কাজী আব্দুল্লাহ ।।
ইরাক যুদ্ধের প্রধান ঘাতকদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড (৮৮) মারা গেছেন। তিনি দু’দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার পর তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ মূল প্রস্তাবক ছিলেন।
বুধবার তার পরিবার নিশ্চিত করেছে যে, ডোনাল্ড রামসফেল্ড নিউ মেক্সিকোর তাওস শহরে নিজের বাড়িতে মারা গেছেন। তিনি ৬ দশকের ওপরে সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জন্য তার ব্যতিক্রমী অবদানের জন্য ইতিহাস তাকে মনে রাখবে বলে বলা হয়েছে পারিবারিক বিবৃতিতে।
রামসফেল্ডের মৃত্যুর সংবাদে সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ তাকে একজন বুদ্ধিমান, সৎ এবং অফুরান শক্তিধর মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বুশ বলেন, তিনি ছিলেন সরকারি দায়িত্বে উদাহরণ। তিনি কখনো দায়িত্বকে অবহেলা করেননি।
তার প্রত্যক্ষ উস্কানিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, ইরাকের ক্ষমতাসীন সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত আছে। এই অভিযোগে তারা ইরাকে আগ্রাসন চালিয়ে সেখানকার মাটিকে তামার মতো করে দিয়েছে। এরপর থেকে আর কখনোই ইরাকে শান্তি ফেরেনি।
দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। কিন্তু ওই যে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের মজুতের অভিযোগে হামলা চালানো হলো, সেই অস্ত্র এখন পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সারাবিশ্বের মিডিয়ায় রিপোর্টের পর রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধ শুরুর তিন বছর পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন রামসফেল্ড। তিনি নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অটল ছিলেন। কিন্তু তার সিদ্ধান্তকে অনেক বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা মনে করেন, তার সিদ্ধান্তের কারণে ইরাক এবং বৃহত্তর পশ্চিমা অঞ্চলে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে যখন ছিনতাই করা বিমান পেন্টাগনে হামলা করে, এর এক মাসেরও কম সময় পরে আল কায়েদার বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে ওই হামলার জন্য দায়ী করা হয়। এ জন্য আফগানিস্তানে আল কায়েদা এবং তালেবানদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তালেবান সরকারের পতন ঘটে।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি দেয় ইরাকের দিকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ওই হামলা চালানোর সঙ্গে ইরাকের কোনো ভূমিকাই ছিল না। ডোনাল্ড রামসফেল্ড তখন এই বলে যুক্তি দেখান যে, ইরাকের হাতে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে। এসব অস্ত্র বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক। এই যুক্তিতে তিনি ইরাকে হামলা চালান।
কিন্তু ইরাকে সেই অস্ত্র না পাওয়া যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন রামসফেল্ড। উল্টো রাজধানী বাগদাদের বাইরে আবু ঘ্রাইব কারাগারে বন্দিদের ওপর মার্কিন সেনাদের নৃশংস নির্যাতনের ছবি প্রকাশ হয়ে পড়ে মিডিয়ায়। এ সময় ২০০৪ সালে আরো বিতর্কিত হয়ে পড়েন রামসফেল্ড। একই সঙ্গে কিউবায় গুয়ান্তানামো বে’তে মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে আটক রাখা সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদেশিদের ওপর নির্যাতনের খবরেও ব্যাপক সমালোচিত হন রামসফেল্ড।
দায়িত্ব ছাড়ার পরও নিজের অবস্থানের পক্ষেই অটল থাকেন তিনি। ২০১১ সালে লেখেন একটি স্মৃতিকথা ‘নোন অ্যান্ড আননোন’। এতে তিনি ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গান। সূত্র: বিবিসি
-এটি