আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: অশালীন ও নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে দেশ ছেড়েছেন।
এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি রাত ১১টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা উড়াল দেয় রাত ১টার দিকে। বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
এর আগে রাত পৌনে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছান ডা. মুরাদ। জিন্স প্যান্ট ও ব্লেজার পরা মুরাদের ডান হাতে ছিল মেরুন রঙের একটি লাগেজ। বাম হাতে ছিল পাসপোর্ট-টিকিট, কাঁধে ছিল একটি চামড়ার ব্যাগ।
মুরাদ গত সেপ্টেম্বরেই কানাডা সফর করেছিলেন। তখন অটোয়া, টরন্টো, মন্ট্রিল, কুইবেক, ভ্যাংকুভার মিলিয়ে সপ্তাহখানেক দেশে ছিলেন তিনি। কানাডা থেকে ফিরে অক্টোবরেই আবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন মুরাদ।
গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তার ফ্লাইট নম্বর ইকে-৫৮৫। উড়োজাহাজটি দুবাই হয়ে টরন্টো যাওয়ার কথা।
তার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে কি না এ প্রশ্নে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ডা. মুরাদের নামে কোনো মামলা নেই। তার দেশত্যাগেও কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে তিনি দেশত্যাগ করতে চাইলে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। এর আগে অডিও কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ডা. মুরাদ কানাডা যাওয়ার উদ্দেশে একটি টিকিট কাটেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসানের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি পদত্যাগের দিন (৭ ডিসেম্বর) নিজের হাতে নিয়ে গেছেন তিনি।
বিএনপির এক শীর্ষ নেতার মেয়েকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই ডা. মুরাদ হাসানের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপের ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে অশ্লীল কথাবার্তা ও নায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
এরপর সোমবারই (৬ ডিসেম্বর) মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন মঙ্গলবার ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন মুরাদ। ওইদিন বিকেলেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রকাশিত গেজেট বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক গৃহীত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘লাল পাসপোর্ট’ থাকা সত্ত্বেও ডা. মুরাদ হাসানের বিদেশ যেতে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কেননা ‘লাল পাসপোর্টধারী’ ব্যক্তি সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না।
গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক প্রতিমন্ত্রী (মুরাদ হাসান) দেশের বাইরে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে আমার জানা নেই। উনি বিদেশ যাবেন, নাকি দেশে থাকবেন তা তার নিজস্ব বিষয়।’
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের কারণে মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর কিছু অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
এদিকে জামালপুর আওয়ামী লীগ থেকে মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।এ ছাড়া তার আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদীয় বৈঠকে।
-এটি