শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সাফল্যগাঁথা এক মাদরাসা পড়ুয়া নারী উদ্যোক্তার গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর

জীবনের তাগিদে মানুষ কত কিছুই না করে। জীবন হলো নদীর স্রোতের ন্যায়। স্রোত যেমন কখনো থেমে থাকে না। তেমনি জীবন নামের এ স্রোত বয়ে চলে আপন গতিতে। সে দেখেনা কারো কাঁদন। সে শোনে না কারো কাঁদন। মানে না কারো বাঁধন। বুঝে না কারো বারণ। বরং সে ছুটে আপন স্রোতধারায়।

জীবনের পরতে পরতে মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়। নিজেকে বাঁচাতে, নিজের পরিবার বাঁচাতে কাজ করতে হয়। সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই নানারকমের কাজে নামতে হয় আমাদের। জীবন নামের এই গল্পের ছোঁয়া কাউকে কাঁদায়। কাউকে হাসায়। কাউকে ভাবায়। কাউকে বা আবার মনে করিয়ে দেয় পেছনে ফেলে আসা নানা স্মৃতি। ফুটে উঠে নিজ জীবনের প্রতিচ্ছবি।

আজ আপনাদের শোনাবো এমনই একজন নারীর জীবন কাহিনী। যিনি নিজের সন্তান, পড়াশোনা, আল্লাহ তাআলার ফরজ বিধান পর্দা, দৈনন্দিন ইবাদতসহ সবকিছুর পরেও তার জীবনকে চালাচ্ছেন একজন উদ্যোক্তা হয়ে। তিনি করেছেন একটি গরুর খামার। যে খামারে সময় দিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত নিজের সন্তানদের মতোই গৃহপালিত পশু লালন-পালন করেন। চলুন ওই নারী উদ্যোক্তার মুখ থেকে শুনে আসি তার জীবন গল্পের ইতিবৃত্ত।

তিনি বলেন, আমি হাটহাজারী থেকে মাদরাসায় পড়াশোনা করেছি। আমি কওমি লাইনে পড়েছি। এখনো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছি। এগুলো সব করেছি আমার বাচ্চা (সন্তান) হওয়ার পর। আমি আমার বাচ্চাদের যেভাবে লালন-পালন করেছি। সেভাবেই আমার এই মনু (গরুকে নারীর দেওয়া নাম) কে লালন-পালন করেছি।No description available.তিনি বলেন, আমার জীবন অনেক কষ্টের। আমি হাটে গরু আনার পর অনেক কাস্টমার পেয়েছি। কিন্তু যথার্থ দাম না পাওয়ায় এখনো বিক্রি করতে পারিনি। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। কিন্তু করোনাকালে ওইভাবে মানুষের বাসায়ও যাওয়া যাচ্ছে না। নামাজও ওভাবে পড়তে পারছিনা।

এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমি আমার এই গরুটি সারাবছর লালন পালন করেছি কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির জন্য। আমার কাছে আরও তিনটি গরু আছে। এ বছর একটি গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি।

একজন নারী হয়ে কিভাবে আপনি গরু বিক্রির জন্য হাঁটে চলে এলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এ নারী বলেন, এই গরুটি আনতে আমি দুজন লোককে ঠিক করেছিলাম। যেদিন ঢাকায় আসার জন্য গরু গাড়িতে তুলবো, সেদিন ১০ মিনিট আগে আমাকে ফোন করে বললো তারা, আপা! আমরা তো আসতে পারবো না। তখন আমি বিপাকে পড়ে গেলাম। তারপরও যেহেতু এটাকে কষ্ট করে লালন পালন করেছি। তাই এর শেষ সময় পর্যন্ত সঙ্গে থাকতে আমি নিজেই চলে এসেছি।No description available.তিনি বলেন, যদি আমি গরুটিকে বিক্রি করতে পারি তাহলে আমি বাড়ি গিয়ে আমার বাচ্চাদের সাথে ঈদ করতে পারব। স্বাচ্ছন্দ্যে কাটবে আমার জীবন। স্বাবলম্বি হতে পারবো আমি।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মাদরাসা পড়ুয়া নারী উদ্যোক্তা গরু বিক্রির জন্য গরুর হাটে নিয়ে আসার পর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি তার গরুর সাথে গাবতলী মাঠে অবস্থান করছেন। সে ভাইরাল ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

গরু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে আমার গরুর গোশত হবে ১১২০ কেজি। প্রায় ২৮ মণ। তিনি এর দাম হাঁকছেন ২০ লক্ষ টাকা। তবে দাম বলার সুযোগ রাখছেন। এখনো পর্যন্ত গরুটিকে বিক্রি করতে পারেননি তিনি।

ভাইরাল এ মাদরাসা পড়ুয়া নারী উদ্যোক্তা এসেছেন কুষ্টিয়া জেলার হালসা ভেদামারী এলাকা থেকে। তিনি তিন বছর যাবত এই গরুটিকে লালন-পালন করেছেন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ