আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিদ্যমান কোভিড ভ্যাকসিনগুলো ‘অত্যন্ত সংক্রামক’ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক মডার্নার প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানসেল।
তিনি মঙ্গলবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, বিদ্যমান টিকাগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে। তবে, বর্তমান ভ্যাকসিনগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা তা জানতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে এবং এর জন্য নতুন ভ্যাকসিন বানাতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।
ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো: এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে - যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে - আর এর ফলে কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে।
প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে আরো দেখা গিয়েছে যে ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অর্থাৎ যারা আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন - তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার দৃষ্টান্ত কম হলেও - ওমিক্রনের ক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তারা এখন কতটা নিরাপদ - তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফাইজার, এ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক - এসব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে?
এগুলোই ওমিক্রন নিয়ে ভয়ের কারণ। বলা দরকার যে ভাইরাস সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিচ্ছে।
চীনের উহান শহরে প্রথম যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল, সেই ভাইরাস এখন আর নেই। ডেল্টা আর বেটা ভ্যারিয়েন্ট তাকে হটিয়ে দিয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ৬টি। আর ওমিক্রনের 'ইউনিক' মিউটেশনের সংখ্যা এর অনেক বেশি - মোট ২৬টি। এতেই বোঝা যায় একে মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে।
তবে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকে প্রথম সতর্ককারী দক্ষিণ আফ্রিকান চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজে বলেছেন, ‘গত ১০ দিনে কমপক্ষে ৩০ জন রোগী দেখেছি, যারা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত। তাদের কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। সামগ্রিক মৃদু উপসর্গ লক্ষ্য করা গেলেও তা উদ্বেগজনক বলে মনে হয়নি।’
এই চিকিৎসকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, জোড়া টিকা তথা পূর্ণ ডোজ নেওয়া থাকলে আপনি অনেকটাই সুরক্ষিত এ কথা প্রাথমিকভাবে বলা যায়।
তারা বলছেন, করোনার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ টিকাই নিশানা করে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন অংশকে। এই স্পাইক প্রোটিন অংশ মানব কোষে প্রবেশ করে। টিকা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে চিহ্নিত করতে শেখায় এবং ভাইরাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন আক্রমণ তাকে করে।
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এটির স্পাইক প্রোটিনের অন্তত ৩০টি মিউটেশন ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। মিউটেশনের পরিমাণ যত বাড়বে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভাইরাসের ধোঁকা দেওয়ার পাল্লা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে উপায় হলো টিকা নেওয়া। কারণ, মিউটেশনের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে ওমিক্রন অপেক্ষাকৃত বেশি সংক্রামক। তাই যত দ্রুত সম্ভব জোড়া টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
তারা বলছেন, জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তি যদি করোনার ডেল্টা রূপে সংক্রমিত হন, তা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ৯ ভাগের ১ ভাগ। জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণ বেশি।
আর ডেল্টা রূপে সংক্রমিত এবং জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের শারীরিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বাকিদের চেয়ে অনেক মজবুত।
ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজির অধ্যাপক ডেভিড ম্যাথিউজ বলেছেন, ‘যদি জোড়া টিকা নেওয়া থাকে এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত হয়ে আবার সেরে ওঠেন, তা হলে আপনি বৃহত্তর এবং অত্যন্ত কার্যকরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী যা আপনাকে ভাইরাসের যে কোনো ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা জোগাবে।’
কারণ হিসেবে ডেভিড বলছেন, চীনের উহান থেকে যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, সেই মূল ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতেই টিকা আবিষ্কার। দিনে দিনে এটি স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও পোক্ত করে চলেছে। স্বভাবতই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবেন, এটা ধরে নেওয়া যায়।
এনটি