আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: প্রথম চার মাসের নতুন পাঠ্যক্রমের অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন হবে পুরো সিলেবাস। আর সেই লক্ষ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের বাছাই করা দুই শ’ স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে নতুন পাঠ্যক্রম। এর অভিজ্ঞতায় বাকি বছরের জন্যও চালু করা হবে পরিবর্তিত পাঠ্যসূচি। এ জন্য প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণীর জন্য এক শ’ স্কুল এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য এক শ’ স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনা মতো ২০২৩ সাল থেকেই পাঠ্যসূচিতে আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে এনসিটিবি। এরই অংশ হিসেবে ২০২২ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে দেশের বাছাই করা এক শ’ স্কুলে প্রথম ও এক শ’ স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলাফল ভালো হলে পরের শিক্ষাবর্ষ (২০২৩ সালে) দু’টি ধাপে সব শ্রেণীতেই বাস্তবায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও শিক্ষার্থীদের প্রথমেই একসাথে সারা বছরের বইপত্র দেয়া হবে না। প্রথমে চার মাসের বই দেয়া হবে। এর প্রতিক্রিয়া বা ভালোমন্দ দেখে (ফিডব্যাক) তার ভিত্তিতে পরের বিষয়গুলো তৈরি করা হবে। এসবের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করে ২০২৩ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হবে।
এসিটিবি সূত্র আরো জানায়, নতুন পাঠ্যসূচি বাস্তবায়নে বেশ কিছু ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমিয়ে বরং তাদেরকে বাস্তব শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যোগ্যতাভিত্তিক শিখন নিশ্চিত করা, শিখনকালীন মূল্যায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া, নম্বরভিত্তিক সনদের পরিবর্তে পারদর্শিতার রেকর্ডের ওপর গুরুত্বারোপ করা, মুখস্থনির্ভর জ্ঞানের পরিবর্তে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছেন, সরকার প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে তা চালু হবে। পরের বছর থেকে তা পর্যায়ক্রমে চালু হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কার্যক্রমের সময়) সারা বছর ধরে মূল্যায়ন করা হবে। বছর শেষেও মূল্যায়ন হবে। তবে সেটিই সব নয়। সনদ দরকার আছে; কিন্তু সনদই সবকিছু নয়।
এ দিকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ট্রাই আউট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণও ঢাকায় শুরু হয়েছে। এখানে নতুন পাঠ্যসূচি কিভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রয়োগ করা হবে তার অভিজ্ঞতা ও প্রায়োগিক নানা দিক শিক্ষক এবং সুপারভাইজারদের হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হবে।
অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে , সারা বছর পড়ে বা না পড়ে পরীক্ষার ঠিক আগে রাত জেগে পড়াশোনা করার মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দেয় না, প্রকৃত অর্থে পরীক্ষা দেয় তার পুরো পরিবার। আবার বছর শেষে পরীক্ষা দিয়ে ভালো কিংবা মন্দ, সেটি নিয়ে আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ রকমের প্রচারণা চলে। বিশেষ করে জিপিএ ৫ পেলে আনন্দের বন্যা, জিপিএ ৪ দশমিক ৮ পেলেও শিক্ষার্থীর পুরো কবরের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন সে রকম কিছু হবে না। এখানে মূল্যায়ন হবে শিক্ষার্থীরা আসলে শিখছে কি না, তাদের কাজে লাগছে কি না, সেটিই।
-কেএল