আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘ দুই বছর যাবত বন্ধ আছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সর্ববৃহৎ প্রাচীন মসজিদ। শ্রীনগরের ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ করেছে বন্ধ করে দেওয়া ৬ শ বছরের পুরোনো এ স্থাপত্যশৈলী। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এ মসজিদের তালাবদ্ধ দরজা আগের অনুভূতিকে ম্লান করে দিয়েছে।
কাঠ ও ইটের তৈরি এ মসজিদে প্রতিদিন কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তেন। ৩৭৪টি খুঁটির এ মসজিদে প্রায় ৩৩ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। শহরের শতকরা ৯৬ ভাগ মুসলিম হলেও নানা কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক এ মসজিদ।
বিশেষত প্রতি শুক্রবার কাশ্মীরের মুসলিমরা এ মসজিদে এসে জুমার নামাজ পড়তে সমবেত হন। শুধু তাই নয়, যেকোনো রাজনৈতিক অধিকারের আন্দোলনেও এ মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। অনেক সময় উত্তেজনা, শঙ্কা ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই দুই বছরের অধিকাংশ সময়েই এ মসজিদ বন্ধ রাখা হয়।
এ দীর্ঘ সময় বিরতিহীনভাবে মসজিদের প্রধান ইমামকে ঘরবন্দী করে রাখা হয়। যেন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতে না পারেন। পাশাপাশি মুসল্লিদের প্রবেশে বন্ধ রাখতে মসজিদের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকে। এমনকি টিন দিয়ে চারপাশ ঘেরাও করে রাখা হয়। এমনকি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হয় মুসল্লিদের। শুধুমাত্র সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে নামাজ পড়া যায়। তবে অন্য সময়ের তুলনায় সেখানে খুবই অল্প কয়েকজন মুসল্লি নামাজা পড়তে আসেন।
যাইহোক, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাচীন এ মসজিদকে কাশ্মীরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে ভাবছে। কারণ এটি যেকোনো সংঘর্ষ ও সংঘাতের প্রধান কেন্দ্রস্থল। ফলে কাশ্মীর স্বাধীনতার প্রচেষ্টাকে নয়াদিল্লির সার্বভৌমত্বের হুমকি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
এদিকে দীর্ঘকাল বন্ধ থাকায় ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিকাংশ মুসলিমের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর ক্ষোভ। গত ৫০ বছর যাবত এ মসজিদে নামাজ পড়েছেন বাশির আহমদ (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আমার অন্তরে অতি সূক্ষ্ম কিছু অনুভব করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসের পক্ষ থেকে বন্ধ রাখার কারণ সম্পর্কে কয়েক বার জানতে চাইলেও কিছুই জানায়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অবশ্য আগে কর্মকর্তারা বলতেন যে সরকার বাধ্য হয়ে মসজিদ বন্ধ রেখেছেন; কারণ মসজিদের পরিচালনা কমিটি এখানকার ভারতবিরোধী আন্দোলন বন্ধ করতে সক্ষম নন।
গত দুই বছর ধরে কাশ্মীরের অনেক মসজিদ ও মাজার নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ ছিল। এছাড়াও করোনা মহামারিকালের লকডাউনেও কয়েক মাস বন্ধ থাকে এসব প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম। ২০১৯ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মীর থেকে দীর্ঘকালের আধা-স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বিলুপ্তির পর থেকে মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সূত্র: আলজাজিরা।
এনটি