আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তীব্র শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ মানুষের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
গত ১১ দিনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২৪ জন ভর্তি হয়েছেন, এদের মধ্যে ৮ জন ভর্তি হয়েছে গত দুইদিনে। দগ্ধদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও অর্থাভাবে তাদের ঢাকায় নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ইনচার্জ সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ পলাশ জানান, শীতের সময় আগুন পোহাতে গিয়ে যারা পোড়া শরীর নিয়ে আসছেন, তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, শরীরে উল জাতীয় কাপড় পড়ে আগুনের কাছে যাওয়ায় অল্পতেই আগুন লেগে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ছে।
দগ্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে দরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত দগ্ধ হচ্ছেন। শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তারা। গত দু’দিনে কেবল পোড়া শরীর নিয়ে ৮ জন হাসপাতালে এসেছেন।
নীলফামারীর ডোমার থেকে সাহেদা ও রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে সামসুন্নাহার প্রায় পুরো শরীর পুড়ে হাসপাতালে এসেছেন। ষাটোর্ধ্ব এই দুজনের শরীর পুড়েছে ৬০ ভাগের ওপর।
বার্ন ইউনিটের ইনচার্জ জানান, এই দুই রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো বন্দোবস্ত রংপুরে না থাকায় তাদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা যাননি। ফলে সাধ্য অনুযায়ী এখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর অর্থ তাদের নেই।
কুড়িগ্রামের রৌমারীর চর থেকে তসলিমা, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেপুরের মমতাজ উদ্দিনের ১০ বছরের শিশু সালামসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন। যাদের প্রায় সবাই খড়কুটোর আগুন থেকে আবার কেউ কেউ রান্নাঘরের চুলায় আগুনের তাপ নিতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে। এদের সবার শরীরের অন্তত ৪০ ভাগ পুড়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়য়ায় ৯ দশমিক ৩ এবং রংপুরে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। হিমালয় থেকে হিমবাহ নেমে আসায় এই অঞ্চলের জেলাগুলোতে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ অনুভূতি হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ কামরুজ্জামান এই অবস্থা আরও তিন দিন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বলেন, নদ-নদীর চরাঞ্চলে ব্যাপক কুয়াশা ঝরছে। গত সপ্তাহে তিনদিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পর এই কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
-এএ