আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব নবরাত্রির নয় দিনে সব মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে নগর কর্তৃপক্ষের এক নির্দেশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিবিসি বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসি জানায়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশের পর গত দুদিন ধরে দিল্লির অনেক মাংসের দোকান বন্ধ রয়েছে।
ওই নির্দেশের ব্যাপারে দিল্লির দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়ররা বলেছেন, নবরাত্রির সময় বেশিরভাগ হিন্দু মাছ-মাংস অর্থাৎ আমিষ খান না এবং খোলা জায়গায় মাংস কাটা দেখতে তারা পছন্দ করেন না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
দিল্লির মসদনে বর্তমানে রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি । তারা মাংসের দোকান বন্ধ রাখা নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে জানা গেছে।
যে দুই মেয়র ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছেন তারা ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির রাজনীতিতে জড়িত।
এদিকে, মাংসের দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেটিজেনদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভারতের বহুত্ববাদ লঙ্ঘিত হয়েছে।
এই নির্দেশের কড়া সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে বলছেন, কারো মাংস না খাওয়ার যুক্তিতে অন্যের মাংস খাওয়ার অধিকার বা অন্যের জীবিকার অধিকার লঙ্ঘন করা যায় না।
ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার সদস্য এবং পশ্চিম বাংলার ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী মহুয়া মৈত্র তার এক টুইটে লিখেছেন, ভারতের সংবিধান আমার খুশিমতো যে কোনো সময়ে খাওয়ার অধিকার দিয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এক টুইটে প্রশ্ন রেখেছেন - তাহলে কি রোজার মাসে মুসলিম প্রধান এই রাজ্যে সমস্ত অমুসলিম এবং পর্যটকদের জনসমক্ষে খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া যাবে?
অনেকে আবার প্রশ্ন করছেন অনেক হিন্দু যখন নবরাত্রিতে পেঁয়াজ রসুনও ছোঁননা, তাহলে সেগুলোর বিক্রি কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। শুধু মাংসের বেলায় এই সিদ্ধান্ত কেন?
টুইটারে একজন লিখেছেন, হোটেলে গিয়ে মাংস খাওয়া চলবে। অনলাইনে বিক্রেতারা মাংস সরবরাহ করতে থাকবেন। কিন্তু গরীব মুসলিমদের মাংসের দোকান খোলা রাখলেই শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।
দক্ষিণ দিল্লি পৌর কর্পোরেশনের মেয়র মুকেশ সুরায়ান চৌঠা এপ্রিল এক চিঠিতে বলেন, ভক্তরা যখন পূজা দিতে যাওয়ার সময় মাংসের দোকানের পাশ দিয়ে যান, সেসব দোকান থেকে আসা গন্ধ যখন তাদের নাকে যায়, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাত লাগে।
এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সুরায়ান বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, নবরাত্রির সময়, দিল্লির ৯৯ শতাংশ বাড়িতে এমনকি পেঁয়াজ-রসুনও ব্যবহার করা হয় না। সুতরাং দক্ষিণ দিল্লিতে মাংসের দোকান খোলা থাকতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
পূর্ব দিল্লির মেয়র শ্যাম সুন্দর আগারওয়াল বলেন, যদি কেউ এ সময়ে মাংস বিক্রি করেন, সেই মাংস হয় পচা হবে - না হয় অবৈধভাবে জবাই করা পশুর মাংস হবে। সুতরাং আমি ১৬টি পর্যবেক্ষণ দল গঠন করে দিয়েছি যারা এ ধরনের মাংস ব্যবসায়ীর ওপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নেবে।
মাংসের দোকান বন্ধ রাখার জন্য দক্ষিণ দিল্লি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
অনেক দোকান মালিক এমন কোনো নির্দেশনা না পেলেও ভয়ে তারা বন্ধ রেখেছেন বলে দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
দক্ষিণ দিল্লিতে প্রায় দেড় হাজারের মতো নিবন্ধিত মাংসের দোকান রয়েছে।
এনটি