বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করতে এবার জলযুদ্ধে নেমেছে ইসরায়েল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াহইয়া বিন আবু বকর।। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৮৫% পানির উৎস দখলে নিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা৷ ফলে পান ও চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেনা পশ্চিম তীরের অধিবাসীরা৷

বর্তমান পশ্চিম তীরের পূর্ব আগওয়ার অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা জন প্রতি দৈনন্দিন ২৫ লিটার করে পানি ভাগে পাচ্ছে, পক্ষান্তরে অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইহুদিরা জন প্রতি ভাগে পাচ্ছে ৩৭০ লিটার পানি৷ এভাবে জমীনগুলো বাজেয়াপ্ত করলে এবং পানির উৎগুলো থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলে অন্তত ১০৪ কিলোমিটার জায়গা ইহুদিদের দখলে যাবে৷ যা তারা বসতী স্থাপন ও চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করবে৷ এভাবে পুরো পশ্চিম তীরকে তারা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে৷

পশ্চিম তীরের দক্ষিণে অবস্থিত বাইত আল লাহম৷ আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর ‘ আসলো’ নামক এক চুক্তি হয়৷ এরপর ইসরায়েল সেনারা এ অঞলটিকে সংরক্ষিত এলাকা নাম দিয়ে জোর জবরদস্তি করে একে একে ফিলিস্তিনিদের পানির উৎস ঝর্ণা, নালা, কূপ ইত্যাদী দখল করে নিচ্ছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন সময় তারা পানির নালায় বিষাক্ত পদার্থ ঢেলে পানি নষ্ট করে দিচ্ছে৷

বাইত আল লাহামের পশ্চিমে হুসান পল্লিতে উচু পাহাড় ঘিরে ‘ওয়াদিল উয়ূন’ নামে একটি উপত্যকা রয়েছে৷ পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে এ উপত্যকা দিয়ে বয়ে গেছে ১০টি নালা৷ এ ঝর্ণাটি ফিলিস্তিনিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ফসলি জমীন সিঞ্চন এ ঝর্ণার পানির উপর নির্ভর করে৷ ঝর্ণাটির নিচের উপত্যকাগুলো সুন্দর ও সবুজ শ্যামল এবং উর্বর৷ উপত্যকাটিতে ফিলিস্তিনিদের অনেক বিস্তর জমীন রয়েছে৷ ঝর্ণার কাছাকাছি হওয়ায় জমীনগুলো খুবই উর্বর৷ কিন্ত বর্বর ইসরায়েলি সেনারা জমীনগুলো তাদেরকে চাষ করতে দেয়না৷

জমীনগুলোতে অবৈধ বসতীস্থাপনকারীদের বসতী স্থাপন করার জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছে৷ এবং জমীন চাষের অধিকার প্রদান সহ চাষাবাদে সুবিধার জন্য এর চার পাশ ঘিরে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে৷ এ ছাড়াও তাদের পা মজবুত করার জন্য সেখানে কল-কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷

গতকাল (বুধবার ২৮ জুলাই) আলজাজিরার এক শাক্ষাতকারে হুসান ভিলেজ কাউন্সিলের প্রধান মুহাম্মাদ সাবাতিন বলেন, ইসরায়েল সেনাদের মতলব হলো এ ভূখণ্ডে অধিক পরিমানে বসতী স্থাপন করে এখানকার পানির উৎগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া৷ সন্দেহ নেই তারা তাদের কূপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং এখানের ঝর্ণাগুলো দখলে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে৷ তা না পারলেও অন্তত ঝর্ণাগুলো ব্যবহার করার সুযোগ খুঁজবে৷ অথচ এ ঝর্ণাগুলোই এখন আমাদের জীবিকার উৎস৷

আলজাজিরার আরেক শাক্ষাতকারে বিশিষ্ট কৃষিজিবী মুহাম্মাদ ইউনুস বলেন, এখানকার ঝর্ণাগুলো বহুকাল পূর্ব থেকে ফিলিস্তিনিরা ব্যবহার করে আসছে৷ এখানকার পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা ও পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের শৈশবের হাজারো স্মৃতি৷
পানি পান, চাষাবাদ ও পশুদের পানি পান করানোর জন্য আলাদা আলাদা নালা রয়েছে৷ এগুলো আমাদের হাতছাড়া হলে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হবে৷

হামামিরা নামক আরেক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে ‘জায়নবাদী যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে আলজাজিরাকে বলেন, দখলদার সেনারা ফিলিস্তিনের বাইত আল লাহম অঞ্চলকে পুরোপুরিভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এজন্য তারা অনেকগুলো পানির উৎস নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে৷ বাকি উৎসগুলোও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলেও তারা সেটেলমেন্ট ট্যুরিজমকে ব্যবহার করবে এবং সার্বক্ষনিকভাবে অঞ্চলটিকে পর্যবেক্ষণে রাখবে, যাতেকরে ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়৷

১৯৬৭ সালে ৭০০ টি ঝর্ণা ফিলিস্তিনিদের দখলে ছিলো৷ এখন আছে তিনশো'র ও কম৷ এভাবে দখলদাররা তাদেরকে পানি কিনতে পরিশেষে পিপাসায় মরতে বাধ্য করবে৷

১৯৯৫ সালে আরব ইসরাঈল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা ও ইস্রায়েলের মধ্যে ‘অসলো’ চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীরের জমিগুলিকে তিনটি অঞ্চলে শ্রেণিবদ্ধ করেছে: A, এ অঞ্চলটা ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে৷ b. এঅঞ্চল থাকবে ইসরায়েলী নিয়ন্ত্রণে৷ c, এটা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের নিয়ন্ত্রণে৷ কিন্ত ইসরায়েলী সেনা এ চুক্তি ভঙ্গ করে ফিলিস্তিনিদের অংশ দখল করা শুরু করে দিয়েছে৷ এবং অসংখ্য বাড়ি ঘর ও মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে৷

সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষ এই বছর জেরুজালেমের ২০০টির বেশি বাড়িঘর ভেঙে দেয়, যার অধিকাংশ ফিলিস্তিননিদেরকে নিজ হাতে ভাঙ্গতে বাধ্য করে৷ এছাড়াও ৩৮৯ টি বাড়ি বাজেয়াপ্ত করে৷ ফলে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার গৃহচ্যুত হয়৷
আরবী ‘ইউ এন নিউজ’ , আলজাজিরা ও আল কুদসের তথ্যানুসারে ২০০৪থেকে নিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে ১১১১শো’র ও বেশি বাড়িঘর তারা ভেঙে দেয়৷

দখলদার ইসরায়েলিদের এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে ১৬৭০ এরও বেশি শিশু সহ প্রায় ৩১২০ ফিলিস্তিনি নাগরিক গৃহচ্যুত হয়েছিল। এবং জমী বাজেয়াপ্ত করেছে ( ফিলিস্তিনের হিসাব মতে) ২৪ হাজার ৫ শত ডুনামেরও বেশি৷ এক ডুনাম ইংরেজি হিসাবে এক হাজার মিটারের একটু বেশি৷

জেরুসালেমে দখলদার কর্তৃপক্ষ এই বছরের শুরু থেকেই দশ প্রধান পরিবারকে তাদের হাত দিয়ে বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে। এবং বসতী স্থাপনের কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করে দেয়৷ সূত্র: আলজাজিরা এবং আরবী ইউ এন নিউজ ও আলকুদস

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ