ইয়াহইয়া বিন আবু বকর।। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৮৫% পানির উৎস দখলে নিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা৷ ফলে পান ও চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেনা পশ্চিম তীরের অধিবাসীরা৷
বর্তমান পশ্চিম তীরের পূর্ব আগওয়ার অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা জন প্রতি দৈনন্দিন ২৫ লিটার করে পানি ভাগে পাচ্ছে, পক্ষান্তরে অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইহুদিরা জন প্রতি ভাগে পাচ্ছে ৩৭০ লিটার পানি৷ এভাবে জমীনগুলো বাজেয়াপ্ত করলে এবং পানির উৎগুলো থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলে অন্তত ১০৪ কিলোমিটার জায়গা ইহুদিদের দখলে যাবে৷ যা তারা বসতী স্থাপন ও চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করবে৷ এভাবে পুরো পশ্চিম তীরকে তারা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে৷
পশ্চিম তীরের দক্ষিণে অবস্থিত বাইত আল লাহম৷ আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর ‘ আসলো’ নামক এক চুক্তি হয়৷ এরপর ইসরায়েল সেনারা এ অঞলটিকে সংরক্ষিত এলাকা নাম দিয়ে জোর জবরদস্তি করে একে একে ফিলিস্তিনিদের পানির উৎস ঝর্ণা, নালা, কূপ ইত্যাদী দখল করে নিচ্ছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন সময় তারা পানির নালায় বিষাক্ত পদার্থ ঢেলে পানি নষ্ট করে দিচ্ছে৷
বাইত আল লাহামের পশ্চিমে হুসান পল্লিতে উচু পাহাড় ঘিরে ‘ওয়াদিল উয়ূন’ নামে একটি উপত্যকা রয়েছে৷ পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে এ উপত্যকা দিয়ে বয়ে গেছে ১০টি নালা৷ এ ঝর্ণাটি ফিলিস্তিনিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ফসলি জমীন সিঞ্চন এ ঝর্ণার পানির উপর নির্ভর করে৷ ঝর্ণাটির নিচের উপত্যকাগুলো সুন্দর ও সবুজ শ্যামল এবং উর্বর৷ উপত্যকাটিতে ফিলিস্তিনিদের অনেক বিস্তর জমীন রয়েছে৷ ঝর্ণার কাছাকাছি হওয়ায় জমীনগুলো খুবই উর্বর৷ কিন্ত বর্বর ইসরায়েলি সেনারা জমীনগুলো তাদেরকে চাষ করতে দেয়না৷
জমীনগুলোতে অবৈধ বসতীস্থাপনকারীদের বসতী স্থাপন করার জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছে৷ এবং জমীন চাষের অধিকার প্রদান সহ চাষাবাদে সুবিধার জন্য এর চার পাশ ঘিরে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে৷ এ ছাড়াও তাদের পা মজবুত করার জন্য সেখানে কল-কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷
গতকাল (বুধবার ২৮ জুলাই) আলজাজিরার এক শাক্ষাতকারে হুসান ভিলেজ কাউন্সিলের প্রধান মুহাম্মাদ সাবাতিন বলেন, ইসরায়েল সেনাদের মতলব হলো এ ভূখণ্ডে অধিক পরিমানে বসতী স্থাপন করে এখানকার পানির উৎগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া৷ সন্দেহ নেই তারা তাদের কূপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং এখানের ঝর্ণাগুলো দখলে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে৷ তা না পারলেও অন্তত ঝর্ণাগুলো ব্যবহার করার সুযোগ খুঁজবে৷ অথচ এ ঝর্ণাগুলোই এখন আমাদের জীবিকার উৎস৷
আলজাজিরার আরেক শাক্ষাতকারে বিশিষ্ট কৃষিজিবী মুহাম্মাদ ইউনুস বলেন, এখানকার ঝর্ণাগুলো বহুকাল পূর্ব থেকে ফিলিস্তিনিরা ব্যবহার করে আসছে৷ এখানকার পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা ও পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের শৈশবের হাজারো স্মৃতি৷
পানি পান, চাষাবাদ ও পশুদের পানি পান করানোর জন্য আলাদা আলাদা নালা রয়েছে৷ এগুলো আমাদের হাতছাড়া হলে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হবে৷
হামামিরা নামক আরেক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে ‘জায়নবাদী যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে আলজাজিরাকে বলেন, দখলদার সেনারা ফিলিস্তিনের বাইত আল লাহম অঞ্চলকে পুরোপুরিভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এজন্য তারা অনেকগুলো পানির উৎস নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে৷ বাকি উৎসগুলোও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলেও তারা সেটেলমেন্ট ট্যুরিজমকে ব্যবহার করবে এবং সার্বক্ষনিকভাবে অঞ্চলটিকে পর্যবেক্ষণে রাখবে, যাতেকরে ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়৷
১৯৬৭ সালে ৭০০ টি ঝর্ণা ফিলিস্তিনিদের দখলে ছিলো৷ এখন আছে তিনশো'র ও কম৷ এভাবে দখলদাররা তাদেরকে পানি কিনতে পরিশেষে পিপাসায় মরতে বাধ্য করবে৷
১৯৯৫ সালে আরব ইসরাঈল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা ও ইস্রায়েলের মধ্যে ‘অসলো’ চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীরের জমিগুলিকে তিনটি অঞ্চলে শ্রেণিবদ্ধ করেছে: A, এ অঞ্চলটা ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে৷ b. এঅঞ্চল থাকবে ইসরায়েলী নিয়ন্ত্রণে৷ c, এটা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের নিয়ন্ত্রণে৷ কিন্ত ইসরায়েলী সেনা এ চুক্তি ভঙ্গ করে ফিলিস্তিনিদের অংশ দখল করা শুরু করে দিয়েছে৷ এবং অসংখ্য বাড়ি ঘর ও মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে৷
সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষ এই বছর জেরুজালেমের ২০০টির বেশি বাড়িঘর ভেঙে দেয়, যার অধিকাংশ ফিলিস্তিননিদেরকে নিজ হাতে ভাঙ্গতে বাধ্য করে৷ এছাড়াও ৩৮৯ টি বাড়ি বাজেয়াপ্ত করে৷ ফলে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার গৃহচ্যুত হয়৷
আরবী ‘ইউ এন নিউজ’ , আলজাজিরা ও আল কুদসের তথ্যানুসারে ২০০৪থেকে নিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে ১১১১শো’র ও বেশি বাড়িঘর তারা ভেঙে দেয়৷
দখলদার ইসরায়েলিদের এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে ১৬৭০ এরও বেশি শিশু সহ প্রায় ৩১২০ ফিলিস্তিনি নাগরিক গৃহচ্যুত হয়েছিল। এবং জমী বাজেয়াপ্ত করেছে ( ফিলিস্তিনের হিসাব মতে) ২৪ হাজার ৫ শত ডুনামেরও বেশি৷ এক ডুনাম ইংরেজি হিসাবে এক হাজার মিটারের একটু বেশি৷
জেরুসালেমে দখলদার কর্তৃপক্ষ এই বছরের শুরু থেকেই দশ প্রধান পরিবারকে তাদের হাত দিয়ে বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে। এবং বসতী স্থাপনের কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করে দেয়৷ সূত্র: আলজাজিরা এবং আরবী ইউ এন নিউজ ও আলকুদস
-এটি