আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইউক্রেনের ওপর সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের জেরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের বেশ কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নেয়া এই সিদ্ধান্ত শনিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।
এ কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই দুই দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের উপায়। এই দুই দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আর সরাসরি লেনদেন করতে পারবে না।
রাশিয়ার ১২টি ও বেলারুশের ২টি ব্যাংকের মধ্যে ১টি ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ লেনদেন হতো। ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি) নামে রাশিয়ার ওই ব্যাংক কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুইফট ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো একটি বার্তায় আপাতত তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকের কাছ থেকেও বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে এমন বার্তা এসেছে।
তবে এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ রাশিয়ায় যে পণ্য রপ্তানি করে, তার প্রায় ৮০ ভাগের আর্থিক লেনদেন হয় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে সরকারি প্রকল্পের হাল কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। এই প্রকল্পে ৯১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া।
এছাড়া, গত মাসে দেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে রুশ প্রতিষ্ঠান গ্লাভ কসমসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্লাভ কসমস।
বাংলাদেশে সুইফট ব্যবহারকারী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ‘রাশিয়ার সব ব্যাংক এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ছে না।
এরপরও আমাদের দুশ্চিন্তা আছে। কারণ, রাশিয়ার বছরে ৬০ কোটি ডলারের রপ্তানি আছে। এখন এসব রপ্তানির জন্য চীনের ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে। এতে খরচ ও ঝুঁকি বাড়বে।’
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়াও চাপ বাড়ছে বাণিজ্যিক ভাবেও।
সম্প্রতি অ্যাপল, জারা, এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি বৈশ্বিক কোম্পানি রাশিয়ায় বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে আছে- কোকাকোলা, পেপসি, স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ড, সুইডেনভিত্তিক আসবাব নকশা ও গৃহসজ্জা পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইকিয়া, ইলেকট্রনিকসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউস বারবেরি ও অনলাইন ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতা বুহু, ব্রিটিশ বহুজাতিক গাড়ি কোম্পানি রোলস রয়েস, অ্যাস্টন মার্টিন ল্যাগোন্ডা ও জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গাড়ি নির্মাতা জেনারেল মোটরস ও অনলাইন স্ট্রিমিং পরিষেবা কোম্পানি নেটফ্লিক্সের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এদিকে, রাশিয়া বিভিন্ন দেশে তৈরি দু শ’র বেশি পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া।
গাড়ি, রেলের বগি, কন্টেইনার, টারবাইন, টেলিকম, কৃষি পণ্য, বৈদ্যুতিক এবং প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি এতদিন বিদেশ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি করে আসছে।
-এটি