মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
উস্তাদ নুমান আলী খান। বিশ্বখ্যাত আমেরিকান দায়ী। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন ইসলামি বক্তা। নুমান আলী খান ধর্মীয় যুক্তিতর্কের জন্য মুসলিমদের নিকট বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে তিনি ‘দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর অ্যারাবিক অ্যান্ড কুরআনিক স্টাডিজ’ এর সিইও এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর হেড অফিস আমেরিকাতেই। এর আগে তিনি নাসাঊ ইউনিভার্সিটি কলেজে আরবির অধ্যাপক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।
আমেরিকাসহ সারাবিশ্বের মুসলিদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় বক্তা তিনি। তার ইসলামিক জ্ঞান ও যুক্তি-তর্ক দ্বারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। আমেরিকা ছাড়াও সারাবিশ্বেই তার অনেক ভক্ত রয়েছে। সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে তার ফলোয়ার সংখ্যা ২.৬ মিলিয়ন (২৬ লাখ)। তবে সেখানে তিনিও ২৬ জনকে ফলো করছেন।
তার ফলোয়ারদের তালিকায় আছেন আফগানিস্তানের কাবুলে অবস্থিত সাউথার্ন মেথোলিস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বশির আব্দুন নাসেরী, বিশ্বখ্যাত দাউদ কীম, ড. বশির আহমদ আনসারী, পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ মোজামম্মেলসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও আরও একাধিক ইসলামিক লেকচারার।
তিনি নেটিজেনদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে ইসলামী মতামত তুলে ধরেন। অল্প কথায় খুব সুন্দরভাবে যে কোনো বিষয় ফুটিয়ে তুলতে পারেন তিনি। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ছোট ছোট শব্দে তার ইংরেজি আলোচনা মুগ্ধ করে ভক্তদের। তিনি বেশিরভাগ সময়ে ইংরেজিতে বক্তৃতা করেন। তবে তাকে কখনো আরবিতেও বক্তৃতা করতে দেখা যায়।
কুরআনের চমৎকার শৈল্পিক সৌন্দর্য উপস্থাপনার জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। কুরআনের শব্দচয়ন কতটা সৃজনশীল, ভাষা কতটা মনোমুগ্ধকর, অর্থ কতটা যৌক্তিক- এগুলোই নুমান আলী খানের চিন্তাভাবনা ও আলোচনার বিষয়। তাঁর বক্তব্যে কুরআনের অন্তর্গত সৌন্দর্য ও মুজিযা মানুষের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার ও অনলাইনে তাঁর বক্তব্য শুনে অসংখ্য মানুষ ইসলামের দিকে ফিরেছেন ও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রায় ২০টিরও অধিক তাফসীর গ্রন্থের রেফারেন্স দেন তার আলোচনায়। ফলে কুরআন নাযিলের ইতিহাস, শব্দচয়নের কারণ, ভাষার অলঙ্কার, অর্থের গভীরতা, যুক্তির প্রখরতা ও ব্যাকরণগত শুদ্ধতার বিষয়গুলো তাঁর আলোচনায় ফুটে উঠে। অনেক ইসলামী স্কলার নুমান আলী খানকে আল কোরআনের ভাষাবিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কুরআন নিয়েই তার আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে। তার আলোচনাতে হাদিসের তেমন উদ্ধৃতি পাওয়া যায় না। এজন্য তিনি কখনো কখনো সমালোচিতও হোন। তবে নেটিজেনদের কেউ কেউ মনে করেন, তিনি কুরআন নিয়ে গবেষণা করেছেন-তাই কুরআনভিত্তিক আলোচনা তুলে ধরেন। তবে হাদিসের প্রতি তার কোনো বিরুপতা নেই। বরং তার আলোচনায় কখনো হাদিসের রেফারেন্সের প্রয়োজন হয়নি-তাই তিনি দেননি। তবে সম্প্রতি এ অভিযোগেরও কিছুটা ভাটা এসেছে। ইদানিংকালে তার আলোচনাতে কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেরও উদ্ধৃতি দিতে দেখা গেছে।
উস্তাদ নুমান আলী খানের জনপ্রিয়তার উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ‘দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ টির পঞ্চম সংষ্করণে নুমান আলী খানকে কোন র্যাংঙ্কিং ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের মধ্যে একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
নুমান আলী খানের বক্তৃতার ধরণ বা এক্সপ্লেইনেশন বেশ চমৎকার! তিনি সমালোচিত বিষয়ে কথা কম বলেন। কারো বিষয়ে বিদ্বেষ ছড়ান না। তবে নেটিজেনরা তার খারাপ সাইটগুলো শুনতে চান না। তারা শুধু ভালো সাইটগুলো গ্রহণ করতে চান।
তিনি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচিত হয়েছিলেন। তার বিরূদ্ধে একাধিক নারীর সাথে আপত্তিকর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠেছিলো। যা নিয়ে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে লেখালেখি হয়। সে সময় পাকিস্তানে তাকে নিষিদ্ধের অভিযোগও উঠে। কিন্তু পরিশেষে তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এদিকে নুমান আলী খান অবশ্য কখনই নিজের কৃতকর্মকে অসামাজিক কার্যালাপ বা অপরাধ বলে স্বীকার করেননি।
তার বিরুদ্ধে আনীত নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেছিলেন, প্রকাশিত হওয়া স্ক্রিনশটে তার সাথে হওয়া নারীদের মধ্যকার কথোপকথন ছিল ‘সম্মতি প্রদানকারী প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যকার কথোপকথন’। এছাড়াও নুমান দাবী করেন, তিনি সেই নারীদের বিবাহ করার চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন।
নুমান আলী খান ১৯৭৮ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সেসময় পাকিস্তানি কূটনীতিক হিসেবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা উভয়েই পাকিস্তানি হলেও নুমানের পাকিস্তানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কল্যাণে সৌদি আরবে ৬ বছর বসবাস করার পর আমেরিকায় চলে আসেন নুমান।
এরপর থেকে আমেরিকাতেই থাকছেন এই ধর্মীয় বক্তা। ধর্মীয় শিক্ষায় তার হাতেখড়ি হয়েছিল সৌদি আরবেই। এরপর আমেরিকাতেই তিনি চালিয়ে গেছেন ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষা। বর্তমানে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে বসবাস করছেন তিনি।
তার রচিত ‘ডিভাইন স্পিচ: এক্সপ্লোরিং কুরআন অ্যাজ লিটারেচার’ বই মুসলিম বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলা একটি বই। এ বই তাকে লেখক এবং ধর্মীয় যুক্তিবিদ হিসেবেও খ্যাতি এনে দিয়েছে। এছাড়াও, ‘প্রশান্তির খোঁজে’ এবং ‘বন্ধন’ বইগুলোও রয়েছে নোমান আলী খান এর বই সমগ্রতে।
এমডব্লিউ/