মুফতি এনায়েত কবির।। কোন জিনিস থেকে লাভবান এবং উপকৃত হওয়ার জন্য এর সঠিক সদ্ব্যবহার জরুরি। না হয় উপকারী ও কল্যাণকর জিনিসও বিপদ ডেকে আনে। আগুন মানুষের অনেক কল্যাণের কাজে লাগে। খাবার দাবার রান্নাসহ আরো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও উপকারী কাজে তা ব্যবহার হয়।
কিন্তু আগুনের সঠিক সদ্ব্যবহার না করা হলে তা ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আগুন সে ব্যবহারকারীর ঘরবাড়িসহ ব্যক্তিকেও পর্যন্ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে পারে।
ঠিক তেমনিভাবে কল্যাণকর মাহে রমজানকে যদি উপযুক্ত মূল্যায়ন এবং সঠিক সদ্ব্যবহার না করা হয় তখন তা ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তাই কোন কারণ ছাড় অলসতাবসত রমজানের রোজা রোজা না রাখলে সারা জীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত।
নবিজি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোযাও ভঙ্গ করবে সারা জীবন রোজা রাখলেও তা রমজানের রোজার বদলা হবে না। সহিহ বুখারি, ১ম খণ্ড, হাদীস-১৯৩৪।
আর রোজা ভঙ্গের শাস্তির কথা হাদিসে পাকে পরিষ্কার বর্ণিত আছে। হজরত আবু উমামাহ বাহেলি রা থেকে বর্ণিত। নবীজী বলেন, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমার কাছে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তারা আমার উভয় বাহুর উপর অংশে ধরে এক দুর্গম পাহাড়ের পাশে নিয়ে বললেন, আপনি এ পাহাড়ে আরোহন করুন।
আমি বললাম, এ পাহাড়ে আমি আরোহন করতে পারবো না। তারা বলল, আপনার আরোহন আমরা সহজ করে দেব। এরপর আমি এ পাহাড়ে চড়লাম। যখন পাহাড়ের চুড়ায় আরোহন করলাম, তখন বিকট আর্তনাদ শুনতে পেলাম।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই আর্তনাদ কাদের? তারা বললেন, এ হলো জাহান্নামীদের আর্তনাদ। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে যায় যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, সেখান থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বললেন, এরা এমন রোজাদার যারা অকারণে রমজান মাসের রোজা শেষ না করেই ভঙ্গ করত।’ সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং : ১৫০৯। সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস : ৭৪৪৮। সুনানে নাসায়ি কুবরা, হাদিস : ৩২৮৬।
অলসতাবসত রোজা না রাখলে ঈমান যাবেনা। কিন্তু কেউ যদি রোজা ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করলে বা রোজা নিয়ে উপহাস বা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করলে ততার ঈমান চলে যাবে। যেমন কেউ বলল, বিশ্বাস করিনা রোজার ফরজ হওয়াকে বা আমি অভুক্ত থাকলে আল্লাহর কি লাভ? আমি কি গরিব যে সারাদিন না খেয়ে থাকবো? ইত্যাদি।
এমন ব্যক্তি বেইমান বলে গণ্য হবে। ফলে তাদের জানাযাও পড়া হবেনা। কোরআনে পাকের আল্লাহতায়ালা বলেন, তাদের কারও মৃত্যু হলে আপনি তার জানাযার নামায পড়াবেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না। কারন এরা আল্লাহ ও রাসুলকে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। সূরা তাওবা -৮৪। সৎকর্মশীল না হওয়ার কারণে হজরত নুহ আ এর সুপারিশও ছেলের কোন উপকারে আসেনি। সুতরাং কোন যুক্তিতে বা সাহসে আমরা রোজার মতো একটি মহৎ সৎকর্মকে এড়িয়ে চলব?
-এটি