আবদুল্লাহ তামিম।। ভারতের জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি জমিয়তের সকল নেতা-কর্মীদের প্রতি বিনীত আবেদন জানিয়ে বলেন, তাবলিগকে রক্ষা করা মুসলিম উম্মাহর গুরুদায়িত্ব।
গতকাল মঙ্গলবার জমিয়েতের অফিসিয়াল ফেসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে বিশ্বের মুসলিমদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাবলিগের মত দীনি জামানকে রক্ষা ও সমর্থন করা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর, বিশেষ করে ধর্মীয় আলেমদের উপর ফরজ।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, তাবলিগ জামাত বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। দীনি জামাত। এটাকে হেয়প্রতিপন্ন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ব মানবতার হেদায়াতের জন্য এটি একটি খুব ভালো পদ্ধতি। যারা তাদের বিরোধিতা করে, বা কোনো সরকার যদি এর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন প্রচারণার চালায় এটা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।
এই জাতীয় জামাতের সুরক্ষা ও সমর্থন সমগ্র উম্মাহর উপর, বিশেষ করে ধর্মীয় আলেমদের উপর ফরজ। সুধীবৃন্দ, তাবলিগী জামাতের বাস্তবতা ও আমল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করুন। সত্যের প্রতি আহ্বান করা সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তির মাধ্যমেও কেউ বন্ধ করতে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়। তবে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে প্রতিটি যুগে সত্যের জন্য বহু কোরবানি দিতে হয়েছে।
তাই দাওয়াহ ও তাবলিগের সমর্থন ও সুরক্ষার জন্য জমিয়ত কোনো ধরণের আপোশ করবে না। জমিয়ত উলামায়ে কেরামের সকল কর্মীরা যে যেখান থেকে পারেন যেভাবে পারেন তাবলিগ জামাতের কাজে সহযোগিতা করুন। সূত্র: তাবলিগ জামিয়তের উলামায়ে হিন্দের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ।
এর আগে বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার, পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি আল্লামা তাকি উসমানি সম্প্রতি সৌদি আরবে তাবলিগের বিরুদ্ধে জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন, সেখানে তিনি তাবলিগের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইলিয়াস রহ. এর অন্তরে একটি আগুন প্রজ্জলিত করে দিয়েছিলেন যার বদৌলতে তাবলীগ জামাতের ন্যয় এমন একটি দ্বীনি মেহনত চালু হয়েছে যা দুনিয়ার কোনায় কোনায় আল্লাহপাকের দ্বীনের পয়গাম পৌছে গিয়েছে।
আমি (তাকী উসমানী) মনে করি এই সময়ে সাধারণ মুসলমানের জন্য দাওয়াতের এই মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বাকি কিছু মন্দ বিষয় যেগুলো প্রচলিত রয়েছে সেগুলো কিছু না কিছু থাকবেই যা সবসময় টেনে আনলে চলবে না কারণ আসমানের নীচে আর জমিনের উপরে আম্বিয়ায়েকরামের মতো নিষ্পাপ কেউ নেই।
তারা ব্যতীত আমাদের সবারই কমবেশি ভুলত্রুটি রয়েছে। দেখার বিষয় হচ্ছে এখানে উপকারের সংখ্যা বেশি হচ্ছে নাকি ক্ষতির সংখ্যা বেশি? আলহামদুলিল্লাহ্ উপকারের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে গিয়ে মানুষ নিজেও দ্বীন শিখছে, আমলের প্রতি জজবা তৈরী হচ্ছে এবং অপরকেও এই দাওয়াত পৌছানোর দ্বারা বৃহৎ সংখ্যক মানুষ ফায়দা পাচ্ছে। তাই সাধারণ মুসলমানের জন্য এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা খুব উপকারী। আল্লাহপাক তৌফিক দান করুন।
এদিকে সৌদী আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতী আবুল কাসেম নূমানী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর অন্যতম ছাত্র ছিলেন।
তিনিই তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেন। যার অধীনে বড়দের নিষ্ঠাপরায়ণ চেষ্টা ও মেহনত দ্বীনি ও আমলি ক্ষেত্রে উপকার বয়ে আনছে। শাখাগত মতভেদ সত্ত্বেও তাবলীগ জামাত নিজের মিশনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় গোটা বিশ্বেই তাদের কাজ ছড়িয়ে আছে। এর সাথে যুক্ত সদস্য ও জামাতের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর শিরক, বিদআত ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
দারুল উলূম দেওবন্দ এর নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি সৌদী সরকারের কাছে আবেদন করছে, তারা যেন নিজেদের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেন এবং তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকেন।
অপর দিকে তাবলিগী কাজ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় আলেমদের সাথে কথা বলে মন্তব্য করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর আমীর ও যাত্রাবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।
-এটি