।।যাকওয়ানুল হক চৌধুরী।।
চা বাগানের সুবিধা বঞ্চিত চা-শ্রমিকরা সবদিক থেকে অবহেলিত। বঞ্চিত শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা সহ নানা সুবিধা থেকে। তারা কাজের বাহিরে অন্যকিছু চিন্তা করে না, চিন্তার সুযোগ পায় না। যেখানে মানুষ প্রতিদিন ইনকাম করে হাজার টাকা। সেখানে তারা শ'খানেক পর্যন্ত থাকে, সপ্তাহে তাদের ইনকাম সর্বোচ্চ ১হাজার টাকা।
সিলেট শহরের কাছাকাছি উত্তরাঞ্চলে সাতটা চা বাগান ঘুরে দেখা মেলেনি কোন মাদরাসা, মকতব, মসজিদ। বাগানের বাহির অংশে যারা থাকে, তারা অনেক সময় ঘন্টাখানেক হেটে স্কুল আর মকতবের যেতে পারে৷ কিন্তু বাগানের ভেতরে যারা থাকে, মাইলের পর মাইল ভেতরে যাদের বসবাস, তারা জীবনটাই বাগানে পাড় করে দেই।
জীবনে একবারো শহরে আসে নি, একরমের সংখ্যা সবচে বেশী। আবার দরিদ্রের চরম সিমায় তাদের বসবাস। সপ্তাহে একদিন বাগানের ভেতরে অস্থায়ী বাজার বসে, সেখানেই তারা প্রয়োজন সেরে দেয়।
সিলেটে এরকম সাতটি চা বাগান নিয়ে দরিদ্রদের মাঝে সহায়তা কাজ শুরু করেছেন সিলেটের কিছু তরুণ আলেম। এর পাশাপাশি তারা দ্বীন শিক্ষা ব্যবস্থা করছেন সুযোগ বুঝে। মসজিদ তৈরী করছেন, মকতবের ব্যবস্থা করছেন। চাহিদা বুঝে টিউবওয়েল দিচ্ছেন। গত কোরবানির ঈদে বাগানের ভেতরে তারা কোরবানি দিয়ে প্রায় ৪৫০ পরিবারের মধ্যে গোস্ত বিতরণ করেছেন।
এভাবে নানামুখী কার্যক্রম নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে মাওলানা আহমদুল হক, হাবিব মুস্তাফিজুর রহমান, আবুল কালাম প্রমুখ ।
মাওলানা আহমদুল হক বলেন- সিলেট শহর থেকে উত্তরদিকে বড় বড় বেশ কয়েকটি চা বাগান আছে। যেমন- লাক্কা তুরা, মালনিছড়া,আলী বহার, হিলুয়াছড়া, তেলিহাটি বরজান, দুপাগুল, চিকনাগুল চা বাগান সহ আরো অনেক। আমরা গত কয়েকমাস মাস থেকে কাজ শুরু করেছি, আজকের আপডেট হলো, চা বাগানে ছুটি চলছে, এর ফাঁকে ২০জন শ্রমিককে আমরা সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে তাবলীগে পাঠিয়েছি তিন দিনের জন্য।
চা বাগানে আমাদের তৈরী 'বরজান' মসজিদে তারা এখন আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আবুল কালামকে তাদের সাথে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কাজের ধারাবাহিকতায় একাধিক টিউবওয়েল দিয়েছি, আরেকটির কাজ এখনো চলমান।স্থানীয়দের চাহিদায় আমরা এপর্যন্ত তিনটি মসজিদ স্থাপন করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
লাক্কাতুরা স্টেডিয়াম থেকে ভেতরে গেলে ৫০টি পরিবার পাওয়া যায়, যাদের আশপাশে কোন মসজিদ নাই, সেখানের একজন মহিলা মসজিদ বানানোর জন্য জায়গা দিয়েছেন, শীগ্রই এটির কাজ হবে। এটি হবে চতুর্থ মসজিদ।
এসব এলাকায় গেলে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতা আসে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আহমদুল হক বলেন- আলহামদুলিল্লাহ! এখন পর্যন্ত আমরা কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হইনি, বরং যেখানেই গিয়েছি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগীতা পেয়েছি, আগ্রহ পেয়েছি। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সেখানে আছেন, প্রত্যেকেই যার তার ধর্ম পালন করছেন, নীতির ভেতরে থেকে দাওয়াতের কাজ করছেন।
আমরা গত কোরবানির ঈদে বাগানে কোরবানিও করেছি, তাদের মাঝে গোশত বিতরণ করেছি। এতে তাদের আনন্দের কোন শেষ ছিল না। তাদের পুরো এলাকায় কোন কোরবানী হয় না, করার তাওফিক নাই।
তাদের ফিউচার প্লান জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আমরা চাচ্ছি ২২টি বাগানের প্রত্যেকটিতে মকতব করা৷ ঘরে ঘরে কোরআনের আলো বিলানো। যাতে কেউ কোরআনী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। যে কোন পেশা নিয়ে কাজ করুক, সঠিক ইসলামি আকিদা তাদের ভেতরে ঢেলে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’
-কেএল