।।মুফতি আবদুল মাজিদ।।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। লেখাটি শুরু করছি প্রসিদ্ধ তাবেই ইমাম যুহরী (মৃত ১২৫) সম্পর্কে আমর ইবনে দিনারের (মৃত ১২৬) একটি উক্তি দিয়ে-
‘আমি পয়সাকে তার কাছে যত অবমূল্যায়িত হতে দেখেছি, তেমনটি আর কারো কাছে দেখিনি। মূলত অর্থ তার কাছে উটের লাদের মতোই মূল্যহীন ছিল।’
হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.কে যদি হযরত আমর ইবনে দিনার দেখতেন; তাহলে হয়তো বলতেন ইমাম যুহরীর মত হয়তো আরেকজনকে দেখেছি।
কারণ সম্পদ অর্জন হুজুরের আশির্দ্ধো জীবনের কোনো এক মিনিট সময় তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। ফলে যাকাত ফিতরার হাজারো হাদিস পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এই ‘মালি ইবাদতগুলো’ (আর্থিক ইবাদাত) আদায়ের কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি তার। তাই নবীদের মতো তার ইলমের ওয়ারিশ থাকলেও সম্পদের ওয়ারিশ তার মোটেও ছিল না।
সমসাময়িক নীতিহীনতার চেতনায় পুষ্ট দুনিয়ালোভী রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ধারার প্রতি তার ব্যাপক ঘৃণা ছিল। বিশেষ করে যারা ক্ষুধাকে জয় করতে যেয়ে আদর্শের গলায় ছুরি চালিয়েছে। তাই তার প্রসিদ্ধ উক্তি ‘তোমরা দুনিয়া হাসিলের জন্য দীনকে (আদর্শ) বিক্রি করো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা মসনদ কে বিদায় জানিয়ে উপোস করে মাসুম বাচ্চাদেরকে নিয়ে দিন যাপন করেছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদার গলা টিপে তাকে হত্যা করে এ কষ্টের উপলব্ধি কারো কাছে প্রকাশ করেননি। যিনি সুস্থ হওয়ার পরও অর্থাভাবের কারণে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় আসতে বিলম্ব হয়েছে; কিন্তু কাউকে তা জানতেও দেননি, নীতিহীনতার কাছে পরাজয় মেনে নেননি।
বড় দুঃখের বিষয় সে অভিমানি বজ্র-সদৃশ চরিত্রটির পাশে গিয়ে সময় থাকতে আমরা বসলাম না, বললাম না , খবর নিলাম না।কীর্তিমান মানুষের অবমূল্যায়নের আধার কাটার জন্য যে জোছনার আলোর প্রয়োজন, তার সাথে কি আমাদের আদৌ সাক্ষাৎ হবে? না তার আগেই দ্বীনের এই ধ্রুবতারা গুলো খসে যাবে? (চলবে)
[লেখকের বই ‘মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. : তরঙ্গায়িত সমুদ্রের নির্ভীক নাবিক’ থেকে নেয়া।]
-কেএল