২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ ঈ. রোজ বুধবার মাগরিবের নামাযের পর ‘দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা লক্ষে র ‘জামালিয়াহ হলে’ শিক্ষাসমাপনকারী তলাবায়ে কেরামের বিদায়ী জলসায় সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. এই ‘ফিকর-আনগীয’ বয়ান করেন। এ বয়ান যে কোনো দারুল উলূমে অধ্যয়নকারী কিংবা শিক্ষাসমাপনকারী তলাবায়ে কেরামের জন্য পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করবে। তা‘মীরে হায়াত বয়ানটি ভাষান্তর করেছেন মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল।
আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের সম্পর্ক যেন ঠিক হয়। তাকওয়া, দিয়ানতদারি এবং তাআল্লুক মাআল্লাহ-এর একটা পর্যায় যেন অর্জিত হয় এবং এর জন্য চেষ্টা-ফিকির করা হয়। এটি এমন একটি মৌলিক ও অনিবার্য বিষয়, যা ছাড়া না কোনো কাজে বরকত হয় আর না কোনো চেষ্টা-ফিকির ও মেহনত-প্রয়াসে বরকত হয়। বাস্তবিকপক্ষে উপকারী কোনো কিছু করা তখনই সম্ভব হয়, যখন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকে।
আমি একথা বলছি না যে, আপনারা সবাই রাত্রিজাগরণকারী ইবাদতগোযার হয়ে যান। বড় সূফীসাধক ও আরেফ বিল্লাহ হয়ে যান। এমনটি হওয়া সবার জন্য জরুরি নয়। কিন্তু যা জরুরি তা হল, তাকওয়ার একটি পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছা এবং আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক ঠিক করা এবং এ বিষয়ের ফিকির থাকা। নামাযের ফিকির থাকা, দুআর যাওক-শওক থাকা এবং একপর্যায়ের ‘ইনাবাত ইলাল্লাহ’ অবশ্যই থাকা। এটি হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়। এ বিষয়টি কখনো ভোলা যাবে না। কখনো এ থেকে গাফেল হওয়া যাবে না।
এটি অর্জনের বহু পথ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি তো হল, আপনারা মনোযোগ দিয়ে কুরআন মাজীদ, হাদীস এবং ফিকহের কিতাবাদি পড়বেন এবং সে মোতাবেক নিজেদের নামায সুন্দর ও উন্নত করার চেষ্টা করবেন। এছাড়া সবচেয়ে ফলপ্রসূ পন্থা হল, বুযুর্গানে দ্বীনের জীবন চরিত শিক্ষা গ্রহণের নিয়তে পড়া। আর যদি আল্লাহ তাআলা তাওফীক দেন তাহলে কোনো বুযুর্গের সোহবত অবলম্বন করা। আমি বে-তাকাল্লুফ বলছি, এক্ষেত্রে সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক উপকারী হল, হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.-এর গ্রন্থাবলি। বিশেষভাবে তাঁর মালফুযাত এবং মাওয়ায়েযের একটি বিশেষ আছর ও প্রভাব আছে।
আলহামদু লিল্লাহ! আমি আমার নদভী নিসবত, সাহিত্য ও ইতিহাসপ্রীতির রুচি ও বোধ, বরং সুষ্ঠু সমালোচনা ও পর্যালোচনার রুচিসহই মালফুযাত ও মাওয়ায়েয পড়েছি এবং এই পঠন থেকে ব্যাপক উপকৃত হয়েছি। আমি আপনাদেরকেও এগুলো পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এই পঠনের মাধ্যমে আপনারা ধন-সম্পদের মোহ, পদ-সম্মানের মোহ এবং লেনদেনের নানা বিচ্যুতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিশেষভাবে আখলাক-চরিত্রের সংশোধন এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাজের বিষয়ে তাঁর গ্রন্থাবলিতে বেশ জোর প্রদান করা হয়। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তাঁর দ্বারা এই কাজগুলো করিয়ে নিয়েছেন। আপনারা অবশ্যই তাঁর রচনাবলি, মালফুযাত ও মাওয়ায়েযের প্রতি মনোযোগী হবেন। এগুলোর একটি অংশ আপনাদের অবশ্যই পড়া থাকা উচিত।
সূত্র: তা‘মীরে হায়াত, লক্ষ্মৌ, ২৫ মার্চ ১৯৮৮ ঈ.
এনটি