মাহমুদুল হাসান
বিশেষ প্রতিবেদক>
সাম্প্রতিক ফেসবুকে মাওলানা আব্দুল খালেক শরিয়তপুরীর একটি ওয়াজের ভিডিও ভাইরাল হয়। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় দেখা যায়।
নেট দুনিয়ার বাসিন্দারা তার ওয়াজের অসন্তোষ বলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন ফেসবুকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়
মাওলানা আব্দুল খালেক শরিয়তপুরি বললেন, বেজার হইসেন? নাকি রাগ করছেন? একটু দুই হাত তুলেন তো। শ্রোতারা হাত উঠালেন।
বক্তা বললেন এই যে মুরুব্বি তুলে না। হাত নামান। শ্রোতাদের উদ্যেশ্য আবারও বললেন হাত তুলেন। শ্রোতারা হাত তুললেন। বক্তা তখন বললেন এই যুবকরা দেখ কোন যুবক/বুইড়া হাত তুলেনা, এইডা হেই দলের। কাইজ্জা লাগানোর দলের।দেখ দেখ একটু ভালা কইরে দেখ।
মিয়া নায়েবে নবীর কথা শুনতেছেন না। হাত তুলতেছেন না। নবীর কথা অস্বীকার করতেছেন। কিছু বেডইক্কে আছে হাত তুলে না। তখন মুখ বাঁকা করে অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। এক শ্রোতার দিকে আঙুল তুলে বললেন এইযে এইযে এই দুইডে, আল্লাহ যেন মরার আগে তোদের লুলা বানায় বুঝিসরে।
আমি তিনবার কইরে কইসি তবুও হাত তুলস নাই। খোদায় যেন তোদের ঠাডা ফালাইয়া লুলা বানায়। কত বড় বাটপার।
লগেরটা আরও বড় বাটপার বিশ্ববাটপার, এই যে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এভাবে ওয়াজের মঞ্চে এক শ্রোতাকে দীর্ঘ চার মিনিট হাসির পাত্র বানিয়ে, অপমানিত করলেন।
তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মাওলানা রশীদ জামিল তার ফেসবুকে ‘বক্তা যখন খাটাশ’ শিরোনাম দিয়ে লিখেন; বক্তা বললেন, সবাই হাত তুল। শ্রোতারা হাত উঠালেন। দুয়েকজন মুরব্বি হাত উঠাননি। ক্ষেপে গেলেন বক্তা। বাবার বয়সী শ্রোতাকে বললেন, “খাটাশের ঘরের খাটাশ। খোদায় যেন তোগো ঠাডা পালাইয়া লুলা বানাইয়া দেয়!”
তারপর আবার বললেন, এখন দেখি কে হাত উডায় না! যত বুইড়াই হউক, হাত না উডাইলে বুঝবি এইডা ঐ দলের। হাত তুল সবাই… বিব্রত শ্রোতাগণ হাত উঠালেন। আফসোস! কারো হাতে জুতা উঠল না!
তরুন ওয়াজে মাওলানা রাফি বিন মুনির তার ফেসবুকে লিখেন; ইসলামের ক্ষতি হয় বা ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন বিষয়ে বরাবর চুপ থাকার চেষ্টা করি।
জাহেলদের চেয়ারে বসানোর জন্য এক শ্রেণীর আলেমরা কি দায় এড়াতে পারেন!! লেবাস পরিবর্তন করে হুজুরের লেবাস লাগালেই কি আলেম হওয়া যায়!!
সঞ্চালন প্রকাশনীর কোন-ফাউন্ডার ইমরান রায়হান তার ফেসবুকে লিখেন, বক্তা আবদুল খালেক শরিয়তপুরিকে চিনি এক যুগ আগ থেকে। সে সময় পাটুয়াটুলি থেকে কিনে আনা ওয়াজের সিডিতে ভুল করে তার ওয়াজও চলে এসেছিল। সেই কেচ্ছাকাহিনী নির্ভর মায়ের বয়ান আর আবদুল কাদের জিলানির অলৌকিক ঘটনা, শুনেই বোঝা গেল ভদ্রলোক অন্য লাইনের৷ সে সময় আবদুল খালেক শরিয়তপুরির মূল মার্কেট ছিল উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রীক, সাধারণ এলাকাবাসীর মাহফিল। কোনো মাদরাসা বা ইলমি মহলে তাকে ডাকা হত না। এমনকি নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার মাহফিলেও তাকে তেমন একটা দেখা যায়নি, কারন এই কয়েক জেলায় সাধারণ মাহফিলেও ইলমি আলোচকদেরকেই ডাকা হয়।
কয়েকবছর আগে হঠাত শুনলাম আবদুল খালেক শরিয়তপুরি বদলে গেছেন, আগের মত বাজেট করেন না, আজেবাজে বয়ান করেন না, তিনি কোনো এক পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত হয়েছেন। কিছুদিন পর আমাদের এলাকার এক মাহফিলেই পীর সাহেবের সাথে এলেন আবদুল খালেক শরিয়তপুরি। পীর সাহেব বললেন, সে এখন আমার হাতে বাইয়াত। আমার সাথে রাখি৷ ইসলাহ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন। অবশ্য সেই রাতেই মাহফিল কমিটির সাথে বাজেট নিয়ে তর্কে জড়ালেন শরিয়তপুরী।
কদিন পর দেখা গেল কওমি ঘরানার গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গাতেই শরিয়তপুরি আলোচনা করছেন, তাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য অনেকে, পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে দেওনার পীর সাহেবের মুরিদ বলে। এভাবে কওমি ঘরানার মাহফিলেও জায়গা করে নিলেন শরিয়তপুরি। এখন তো অনেক মাদরাসার মাহফিলেও তাকে আলোচক করা হচ্ছে৷
বক্তা আব্দুল খালেক শরিয়তপুরীর সঙ্গে আওয়ার ইসলাম থেকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করতে চাইলে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার কল করে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
-এটি