহ বুখারী 2/968
আর দান-খয়রাত কাদেরকে করা উত্তম? আল্লাহ তা'আলা বলেন, অন্যের কাছে হাত না পাতার কারণে যাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করা হয়। সূরা বাকারা- ২৭৪।
পবিত্র রমজান মাসে নবীজি অবারিত বাতাসের চাইতেও বেশী দান খায়রাত করতেন। আসুন তার উম্মত হিসেবে আমরাও সেই আমলে সচেষ্ট হই।
-এটি