দিদারুল ইসলাম।।
মহিমান্বিত রমজান মাস রহমত, বরকত আর গুনাহ মুক্তির মাস। বৃষ্টির দিনে যেমন প্রতি ইঞ্চি ভূমি সিক্ত হয় স্নিগ্ধ জলের আবেশে ঠিক সেভাবে এ মাসে প্রতিটি মুমিনের হৃদয় বিগলিত হয় প্রভুর ভালোবাসায়।
মুমিন মাত্রই খুঁজে ফেরে ইসলামের পবিত্র আলিঙ্গন, আল্লাহর ঘর মসজিদের পূত-বন্ধন। হৃদয়াঙ্গণে জেগে ওঠে মুহাম্মদী আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ার অনুপম চেতনা। মন চায় ইসলামের সোনালী রঙে নিজেকে আরেকটু রাঙিয়ে তুলতে৷ স্বীয় আমলের খাতা ঘষে মেজে ঝকঝকে করার পরম আগ্রহে হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। প্রবৃত্তির অসৎ হাতছানি আর নফসে আম্মারার রাহুগ্রাস থেকে মুমিন ছিটকে সরে আসে ঈমানের অদম্য স্পৃহায়।
পবিত্র রমজান মাস প্রভুর দেয়া এক অপার দয়া, অসীম অনুকম্পা। প্রিয় সৃষ্টিকে কাছে টানার দ্বৈত আহ্বান। প্রভু-সান্নিধ্য অর্জনের সহজ মাধ্যম। এ মাসকে ঘিরে মুমিনের হৃদয়ে থাকে কতো আয়োজন। রাতের শেষ প্রহরে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে সাহরি গ্রহণের প্রীতিভরা পবিত্র আহবান। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ কানে আসতেই ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে লাইট-প্রদীপ। বউ-ঝিরা মহা সমারোহে সাহরির আয়োজন করে৷ নবিজীর শাশ্বত সুন্নাহ পালনে সকলেই বসে যায় সাহরির দস্তরখানে।
আজানের সাথে সাথে মুমিনের দল ছুটে চলে মহান রবের মোলাকাতে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদগুলো প্রভুর সাক্ষাতপ্রার্থীদের দ্বারা কানায় কানায় ভরে ওঠে।
বিকেল গড়াতেই শহর-গ্রাম পরিণত হয় এক অপার্থিব স্বপ্নপুরীতে। জান্নাতি পরিবেশের পবিত্র আবেশে চারদিক স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। মাথায় মাথায় শুভ্র টুপি, হাতে হাতে তসবিহ, চারদিকে কোরআনের সুমধুর তিলাওয়াত।
মসজিদে মসজিদে উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন। দোকানে দোকানে হরেকরকম ইফাতারের চোখ ধাঁধাঁনো মেলা। ছোলা-পেঁয়াজো, আর আলু-বেগুনি চপের বিশাল সমারোহ রমজান-কেন্দ্রীক মুমিনের উচ্ছল্যের সাক্ষ্য বহন করে।
এ মাসে হৃদয়ে নামে দান-সাদকার প্রবল আগ্রহের ঢল। উদার হস্তে মানুষ দান করে নিজের জন্য বা স্বজনদের জন্য। মন-মানসিকতায় ছড়িয়ে পড়ে উদারতার সুবাস। বিতণ্ডায় উদ্যত লোকটি দমে যায় রমজানের সম্মানে।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিলের মাসে, হৃদয়কে শীতল করতে ঘরে ঘরে শুরু হয় পবিত্র কোরআনের সুমধুর তিলাওয়াত। ছোটো-বড়ো, যুবক-বৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা সকলেই ব্রতি হয় কোরআনের সান্নিধ্য পেতে। তারাবির সালাতে হাফেজ সাহেবদের হৃদয়কাড়া তিলাওয়াত যোগায় ভালোলাগার নতুন মাত্রা।
শুধু পৃথিবীতেই নয়, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে আসমানেও শুরু হয় নানা সমারোহ। বান্দার হৃদয়কে কলুষমুক্ত করতে রমজানের সূচনাতেই আবদ্ধ করা হয় বিতাড়িত শয়তানকে।
বন্ধ করে দেওয়া হয় উত্তপ্ত দোযখের লেলিহান দ্বার। খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের সুসজ্জিত কপাট। পৃথীবিবাসীদের জন্য বিছিয়ে দেওয়া হয় রহমতের আলোয়ান। সাময়িক নিষ্কৃতির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে কবরের কবরে। রমজানজুড়ে এ পবিত্র আবেশে জড়িয়ে থাকে মুসলিম সমাজ। পরিবেশের দ্যোতনায় বেজে ওঠে খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
লেখক: শিক্ষার্থী, তাকমিল জামাত, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া, মোহাম্মদপুর ঢাকা।
-এটি