বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক দারুন্নাজাতের প্রাক্তন ছাত্র শিহাবউদ্দীনের আল আজহার থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন

হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.: ইতিহাসের এক অনন্য মনীষী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাকসুদুর রহমান সাইমন রশীদি।

হযরত থানভী রহ.-এর বাপ-দাদা ফারুকী ছিলেন এবং নানা আলবী ছিলেন। তার জন্ম বৃত্তান্ত অলৌকিক ঘটনার সহিত সম্পৃক্ত। তার পিতার কোন পুত্র সন্তানই জীবিত থাকত না।

তিনি একটি জটিল চরম রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের অভিমতে এমন এক ঔষধ সেবন করেন যাতে তার প্রজন্মের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন।এতে থানভী রহ. -এর মাতা দুঃশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই কারণেই তিনি বিশিষ্ট বুজুর্গ হাফেয গোলাম মুরতাযা পানিপথী রহ.-এর শরণাপন্ন হন।তিনি ছিলেন খোদার প্রেমে আত্মহারা এক আল্লাহ ওয়ালা।

তিনি বললেন,ওমরও আলীর সাথে সংযুক্ত করে নাম রাখার দরকার নাই।এবার পুত্র সন্তান জন্ম হলে হযরত আলীর সাথে মিলিয়ে নাম রাখ। ইনশাআল্লাহ জীবিত থাকবে।

আর ফলত তাই হয়েছিল। জন্ম লাভ করেন হযরত আশরাফ আলী থানবী ও তার ছোট ভাই আকবর আলী এবং তারা উভয়েই দীর্ঘ জীবন লাভ করেন।

বাল্যকাল

শৈশব থেকেই থানভীর চাল-চলন ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। তিনি কখনো বাইরের ছেলেদের সঙ্গে মিলামিশা করতেন না।
ছোট ভাই আকবর আলীর সাথে নিজ বাড়ীর সীমার মধ্যে খেলাধুলা করতেন।বাল্যকালে তিনি অত্যন্ত শান্ত ও সুবোধ ছিলেন। সেজন্য অমুসলিমরাও তাঁকে অত্যন্ত স্নেহের চোখে দেখত।

তার বয়স যখন ১২/১৩ তখন থেকেই শেষ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তার চাচী আম্মা নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত নামায পড়তেন। থানভী রহ. যখন বাড়ীর বাইরে যেতেন তখন আল্লাহর কুদরতে আকাশের মেঘমালা তাঁকে ছায়া দিত।

একটি সপ্ন
থানভী রহ. বাল্যকালে একটি তাৎপর্য পূর্ণ সপ্ন দেখেন, তিনি বলেন যে আমি সপ্নে দেখলাম যে, মীরাঠের যে বাড়ীতে থাকতাম তাতে উঠার জন্য দু’টি সিঁড়ি ছিল। একটি বড় ওএকটি ছোট। আমি দেখলাম যে বড় সিঁড়িটির নিকট একটি পিঞ্জিরায় দু'টি সুন্দর কবুতর।অতঃপর যেন চতুর্দিকে সন্ধ্যার অন্ধকার ছড়িয়ে গেল।

তখন কবুতর দুটি আমাকে লক্ষ্য করে বলল, আমাদের পিঞ্জিরাটিকে আলোকিত করে দিন।উত্তরে আমি বললাম তোমরা নিজেরাই আলোকিত করে নাও। তখন কবুতরদ্বয় নিজেদের ঠোট পিঞ্জিরার সহিত ঘর্ষণ করতে লাগল।দেখতে দেখতে খাঁচাটিএক উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত হয়ে উঠলো।

কিছুদিন পর এই সপ্নের কথা তিনি তার মামা বিশিষ্ট বুজুর্গ ওয়াজিদ আলী সাহেবের নিকট ব্যক্ত করলে তিনি তার এই ব্যাখ্যা করেন যে, কবুতর দুটোর একটি হচ্ছে রুহ অপরটি নফস।

মিজাহাদা বা সাধনার মাধ্যমে তাদের তাদের কে নুরাণী করতে আবেদন করেছিল। কিন্তু তোমার কথায় তারা নিজেরাই নিজেদেরকে নূরাণী করে নিয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তোমাকে সহজে আত্মশুদ্ধি দান করবেন।পরবর্তীকালে তাই হয়েছিল।

শিক্ষা

থানভী রহ. কুরআন শরীফ ও প্রাথমিক উর্দু -ফার্সি কিতাব মীরাঠে শিক্ষা লাভ করেন।পরে থানা ভবন এসে নিজ মামা ওয়াজিদ আলীর নিকট শিক্ষা লাভ করেন।এরপর আরবীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় ১২৯৫হিজরীতে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ মাদারে ইলমী দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। মাত্র ৫ বৎসরেই দেওবন্দের শিক্ষা সমাপ্ত করে ফিরে আসেন।

তার বয়স তখন মাত্র ১৯। তিনি এসময়ের মধ্যে ইলমে হাদীছ, তাফসীর, আরবী সাহিত্য, তত্ত্ব -বিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র,নৈতিক চরিত্র, ইতিহাস, আধ্যাত্মিক চিকিৎসা তথা আত্মশুদ্বি ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ের জটিল কিতাবাদী - অতি কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন করেন।

দেওবন্দে দুটি স্বপ্ন

১, একবার তিনি স্বপ্নে দেখেন যে,একটি কুপ হতে রৌপ্য স্রোত প্রবাহিত হয়ে তার পিছে পিছে চলছে। ২, অন্য এক স্বপ্নে তিনি দেখেন যে, জনৈক বুজুর্গ ও কোন এক দেশের গভর্নর এই দুই ব্যক্তি তাকে একটি চিঠি লিখেন। উভয় চিঠিতে এ কথা লিপিবদ্ধ ছিল যে,আমরা আপনাকে মর্যাদা প্রদান করলাম।

ঐ চিঠির একটিতে নবীজির নাম মোহর অংকিত ছিল। তার লেখা গুলো বেশ স্পষ্ট সুন্দর ছিল। অবশ্য অন্য চিঠিটির মহরের চিহ্ন অস্পষ্ট থাকায় পড়া যাচ্ছিল না। থানভী রহ. উভয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিজ প্রাণপ্রিয় উস্তাদ এবং দেওবন্দের শিক্ষাসচিব মাওলানা ইয়াকুব নানূতবী রহ. এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি প্রথম স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বলেন যে, পৃথিবীর ধন-সম্পদ তোমার পদ চুম্বন করবে কিন্তু তুমি সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবে না। আর দ্বিতীয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা এই যে, ইনশাআল্লাহ দ্বীন -দুনিয়ায় তোমার যথেষ্ট মান- সম্মান হবে।

ছাত্র কাল থেকেই তিনি শিক্ষকদের খিদমত করতেন।ফলে তিনি ছাত্র জীবনে সর্বোত্তম ছাত্র, আর কর্ম জীবনে সর্বোত্তম আলেম নামে খ্যাতি লাভ করেন।

পাগড়ীর ঘটনা

দেওবন্দে অধ্যয়ন শেষে কৃতী ছাত্রদের যথারীতি দাস্তারে ফযিলত বা পাগড়ী দেওয়া হয়।থানভী রহ.যখন তাকে পাগড়ী প্রদানের সিদ্ধান্তের সংবাদ শ্রবণ করেন তখন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে নিজ প্রাণপ্রিয় উস্তায হযরত ইয়াকুব সাহেব রহ.কে বলেন যে, হযরত! আমরা শুনলাম যে, আমাদেরকে দাস্তারে ফযীলত প্রদান করা হবে অথচ আমরা তো এর যোগ্য নই। কাজেই আপনারা এব্যবস্হা বন্ধ করে দিন। নতুবা এ মাদ্রাসার ভীষণ দুর্নাম হবে যে,এমন অযোগ্য দের কে পাগড়ী প্রদান করা হয়েছে।

হযরত থানভী রহ. এর কথা শুনে ইয়াকুব নানূতবী রহ. অত্যন্ত জোশের সাথে বলে উঠেন যে, তোমাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এখানে যেহেতু তোমাদের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন, এজন্য তোমরা তোমাদের নিজ মর্যাদা বুঝতে পারছ না। আর ছাত্রদের মন-মানসিকতা এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু যখন তোমরা এ প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যত্র যাবে তখন নিজ মর্যাদা বুঝতে পারবে সত্যিই পরবর্তীকালে তার এ ভবিষ্যৎ বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়।

উল্লেখ্য, কুতুবুল আলম রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. থানভী রহ. এর মাথায় পাগড়ী পরিধান করিয়ে দেন। এবং তার জন্য বিশেষ দুআ করেন।

একটি বিশেষ গুণ

থানভী রহ. এর বিশেষ গুণ এই ছিল যে,পাঠ্য জীবনে কারো সাথে মিলামিশা করতেন না। অহেতুক আড্ডা দিয়ে মুল্যবান সময় অপচয় করতেন না।

হয়ত কিতাব মুতালায় ব্যস্ত থাকতেন, নতুবা অবসর হলে ইয়াকুব নানূতবী রহ. এর খিদমতে বসে থাকতেন। দেওবন্দ শহরে তার অনেক আত্মীয় স্বজন থাকা সত্ত্বেও তারা বারবার পিড়াপিড়ি করা সত্ত্বেও তিনি পড়া নষ্ট হবে ভেবে কখনো তাদের বাসায় যেতেন না এবং বলতেন যে, আমার পিতা আমাকে এখানে পড়ার জন্য পাঠিয়েছেন, বেডানোর জন্য নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ