নুরুদ্দীন তাসলিম।।
রাজধানীর মগবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণ আলেম উপস্থাপক ও ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বাদ এশা প্রিয়জনদের অশ্রুসিক্ত জানাজা শেষে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার যশরা ইউনিয়নের মধ্য যশরা গ্রামে নিজ এলাকায় নানার বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
তরুণ এই প্রতিভাকে শেষ বিদায় জানাতে তার জানায় নামে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। জানাজায় অংশ নেওয়া সবাই ছিলেন শোকে স্তব্ধ। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকেই।
পরিবারে ৩ ভাইয়ের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন সবার বড়। বড় ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা তার ছোট দুইভাই। তাদের শান্ত্বনা দেওয়া ভাষা যেন নেই কারো কাছে। বন্ধুদের মতো এলাকার মানুষজনের মুখেও একই কথা- মোস্তাফিজ ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী প্রাণোবন্ত এক তরুণ।
আরো পড়ুন: ‘বাবা চাইতেন ছেলে যাবে প্রবাসে, মোস্তাফিজের ছিল দেশেই ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী হওয়ার স্বপ্ন’
মোস্তাফিজর বাবা থাকতেন দেশের বাইরে। তিনি চাইতেন ছেলে তার সাথে দেশের বাইরে গিয়ে স্বাবলম্বী হবে। কিন্তু মোস্তাফিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল দেশে থেকেই ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে বেশ এগিয়ে ছিলেনও তিনি।
মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ‘আহকামুল জুমা’ অনুষ্ঠানটি সরসারি সম্প্রচার হতো প্রতি শুক্রবার। এছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন রেডিও একাত্তরের ‘ইসলাম ও আমরা’ নামে একটি অনুষ্ঠানও।
আরো বিভিন্ন জায়গায় তিনি উপস্থাপনা বিষয়ক কোর্স করাতেন। টেলিভিশনে রমজান মাসব্যাপী জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আলোকিত কোরআন’ ও ‘সময়ের সেরা হাফেজ’ প্রোগ্রামগুলোর সমন্বয়কারী ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তরুণ আলেম মুস্তাফিজুর রহমান দাবানল শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান উপস্থাপক ছিলেন। তিনি রেডিও ধনিতে ‘আহকামুল জুমা’ ও রেডিও একাত্তরে জীবন ঘনিষ্ঠ প্রশ্ন উত্তর মূলক অনুষ্ঠান ‘ইসলাম ও আমরা’ -এর সঞ্চালনা করতেন।
সন্ধ্যায় মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
আরো পড়ুন: মগবাজার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তরুণ আলেম উপস্থাপক মুস্তাফিজুর রহমান
জানা গেছে, হাসপাতালে নেওয়ার আগে তিনি নিজেই বাসায় ফোন করে জানান তার আহত হওয়ার খবর। এরপর ঢাকা মেডিকেল থেকে খোঁজ মেলে মৃত মুস্তাফিজুর রহমানের।
দুর্ঘটনায় নিহত সবার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন নেটিজেনরা। তবে অল্প বয়সেই তরুণ বিনয়ী মুস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর খবর যেন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তার পরিচিতজনরা। শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন অনেকেই।
ইসলামি মিডিয়া অঙ্গনের নবীন, প্রবীণ অনেকেই তরুণ এই প্রতিভার মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর মগবাজারে রবিবার (২৭ জুন) রাতে রাখি নীড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৫ জন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জনের চিকিৎসা চলছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আহতদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে মো. নূর নবী (৩০), ইমরান হোসেন (২৫) ও মো. রাসেল (২১) বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে রয়েছেন। আর ঢামেকের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে আছেন শিক্ষক এসএম কামাল হোসেন (৬২)।
চিকিৎসাধীন অন্য চার জন হলেন— আবু কালাম কালু (৩৩) ও জাফর আহামেদ (৬১) বার্ন ইনস্টিটিউটে, আর হৃদয় (২৮)ও সুভাষ সাহা (৬২)ঢামেকে আছেন।
আরো পড়ুন: তরুণ আলেম মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুতে শোকে কাতর সোশ্যাল মিডিয়া
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন সোমবার (২৮ জুন) বলেন, ‘আমাদের এখানে তিন জন ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জন নিউরোসার্জারি বিভাগে, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে একজন ও একজন ক্যাজুয়ালটি বিভাগে।’ তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে দুই জনের অপারেশন করা হয়েছে। বাকিদেরকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
ডা. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বেশীর ভাগ রোগীর কাচের কাটাসহ হেড ইনজুরি রয়েছে। শামীম নামে আরেক রোগীকে নিউরো সার্জারিতে ভর্তি রাখা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি, সোমবার দুপুরের দিকে ভর্তির ফাইল রেখে তিনি চলে গেছেন।’
অপরদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঁচ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন জনই আইসিইউতে আছেন। তাদের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এই তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি দুই জন আছেন জেনারেল ওয়ার্ডে।
এনটি