।।মাওলানা জহিরুল ইসলাম হুসাইনী।।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! চেষ্টা করবেন যেন পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো যায়, যেন একটু রেস্ট নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করা যায়। পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর আপনাকে যে উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ কি না, তা প্রথমে দেখে নিন। প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়বেন।
আপনাকে কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তা দেখে নেবেন। প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে, না অতিরিক্ত প্রশ্ন আছে? অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকলে আপনার কাছে অধিক সহজ প্রশ্নগুলোতে টিক চিহ্ন দিন।
প্রশ্ন দেখার সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন, এমন কোনো প্রশ্ন আছে কি না, যার জবাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। উত্তর লেখার পূর্বে প্রত্যেক প্রশ্নের ছোট-বড় উত্তরের জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে। যেমন প্রথম প্রশ্নের আলিফের জন্য দশ মিনিট বা-এর জন্য সাত মিনিট ইত্যাদি।
বন্ধুরা! লেখা শুরু করার পূর্বে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই কিছু দুআ-দুরূদ পাঠ করে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবেন। বিশেষত ‘রব্বী যিদনী ইলমা, রব্বীশরাহলী সদরী—এই আয়াতগুলো পড়বেন এবং তিনবার আল্লাহুম্মা আল্লীমনী মা জাহিলতু ও যাককিরনী মা নাসীতু এ দুআটি পড়ে বিসমিল্লাহ বলে লেখা আরম্ভ করবেন।
পরীক্ষার খাতায় অপ্রয়োজনীয় কিছু লিখবেন না। লেখা সুপাঠ্য হওয়া দরকার। অনেক সময় ভালো ছাত্রের লেখাও পড়তে কষ্ট হয়। তাই তারা ভালো লিখেও কম নম্বর পায়। সুতরাং হাতের লেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। ভালো ফলাফলের জন্য সুন্দর হাতের লেখা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শব্দের এবং লাইনের মাঝে প্রয়োজনীয় ফাঁক রেখে স্পষ্ট করে লিখতে হবে যাতে সহজে পড়া যায়।
খুব ছোট ও হিজিবিজি করে লেখবেন না। কোন শব্দ, লাইন বা অনুচ্ছেদ কেটে দিতে হলে পরিস্কার করে কাটবেন, হিজিবিজি করে নয়। ভুল শব্দ বা বাক্যাংশের ওপর পুনরায় লিখে সংশোধন করা ঠিক নয় বরং এক্ষেত্রে উপরে বা পাশে সঠিক শব্দ বসাতে হবে।
এক কথায় খাতাটি খুলতেই যেনো পরীক্ষকের মনভরে যায় । এক নিঃশ্বাসেই যেনো খাতাটি পড়ে ফেলতে পারেন। সুন্দর লেখা ও আকষর্ণীয় উপস্থাপনার জন্য বরাদ্দকৃত চার নম্বার তখনই আশা করা যায়।
কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় হঠাৎ কোনো তথ্য মনে না এলে তার জন্য চিন্তা করতে করতে সময় অপচয় করবেন না। প্রয়োজনে কিছু জায়গা খালি রেখে লেখা চালিয়ে যাবেন, পরবর্তী সময়ে স্মরণ হলে উক্ত তথ্য যোগ করে দেবেন।
আপনি একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে সময় বরাদ্দ করবেন উক্ত সময়ের মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে না পারলে জায়গা খালি রেখে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার পর সময় রয়ে গেলে পূর্বের প্রশ্নে খালি থাকা উত্তর পূর্ণ করবেন।
কোনো প্রশ্নের উত্তর না লেখে আসবে না। না পারলেও যতোটা সম্ভব চিন্তা-ভাবনা করে নিজের পক্ষ থেকে হলেও উত্তর লেখার চেষ্টা করবেন। পূর্ণ না লিখতে পারলেও যতোটা সম্ভব লিখলে, কিছু নম্বার তো পাওয়া যাবে। লক্ষ্য রাখবেন একই প্রশ্নের মধ্যে নানা অংশ থাকে। তার কোন অংশ যেনো বাদ না যায়। প্রতিটি অংশের জন্য নির্ধারিত নম্বর রয়েছে।
সুতরাং এক অংশ যতোই সুন্দর করে লিখেন না কেন, তার নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে অতিরিক্ত নম্বর পাওয়া যাবে না। আর যদি সকল অংশের উত্তর দেওয়া হয়, তা হলে প্রত্যেক অংশের নম্বর অবশ্য লাভ করবে। তবে অবশ্য ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে লিখবেন ও লেখার ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা ও সজাগ দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করতে হবে।
নজরে সানী বা রিভিশন দেওয়া:
সুহৃদ বন্ধুরা! প্রশ্নপত্রের সকল উত্তর লেখা শেষ করে পূর্ণ খাতা রিভিশন বা নজরে সানী করা অতি প্রয়োজন। প্রথমে খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় রোল নম্বার ইত্যাদির শূন্যস্থানগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা হয়েছে কি-না? তা চেক করবেন। এরপর ধীরস্থিরভাবে দেখবেন ‘আলিফ’, ‘বা’ এবং ‘জীম’ প্রত্যেক প্রশ্নের অংশের উত্তর লেখা হয়েছে কি-না এবং প্রশ্ন নম্বর ও ‘আলিফ’, ‘বা’, ‘জীম’ ইত্যাদি যথাযথভাবে লেখা হয়েছে কি-না। এরপর পূর্ণ খাতা ভালোভাবে দেখবেন। কোথাও ভুল দৃষ্টিগোচর হলে তা ঠিক করে নেবেন।
পরীক্ষা শেষ করে চিন্তা করা উচিৎ নয়। কারণ, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এ নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে পরবর্র্তী পরীক্ষাও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য পিছনের পরীক্ষার চিন্তা না করে সামনের পরীক্ষাটা কীভাবে ভালো করা যায়, সে চিন্তা মাথায় নিয়ে নবোদ্যমে পড়ালেখা করবেন।
ঘাবড়ে যাবেন না, চিন্তামুক্ত হয়ে শান্তভাবে পরীক্ষা দেবেন। অন্যথায় প্রশ্নোত্তর জানা থাকার পরও উত্তর লিখতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, বেশী বেশী দুআ-মুনাজাতে মশগুল থাকতে হবে। অনেক সময় সবকিছু ঠিকভাবে লেখার পরও সামান্য নম্বরের জন্য তারতীবে আসে না, কিংবা নিরীক্ষণে যথাযথ নম্বর না আসার কারণে কিংবা যোগে ভুল হওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারে না। যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ছাড়া চূড়ান্ত সফলতা সম্ভব নয়।
তাই তাঁর দরবারে সবসময় দুআ-মুনাজাতে লেগে থাকতে হবে। দরস চলাকালীন সময়ে মনোযোগসহ লেখাপড়া করার সাথে সাথে একজন পরীক্ষার্থী যদি উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখে, তা হলে পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্যের আশা করা যায়। আল্লাহ তাআলা সকলের সহায় হোন, আমীন।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হানীফিয়া বাঘিবাড়ী, মনোহরদী,নরসিংদী।
-কেএল