।।নুরুদ্দীন তাসলিম।।
মঙ্গলবার ২০ জুলাই সকাল আটটায় নরসিংদীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের অন্যতম জনপ্রিয় ও তরুণ নাশিদ শিল্পী মাহফুজুল আলম। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।
তরুণ টগবগে নাসিদ শিল্পীর এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না নেটিজেন ও সঙ্গীতাঙ্গনের মানুষজন। শোকে মুষরে পড়েছেন তারা। সমবেদনা জানিয়েছেন শোকে মুহ্যমান তার পরিবারের প্রতি। অনেকেই শেয়ার করেছেন মাহফুজ আলমের সাথে তাদের ব্যক্তিগত আনন্দ স্মৃতি। সবার শোক স্মৃতিতে উঠেছে এসেছে প্রিয় বন্ধুকে হারানোর বেদনা।
অনেকেই বলেছেন, মাহফুজের মৃত্যু আমাদেরকে আরো একবার এই রঙ্গশালা ভুলে আখেরাতের প্রস্তুতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
২৩ বছর বয়সী টগবগে তরুণ মাহফুজ মাত্র গত বছরে হারিয়েছেন তার বাবাকে। এক বছরের মাথায় তিনিও বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। পরপর স্বামী ও তরুণ ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গেছেন মাহফুজের দুখিনী মা।
মাহফুজ আলমের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করে আওয়ার ইসলাম সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব লিখেছেন,‘স্নেহের মাহফুজ না বলেই চলে গেলে। ভালো থাকবে। শান্তিময় হোক তোমার আখেরি ঘুম’।
মাহফুজ আলমকে স্মরণ করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইসলামি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ আবৃত্তি শিল্পী ও উপস্থাপক শাহ ইফতেখার তারেক লিখেছেন, ‘আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। স্নেহের মাহফুজ (কলরব শিল্পী)-এর ইন্তেকাল আমাকে শিখিয়ে গেল, চলে যাওয়াটা হয় বিনা নোটিশেই। বিনয়ী, আবেগী, হাস্যোজ্জ্বল, স্বপ্নচারী মাহফুজের দুনিয়ার জীবনটা হলো খুব ছোট, আখিরাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার অবস্থান ও মর্যাদাকে করুন অনেক অনেক বড়’।
স্বপ্নসিঁড়ি সাংস্কৃতিক ফোরামের প্রধান পরিচালক হুমায়ুন কবির শাবীব নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘কিছু মানুষের চলে যাওয়া অনেক বেদনা ও কষ্টের। মাহফুজুল আলম তার কর্মদক্ষতায় সাংস্কৃতিক অঙ্গন যে সমৃদ্ধি লাভ করেছে সেটা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আল্লাহ তুমি মাহফুজকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নাও, এবং তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দাও আমি।'
কলরবের সিনিয়র নাশিদ শিল্পী ও হলি টিউনের প্রধান নির্বাহী মুহাম্মদ বদরুজ্জামান গত কোরবানি ঈদে মাহফুজ আলমের সাথে কোরবানির গোস্ত কাটার একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘গত কুরবানি ঈদে আমরা একসাথে ছিলাম, নামাজ এবং কুরবানি একসাথে আদায় করেছিলাম। ওর নিজের পক্ষ থেকে গতবারই প্রথম কুরবানি করেছিল। এ জন্য আনন্দ ছিল প্রচুর । আমি জানি, এখন আমাদের চেয়ে বেশি ভালো আছে সে । মহান আল্লাহ্ আরও বেশি ভাল রাখুক । আমিন ’।
গীতিকার, সুরকার ও জনপ্রিয় নাশিদ শিল্পী আবু সুফিয়ান স্নেহের মাহফুজুল আলমের সঙ্গে তোলা বেশ কিছু ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেন, কতই না অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে তোর সাথে, আমরা বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ হয়ে আছি। ভালো থাকিস উপরে..।
কলরবের আরেক নাশিদ শিল্পী আবু রায়হান লিখেছেন, `জীবন ভর তোমার এই শোক বয়ে বেড়াতে হবে। কত পথ একসাথে চলেছি,কত গান গেয়েছি একই স্টেইজে। আর সেই তুমি এই কোলাহল ছেড়ে হঠাৎ চলে গেলে।প্রিয় মাহফুজ! ভাবতেই অবাক লাগে তুমি আজ আর নেই। ওপারের দেশে দয়াময় তোমাকে অনেক ভালো রাখুক'।
এছাড়াও মাহফুজুল আলমের সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করে সাংবাদিক মোস্তফা ওয়াদুদ লিখেছেন, ... ছোটো ভাইকে শিল্পী বানাতে চেয়েছিলাম। সে উপলক্ষে কলরবের অফিসে যাওয়া। আহ! আজ শুনলাম মাহফুজুল আলম আর নেই। খবরটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। আল্লাহ তায়ালা মাহফুজকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন’।
এদিকে আরেক তরুণ সাংবাদিক কাউসার লাবীব বাল্যকালের বন্ধু মাহফুজকে নিয়ে নিজের ওয়ালে দীর্ঘ স্মৃতি চারণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ... মাহফুজ জনপ্রিয় নাশিদ শিল্পী। কাজের ফাঁকে প্রায়ই তার নাশিদ শুনতাম। তার গাওয়া বাবা গানটি আমার মোবাইলে রিংটোন হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে বহু আগে। আজও বেশ কয়েকবার মোবাইলে কল এসেছে। বেজে উঠেছে মাহফুজের গাওয়া সেই গান। কিন্তু মাহফুজ নেই আমাদের মাঝে। আর কখনো তার সঙ্গে দেখা হবে না; এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। প্রিয় মানুষগুলো বুঝি এভাবেই না বলে চলে যায়!...
মাহফুজ আলমের ইন্তেকালে সংগীত জগতের বাইরেও তরুন নেটিজেনদের আরো অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।
-এনটি