মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
শায়খ আব্দুর রহমান আল আরিফী। অসাধারণ বক্তৃতায় বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন তিনি। ইসলামের বাণীকে মানুষের সামনে ফুটিয়ে তুলছেন চমৎকারভাবে। সৌদি আরবের বিখ্যাত এ শায়খ শুধু আরব দেশেই নয়; সারাবিশ্বের সব মানুষের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আলোচিত বক্তা। তার বক্তৃতায় মানুষ খোঁজে পায় ইসলামের বাণী। ইসলামের সরল- সঠিক পথ। তিনি অসাধারণ যৌক্তিক বয়ানের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাছাড়া তিনি শুধু বক্তৃতা দিয়েই মানুষের কাছে সমাদৃত নয়; দারুণ লিখনি দিয়েও মন জয় করেছেন বিশ্ববাসীর। তার লিখিত অসংখ্য বই পরিণত হয়েছে বেস্ট সেলারে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার বই। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে এই পর্যন্ত বিশ্বের ৫১ টি ভাষায় তার বই অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে তার বয়সও এখন ৫১ বছর। আমাদের বাংলা ভাষায়ও অসংখ্য বই অনুবাদ হয়েছে তার। rokomari.com এর ওয়েবসাইট আব্দুর রহমান আল আরিফী ২০টির মত রয়েছে।
শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফী পবিত্র ভূমি সৌদি আরবের একজন মুসলিম লেখক ও বিশ্বখ্যাত দাঈ ও ২১ শতকের মুসলিম পণ্ডিত। তিনি সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ এবং মুসলিম স্কলারদের অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। সোশ্যাল সাইট টুইটারে তাকে অনুসরণ করছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) মানুষ। আর ফেসবুক একাউন্টে রয়েছে ২৪ মিলিয়নেরও বেশি লাইক। শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফীর টুইটার অ্যাকাউন্টটি বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় ১০০ তম স্থানে রয়েছে। আর আরব বিশ্বে ও মধ্য প্রাচ্যে ১০ তম স্থানে রয়েছেন তিনি। বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির দাবি, তিনি একজন ‘ভেরিফাইড ইসলামি পন্ডিত’।
শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০ সালের ১৬ জুলাই। ইসলামের বিখ্যাত সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. এর বংশধর তিনি। জন্মের মাত্র ৫১ বছর বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছেন আরব জাহানের বিশিষ্ট বক্তা ও লেখক। তিনি তার বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে আরবসহ পশ্চিমা বিশ্বে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
মিশরীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়ে আরব বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের রাষ্ট্রপতি মুরসিও আল-আরিফীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।
শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফী সৌদি আরবের একমাত্র মুসলিম স্কলার, যাকে সৌদি ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ অত্যন্ত সমীহ করেন। অসাধারণ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি যখন সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য জিহাদ করাকে আবশ্যক ফতোয়া দিলেন, তখন সৌদি আরবে শুরু হয় ‘সৌদি ভিশন ২০৩০’। এ ভিশন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সৌদি বাদশাহ তার সাথে আলোচনায় বসেন।
সৌদি আরবে সরকার বিরোধী কোনো আলেম ইন্তেকাল করলে সহজে শোক প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু সৌদির বিখ্যাত আলেম সালমান আল-আওদার ছেলে ও তার স্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন শায়খ আল-আরিফী। এছাড়া শায়খ আবদুল রাজ্জাক আল-মাহদী, নাবিল আল-আওয়াদী, তারিক আব্দুল হালিম ও হানি আল-সিবাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়াও শায়খ আদনান আল-অরুর, আব্দুল আজিজ আল-ফওজান, মোহাম্মদ আল-আরেফ, আবদুল-আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ আল শায়খ এর মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করেছেন তিনি।
সরকার বিরোধী এসব আলেমের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করায় শায়খ আল-আরিফীর টুইটার অ্যাকাউন্টটি ২০১৮ সালে সাময়িক স্থগিতও করা হয়েছিল। সেই সময় কিছুদিন জনসমক্ষে তাকে কম দেখা গিয়েছিলো। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার একাউন্টটি সচল করে দেয়া হয়। পাশাপাশি তাকে জানানো হয়, যে আল-আরিফী সৌদি সরকার কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রয়েছেন। তার কার্যক্রমগুলো নিয়মিত গুপ্তচর ডিভাইস ও ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুসরণ করা হচ্ছে।
[caption id="" align="aligncenter" width="503"] শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফী, ছবি: উইকিপিডিয়া[/caption]
শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফী দাম্মাম শহরে বেড়ে ওঠেছেন। সেখানেই প্রথম পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। তারপর তিনি আল-সামহৌদি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য আবেদন করেন।
তিনি সমসাময়িক মতবাদ ও ধর্মের ফান্ডামেন্টালগুলিতে পিএইচডি ডিগ্রী ও থিসিসি করেছেন। তিনি ২০০১ সালে শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরিনের উপর আইনশাস্ত্র ও একত্ববাদ নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ২০০২ সালে শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে আউদের উপর গবেষণা করেন। এরপর ২০০২-২০০৩ সালে শায়খ আবদুর রহমান বিন নাসের আল-বারাকের উপর আইনশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করেন। এছাড়া শায়খ আবদুল করিম আল-লাহিমের উপর আইন, শায়খ আবদুর রাজ্জাক আল-আফিফি ও শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উথাইমিনের উপর ফকীহ বিষয় নিয়েও অধ্যয়ন করেন তিনি।
তার উস্তাদদের মধ্যে হলেন, বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল, শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে কুউদ, শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বাররাক প্রমুখ। তিনি প্রায় পনেরো-ষোলো বছর ইবনে বায রহ. এর সাথে থাকার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
শায়খ আব্দুর রহমান আল-আরিফীর জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর দাওয়াত দেওয়া। তাকে অনেক সময় ‘দাওয়াত ইল্লাল্লাহ’ বলেও সম্বোধন করা হয়। তার বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা করার মূল কারণও এটি। তার বক্তৃতার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে পুরো মুসলিম বিশ্ব।
ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী বইও রচনা করেছেন মানবজাতির কল্যাণার্থে। তার বইগুলোর প্রত্যেকটিই বিক্রির সময় একটি আরেকটিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী রচিত ও বাংলা ভাষায় অনুদিত কয়েকটি বই: ভার্সিটির ক্যান্টিনে, সুখময় জীবন উপভোগ করুন, তুমি সেই নারী, নবী-চরিত্রের আলোকে: জীবন উপভোগ করুন, রাগ করবেন না: হাত বাড়ালেই জান্নাত, কিতাবুল ফিতান, রোজা ও হজ্জের পয়গাম, নারী যখন রানী, তোমাকে বলছি হে বোন, আপনার যা জানতে হবে, রামাদান আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক করুন, যেভাবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকবেন প্রভৃতি।
এমডব্লিউ/