সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ক্রোধ: নষ্ট করে রোজার সজিবতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি এনায়েত কবীর।।

হাসি কান্না নিয়েই মানুষের জীবন। তবে হাসি ও কান্নায় সবাই সমান নয়। হাসির খোরাক পেলে সবাই এক সমান হাসেনা। কান্নার ক্ষেত্র তৈরি হলেও সবাই এক সমান কাঁদেনা। রাগের বিষয়টি প্রায় এমনি। রাগ হওয়ার মত ঘটনা ঘটলে সবাই সমান রাগ করে না। কেউ বেশি কেউ কম। হাদিসের ভাষ্যমতে, রাগী মানুষের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো ওই ব্যক্তি, যার রাগ আসে দেরিতে। কিন্তু খুব দ্রুতই তার রাগ শেষ হয়ে যায়।

আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট রাগী হলো ওই ব্যক্তি, যে অতি সহজেই রেগে যায়। সামান্য এদিক সেদিক হলেই ক্ষুব্ধতায় ফেটে পড়ে। তবে যত দ্রুত রাগ আসে অত তাড়াতাড়ি তা দূর হয় না বরং রাগের আগুন নিয়েই সে বসে থাকে। জামে তিরমিজি হাদিস নং- ২১৯১।

রমজান মাস হল শাহরুস সবর বা ধৈর্য ও সংযমের মাস। অথচ রোজা অবস্থায় অনেক ধৈর্য ও সহনশীল মানুষও সহজে রেগে যান। কারণে অকারণে অন্যের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন। বাঁধিয়ে দেন বিরাট লঙ্কাকাণ্ড।

নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করা বোকামি। এ কথা সবাই জানি। তাহলে অন্যের অপরাধের কারণে ক্রোধান্বিত হয়ে আমি কেন আমার রোজার সজিবতা নষ্ট করব? তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি করে রোজার অফুরন্ত প্রতিদানকে হুমকির মুখে ফেলবো? কেউ আমাকে ঠকালে আমি তাকে অপছন্দ করি, এড়িয়ে চলি। তাহলে যেই ক্রোধ রোজার প্রতিদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাকে ঠকিয়ে দিতে পারে তাকে কেন এড়িয়ে চলি না? তাহলে কি আমরা নিজেরাই নিজেকে ঠকাতে চাই?

রোজা রেখে ক্রোধ বা গোস্বার আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। ঝগড়া ফাসাদ তো আরো দূরের কথা। কেউ যদি বা যে আচরণ করে বা রাগান্বিত করতে চায় তবু নিজেকে সংযত রাখতে হয়। এক হাদীসে নবীজী বলেন, রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোন প্রকার শোরগোল হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি অন্য কেউ তাকে গালিগালাজ বা বাজে আচরণ করে তবে সে যেন এর প্রতি উত্তর না দিয়ে শুধু এতটুকু জানিয়ে দেয় যে আমি রোজাদার। সহিহ বুখারি- হাদিস নং- ১৯০৪

তাছাড়া রাগ হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের অংশবিশেষ। জান্নাত প্রাপ্তির এই মাসে আমি কেন রোজা রেখে জাহান্নামের আগুন বহন করব? এক হাদীসে নবীজী বলেন, রাগ হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের একটি ছেকা‌। কেউ রাগান্বিত হলে তুমি দেখতে পাবে যে, তার চোখ লাল বর্ণ হয়ে যায়, চেহারা ধূসর বর্ণ ধারণ করে এবং ঘাড়ের রগগুলো ফুলে যায়। কানযুল উম্মাল - ৭৭১৭

চুলার আগুনের চাইতে রাগের আগুন বেশি ভয়াবহ এবং ক্ষতিকর। কারণ চুলার আগুন এক মুহূর্তে দেশ থেকে মহাদেশ জ্বালাতে পারে না। কিন্তু মানুষের ক্রোধের আগুন দেশ থেকে মহাদেশকে মুহূর্তেই জ্বালিয়ে দিতে পারে। একজন ক্রোধান্বিত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র প্রধানের হালকা অঙ্গুল ইশারাতেই জলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে লাখো আদম সন্তান। নষ্ট হতে পারে এই সুন্দর পৃথিবীর সজীবতা।

এই ক্রোধ একজন মুসলমানের সবচেয়ে দামি সম্পদ ঈমানকেও নষ্ট করে দিতে পারে। হাদিসে পাকে নবীজি ইরশাদ করেন, রাগ ঈমানকে নষ্ট করে দেয়। বাইহাকী শরীফ- ১২১৭

ক্রোধের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য নবীজির একটি বাণী সব সময় মনে রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন, যে ব্যক্তি রাগান্বিত অবস্থায় আমাকে স্মরণ করবে আমিও কেয়ামতের ময়দানে আমার রাগের সময় তাকে স্মরণ করব এবং ধ্বংসশীল মানুষের মাঝে তাকে শামিল করবো না। কানযুল উম্মাল - ৭৭১৮।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ