বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী

তাবলীগ জামাত নিয়ে সৌদি সরকারের ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য: আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সম্প্রতি সৌদি আরব সরকারের ধর্মমন্ত্রণালয় কর্তৃক জুমার খতীবদের বাধ্য করে খুতবায় তাবলীগী জামাআত বিরোধী বক্তব্যদানের ঘটনাকে দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুবাল্লিগে ইসলাম আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদতে মোবারক হলো, প্রত্যেক যুগে এক এক অঞ্চলে এক এক উপায়ে দ্বীন ও দ্বীনের জ্ঞান প্রচার-প্রসারের কাজ বিশেষ বান্দাদের মাধ্যমে বিশেষভাবে আঞ্জাম দেন। যেমন, প্রত্যেক নবীর যামানায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজ আঞ্জাম দেওয়া হতো, তেমনি আমাদের নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সা. এর সময়েও তালীম-তাআল্লুম, ওয়ায-নসীহত, আত্মশুদ্ধি, দাওয়াতে তাবলীগ, আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ইত্যাদি মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজ চলে এসেছে।

তিনি বলেন, দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারের এই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে দারুল উলূম দেওবন্দের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনিভাবে আত্মশুদ্ধির জন্য ওয়াজ-নসিহত দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত জারি আছে। এই সবগুলোই উলামায়ে দেওবন্দ এবং ফুযালায়ে দেওবন্দের মারফতে চলছে। যে ধারাবাহিকতায় হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী, শায়েখ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, শায়খুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী এবং তাদের ছাত্রদের মাধ্যমে চলছে।

‘বিশেষ করে দাওয়াতে তাবলীগের মেহনত শায়খুল হিন্দ এর সাগরেদ ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা ইলিয়াস রহ., মুফতি আযম মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ ও মাওলানা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানীদের পরামর্শে শুরু করেছেন। যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রহ., মুফতি মুহাম্মদ শফি (মুফতীয়ে আজম পাকিস্তান), কারী তৈয়ব সাহেব (মুহতামিম দারুল উলূম দেওবন্দ), মাওলানা মনজুর নোমানী রহ., মাওলানা সাইয়্যেদ আলী হাসান নদভী রহ., মুফতিয়ে আযম ফয়যুল্লাহ রহ., পটিয়ার মুফতি আযীযুল হক রহ., মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., মাওলানা তাজুল ইসলাম বি-বাড়িয়া রহ. প্রমুখ। বর্তমানেও মুফতি তকী উসমানী, মাওলানা আরশাদ মাদানী, মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইবরাহীম দৌলা প্রমুখ উলামায়ে দেওবন্দ এবং উলামায়ে মুহাক্কিকীন এ কাজের নেগরানী করে আসছেন। যে কাজের হেফাজতে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ উলামায়ে হক্কানী এবং দেওবন্দ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়ার উলামায়ে কেরাম নিয়মতান্ত্রিকভাবে যুক্ত থাকেন।’

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, সুতরাং এই মুবারক জামাতকে কোনরূপ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া মনগড়াভাবে গুমরাহ, বিদআত কর্মে লিপ্ত বলা নিছক মূর্খতা ও ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগ বিরোধী অবস্থান বৈ কিছুই নয়। সৌদি আরবে পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফ, মুসলমানাদের সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি মসজিদের অবস্থান, রাসলূল্লাহ সা. এর পবিত্র রওজা’র অবস্থান ও ইসলামের সূচনা অঞ্চল হিসেবে দেশটির বিষয়ে বিশ্বের সকল মুসলমান সংবেদনশীল। কিন্তু এই সংবেদনশীলতার সুযোগ নিয়ে সৌদি শাসকমহল নিজেদের ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে ইসলামের বিষয়ে অপব্যাখ্যা দিতে থাকলে কোন মুসলমানেরই চুপচাপ মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা বিশেষভাবে সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন তাবলীগ জামাতের বিষয়ে তাদের অগ্রহণযোগ্য এই প্রচারণা থেকে ফিরে আসে এবং দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি না করে। কারণ, ইসলামকে সংকোচিত করার এমন অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষদের হুঁশিয়ার ও সতর্ক থাকা কল্যাণকর।

তাবলীগ জামাতের কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, এই মোবারক জামাত প্রধানত যেসব বিষয়ের উপর কাজ করে থাকে, তা হলো- ১. মানুষকে শিরক এবং বিদআত থেকে মুক্ত করে আল্লাহর একাত্ববাদে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার প্রচেষ্টা এবং রাসূলের সুন্নাতের উপর জীবন যাপন করতে উদ্বুদ্ধ ও অনুশীলন করা। ২. নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং অন্যান্য ইবাদতের উপর উম্মতকে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা। এছাড়া মদখোর, সুদখোর ঘুষখোর, বেপর্দা, যেনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি, জুলুম-অত্যাচার, অন্যের হক আত্মসাত ইত্যাদি পাপাচার থেকে মানুষকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা। ৩. দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়ার উপর প্রেরণা দেওয়া। ৪. সর্বদায় একে অপরের সাহায্য সহযোগিতা, মানবিক কাজে অংশ নেওয়া এবং একরাম করার শিক্ষা দেওয়া। ৫. প্রতিটি কাজ আল্লাহ তাআলার রেজামন্দির জন্য করা। রিয়া, কিবির, গীবত, হাসদ, লোভ -লালসা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা। এবং ৬. আল্লাহ তাআলাকে রাজি খুশির জন্য আল্লাহর দেয়া জান, মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার উপর তাগিদ দেওয়া।

তিনি বলেন, তাবলীগ জামাতের এসব মহৎ কাজের বিষয়ে সকল মুসলমান ওয়াকিবহাল আছেন। সুতরাং তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে যে কারো উদ্যত উক্তি ও অন্যায় পদক্ষেপে কোন মুসলমান ইনশাআল্লাহ বিভ্রান্ত হবে না।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ