আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জীবনের সকলক্ষেত্রে রাসূল সা. এর আদর্শের অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব জাতি রাসূল সা. এর আদর্শের ছোঁয়ায় নবুওয়াতের মাত্র ২৩ বছরেই বিনির্মাণ করলো এক নতুন পৃথিবী। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধ, অন্যায়-জুলুম ও অনৈতিকতার হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে ইনসাফপুর্ণ, শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদেরও রাসুল (সাঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে জীবনের সকলক্ষেত্রে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর গুলিস্তানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় সীরাত সম্মেলন, পুরস্কার বিতরণ, বিশ্বজয়ী হাফেজ-ক্বারীদের সংবধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সীরাত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, দলের শরীয়াহ বিষয়ক উপদেষ্টা মুফতী ওমর ফারুক সন্ধিপী। সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সীরাত সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক ইনকিলাবের সহ-সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, দৈনিক নয়াদিগন্তের সহ-সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলী, সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, লেখক ও গবেষক মাওলানা যাইনুল আবিদীন, বারিধারা কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব মাওলানা সাইয়্যেদ জুলফিকার জহুর, শেখ ফজলুল করীম মারূফ, ছাত্রনেতা নূরুল করীম আকরাম।
সম্মেলন পরিচালনা করেন জয়েন্ট সেক্রেটারী ডা. শহিদুল ইসলাম ও মাওলানা জিয়াউল আশরাফ।
জাতীয় সীরাত সম্মেলন তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্ব সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। ২য় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য, বিশ্বজয়ী হাফেজদের সম্মাননা প্রদান এবং পুরস্কার বিতরণ। ৩য় পর্বে মনোজ্ঞ ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সীরাত সম্মেলনে ৬ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন শেখ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। প্রস্তাবনার মধ্যেরয়েছে-
১. বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মাদ সা. শেষ নবী এবং সর্বোচ্চ সম্মানীয় ব্যক্তি। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তা সংযুক্ত করতে হবে।
২. আল্লাহ তা’য়ালা, রাসূল সা. ও ইসলামের অবমাননা রোধে সু-নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তবে সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাসের সুযোগ থাকবে।
৪.জাতীয় জীবনের সর্বত্র সীরাতুন্নবী সা. অনুসরণের লক্ষে জাতীয় সীরাত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৫. জাতীয় শিক্ষাক্রমের সর্বত্র সীরাত পাঠ বাধ্যতামূলক করা। বিশেষত অনার্স পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ে চার ক্রেডিট সীরাতের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
৬. সীরাত সম্মেলন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের যাবতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানায়।
চরমোনাই বলেন, পরকালের নাজাতে ব্যক্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন মুসলমানের কাজ। রাসুল (সা.) এর জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা সষ্টির জন্যে পরিকল্পিতভাবে পুজামণ্ডপে কুরআন রাখা হয়েছে। পুজামণ্ডপে-মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের বাড়ী-ঘরে হামলায় ইসলামপন্থিরা জড়িত তা প্রমাণ করতে পারেনি। তারপরও সেইসূত্র ধরে ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের বাড়ী-ঘর, দোকানপাঠ ও মসজিদে হামলা এবং মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে। ওই মহলটি দেশে ইসলামী রাজনীতি বন্ধের চক্রান্ত করছে।
মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, রাসূল সা. এর আগমনের পূর্বে বিশ্বব্যাপী এক মহাপরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কাজেই অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে নববী আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, বিশ্বের সর্বত্র মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত। আজ যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারাই মানবাধিকার বেশি লঙ্ঘন করে। সিনয়া, হার্জেগোবিনিয়া, ভারত, স্পেনসহ বিশ্বের দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
কাজেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সত্যিকারের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন রাসূল সা.। মানুষের সকল প্রয়োজন, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, যে শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে, ইসলামের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়, যে শিক্ষায় মানুষ আলোকিত হয়ে দেশ ও সমাজ আলোকিত করে সে শিক্ষার প্রবর্তণ করেন রাসূল সা.। যে শিক্ষার মহান শিক্ষক মহান রব্বুল আলামিন সেই নববী বা ওহীভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তণ করে গেছেন তিনি।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলামে রাজনীতি আছে, সে রাজনীতির প্রবক্তা মহানবী সা.। তিনি রাজনীতি করে সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে গেছেন। কাজেই ধর্মে রাজনীতি নেই বলে যারা শ্লোগান দেয়, তারা
ইসলাম মানে না। ইসলামে রাজনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি, শিক্ষানীতি, আন্তর্জাতিক রীতি সবগুলোই রাসূল সা. শিখিয়ে গেছেন। যে ধর্ম এগুলোকে স্বীকার করে না, সেই ধর্ম আমরা মানি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন আমরা মদীনার সনদে রাষ্ট্র চালাবো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি তা ভুলে গেছেন। মদিনা সনদে বিচার ফায়সালা এবং আইন ছিল আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের। মানুষের মনগড়া আইন মদিনা সনদ স্বীকৃতি দেয় না।
এনটি