সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মহিমান্বিত মাহে রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ।।

বছরের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ মাস রমজান।বরকত ও কল্যাণে সুসজ্জিত মাস রমজান। যে মাসে রহমত,নাজাত ও মাগফিরাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে । প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জীবনে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান হলো পুণ্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম। দীর্ঘ এক মাস রোজা, তারাবি, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করে। সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকে। হাসিল করে হৃদয় ও আত্মার পরিশুদ্ধি। তাই এই মাসকে বলা হয় মহিমান্বিত মাস।

খোশ মাহে রমজান। হিজরী সনের নবম মাস পবিত্র মাহে রমজান। এটি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহর অপার সন্তুষ্টি ও তাঁর প্রতিশ্রুত বেহেশত লাভের সওগাত। ‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে— দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে শেষ করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোজা পালনের

মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে শান্তিময় জীবনযাপন করে এবং আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সাহস অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের আরবি নাম‘রামাদ্বান’।

রমজান মাস একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এ মাসে শুধু আল্লাহর ভয়ে বান্দা পানাহার থেকে বিরত থাকে। সর্ব প্রকার ইবাদতের মধ্যে লৌকিকতার অবকাশ থাকলেও একটি ইবাদতের মধ্যে লৌকিকতার লেশমাত্র নেই। তা হলো রমজান মাসের ফরজ রোজা আর এর প্রতিদান আল্লাহ রোজাদারকে নিজ হাতে দিবেন। কেননা রমজানের যতসামান্য দিনগুলো প্রভুর কাছে অনেক প্রিয়। তাই তো স্বীয় পছন্দের মাসকে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন তিনি। বান্দাদের দিয়েছেন সিয়াম কিয়ামের মতো পুণ্যের মহান উপহার। এ মাসে লুকিয়ে রেখেছেন, শবে কদরের মহিমান্বিত রাত। তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্ধারণ করেছেন শেষ দশকের ইতেকাফ। নফল ইবাদককে দিয়েছেন ফরজের সমমর্যাদা।

আর দিয়েছেন এক আমলে সত্তর গুণ বৃদ্ধির অঙ্গীকার। কত মহিমান্বিত মাস!পুণ্য হাসিলের মাস! এ জন্যই এ মাসে দান সাদকা করা, আশেপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হক আদায় করা আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয়। অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, অন্যের হক খাওয়া, সুদ ও জুয়াসহ সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। কেননা এটি মহা সম্মানিত মাস।শুধু কি তাই— শ্রাবণের জলধারার ন্যায় অফুরন্ত নেয়ামত ঢেলে দিয়েছেন এ মাসেই। নাযিল করেছেন হেদায়েতের আলোকবার্তা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। এ সম্পর্কে আল কোরআনুল করীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে।
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

মহিমান্বিত মাস সম্পর্কে নাবী মুহাম্মাদের সা. এর ঘোষণাঃ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে—হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

এই হাদিসে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য চারটি উপহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।

এক. দুষ্ট জিন ও শয়তানদের বন্দি করা হয়, যাতে তারা মুমিন বান্দার অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিতে না পারে ফলে মুমিন বান্দা নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে

দুই. জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। যার অর্থ হলো— অকল্যাণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া আর কল্যাণের দরজা খুলে দেওয়া।

তিন. আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে—হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। এই মাস কল্যাণের মাস। বরকত ও পুণ্যের মাস। তাই কল্যাণপ্রত্যাশীরা যেন আরো আগ্রহী ও উদ্যমী হয়। তারা যেন ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং অকল্যাণের প্রার্থীরা যেন সংযমী হয়। তারা যেন পাপের মাত্রা কমিয়ে ফেলে।

চার. আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার দয়ার অনন্য নিদর্শন।

রমজানকে ঘিরে অন্যরকম হয় সবার মন। মনসিকতা হৃদয় মাঝে নেমে আসে স্নিগ্ধতা। আর্থিক প্রশান্তির পথে মুমিন বান্দারা। তার খুশিতে কবির মন গেয়ে ওঠে, “রমজান নিয়ে আমার মন,খুশিতে হাসে সারাক্ষণ"। তাই রবের দরবারে আবেদন একটাই, রমজানের এই বরকতময় আগমন থাকে যেন চির অম্লান। রমজান তোমাকে আহলান
সাহলান।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি পবিত্র রমজান মাস; মহমান্বিত মাস। যা লুফে নেওয়া প্রত্যেক মুমিনের
কর্তব্য।তাই আমরা যেন প্রকৃতপক্ষে রমজানকে কাজে লাগিয়ে পূর্বের সকল গুনাহের ক্ষমা চেয়ে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করতে পারি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের রমাদ্বান মাসের মহত্ত্ব বুঝে সঠিক ভাবে আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: কবি,গীতিকার ও প্রাবন্ধিক

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ