আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলাম সাংঘর্ষিক নয়, কেননা আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম ঈমানী চেতনা ও শহীদি তামান্না নিয়েই যুদ্ধ করেছিলাম’-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক।
অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, এখন দেশে চরম বৈষম্য চলছে যা অতীতের সকল ইতিহাসকে ম্লান করে দিয়েছে। এজন্য শুধু নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ইনসাফ নেই, সামাজিক মূল্যবোধ বলতে নেই।
তিনি বলেন, মানুষ এখনও স্বাধীন নয়, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার খর্ব করা হয়েছে। এটা স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ সময়ও এদেশের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার ও বাক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আবারো মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।
আজ সকাল ১০টা থেকে পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম-এর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ষক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম ও নূরুজ্জামান সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ ওয়াদুদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-আব্দুস সাত্তার সরকার, ক্যাপ্টেন মাওলানা আবুল হাশেম নেত্রকোনা, জিএম কিবরিয়া খুলনা, খালেকুজ্জামান নাটোর, আবুল হোসেন হবিগঞ্জ। একজন সংখ্যালঘু মুক্তিযোদ্ধাসহ জীবিত ও মৃত প্রায় একশত মুক্তিযোদ্ধাকে পীর সাহেব চরমোনাই সম্মাননা প্রদান করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয় দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করেছিল। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর চেতনার নামে দেশপ্রেমিক ও ইসলামপন্থিদেরকে দাবিয়ে রাখতে বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি মানুষের জান-মাল,ইজ্জত-আব্রু নিরাপত্তা এবং সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আরো একটি সংগ্রাম করার আহ্বান জানান।
মেজর জেনারেল অব. ইবরাহিম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও রণাঙ্গণের যোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। কেবলমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়াই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়, বরং মুক্তিযোদ্ধারা যে জন্য সংগ্রাম করেছিল, মানুষের মুক্তির জন্য, নাগরিক ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, তা আজো প্রতিষ্ঠা হয়নি। মানুষ এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারেনি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্ল্যাটফর্মটি ছিল জাতীয় ঐক্যের, কিন্তু ৭২’ এসে তা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলাম সাংঘর্ষিক নয়, কেননা আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম ঈমানী চেতনা ও শহীদি তামান্না নিয়েই যুদ্ধ করেছিলাম। এখন চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে মুখোমুখি দাড় করানোর চেষ্টা যারা করছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের ‘মু’ এর অর্থও জানে না। কাজেই আমি মুসলমান আগে, তারপর বাঙ্গালী।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দস্যুতামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষে যুদ্ধ হয়েছিল। ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পাওয়ার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বচ্ছ তালিকা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। ধর্মহীন জাতি গঠনের চক্রান্ত চলছে। ভোট ডাকাতির সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে।
মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলামী চেতনাকে বিনাশ করাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। মুক্তিযুদ্ধে আলেম ও ইসলামপন্থিদের অবদানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। মনে রাখতে ইসলামের ভিত্তিতেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ভোট চুরি ও ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কাজেই বর্তমানে যারা ভোট ডাকাতি করে, মানুষের উপর জুলুম করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তাদের মধ্যে পাক হানাদারদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
এনটি