আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিদায়ি ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দাম ২৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি ছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য, সিরিয়াল, ভোজ্য তেল এবং চিনির দাম ১৯৬১ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। বর্তমান এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ।
বিশ্বের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক এই বৃহৎ দু'টি দেশ বিশ্বের ৩০ শতাংশ গম এবং ১৮ শতাংশ ভুট্টার যোগান দেয়। এখন এই রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববাজারে খাদ্যের দামের এই পরিস্থিতি দরিদ্র দেশগুলোকে বেশি ভোগাবে বলে আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সংস্থাটির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে সব পণ্যের দাম। যুদ্ধের ডামাডোলে জ্বালানি তেলের দর বেড়েই চলেছে। তার প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে। তাতে দরিদ্র দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে। খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দু’টি কৃষি উৎপাদনকারী দেশের কোনো পণ্য অন্য দেশে যাচ্ছে না। যুদ্ধের কারণে পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এখন দেশ দু’টির সব বন্দর বন্ধ থাকায় সবকিছুই বন্ধ। সে কারণে গমের দাম সম্প্রতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
গরিব দেশগুলোর দরিদ্র পরিবারের ওপর পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কতটা প্রভাব ফেলবে তার একটি তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করে প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তা ব্যয়ের ১৭ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্য কিনতে। আর সাব-সাহারান আফ্রিকাসহ অন্য গরিব দেশগুলোতে ভোক্তাদের ব্যয়ের ৪০ শতাংশই খাদ্যের জন্য। পূর্ব ইউরোপ, ককেশাস এবং মধ্য এশিয়াসহ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সংযোগ রয়েছে এমন দেশগুলোর জন্য আঘাত আরো বেশি হতে পারে। উচ্চ গমের দাম মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অর্থনীতির ওপর আরো বেশি প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামনের দিনগুলোতে সার সরবরাহ হ্রাস এবং জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য, খাদ্য সংগ্রহ, পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ অনেক বাড়িয়ে দেবে। তাই নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই দরিদ্রদের জন্য সামাজিকসহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ভুট্টা উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ ইথানলে যায়, নীতিনির্ধারকরা এই ব্যবহার পুনরায় মূল্যায়ন করতে পারেন। আর চীন বিশ্বব্যাপী গম এবং ভুট্টার মজুতের অর্ধেকেরও বেশি ধারণ করে। এই দেশটি কম দামে এই দুটি পণ্য সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
-এএ