সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘বাবা চাইতেন ছেলে যাবে প্রবাসে, মোস্তাফিজের ছিল দেশেই ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী হওয়ার স্বপ্ন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণ আলেম উপস্থাপক ও ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ( ঢামেক) থেকে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদ এশা জানাজা শেষে গফরগাঁও-এ নিজ গ্রাম জসরায় তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।

আওয়ার ইসলামকে এ তথ্য জানিয়েছেন, দাবানল শিল্পী গোষ্ঠীর দায়িত্বশীল মাওলানা কাউসার আহমেদ সোহাইল।

তিনি জানান, গতকাল রাত ৩ টায় ঢামেকের মর্গে মৃত অবস্থায় খোঁজ পাই মোস্তাফিজুর রহমানের। পোস্টমর্টেম শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হবে। পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে সফল না হওয়ার কথা জানান তিনি।

আরো পড়ুন: তরুণ আলেম মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুতে শোকে কাতর সোশ্যাল মিডিয়া

এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি জানান, ‘মোস্তাফিজের কানে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তাই ডাক্তার দেখাতে বের হয়েছিল সে। দুর্ঘটনার সময় শর্মা হাউজের ঠিক সামনে গাড়ীতে বসে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, এসময় ভবনের বিস্ফোরণে গাড়ির কাঁচ তার কানে আঘাত করে। আহত হওয়ার পরে সে নিজেই  বাড়িতে ফোন করে জানায় তার অবস্থা।

পরিবারে ৩ ভাইয়ের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন সবার বড়। বাবা থাকতেন দেশের বাইরে। তিনি চাইতেন ছেলে তার সাথে দেশের বাইরে গিয়ে স্বাবলম্বী হবে। কিন্তু মোস্তাফিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল দেশে থেকেই ইসলামি সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। বাবা এজন্য মাঝেমধ্যে মৃদু রাগারাগিও করতেন। তবে ছেলের এভাবে চলে যাওয়া কোনভাবেই মানতে পারছেন না তিনি। করোনা মহামারি, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ। তাই দেশে আসতে পারেননি তিনি। শেষ মুর্হূতেও দেশে থেকে ছেলেকে দেখতে না পরায় মোস্তাফিজের বাবা এখন শান্ত্বনা খুঁজছেন চোখের অশ্রুতে।

প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার একটি তিনতলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে এক শিশু ও তার মাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ৫০ জনের ওপর আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেকের জরুরি বিভাগেই নেওয়া হয়েছে ৩২ জনকে এবং বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় ১৭ জনকে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

উল্লেখ্য, তরুণ আলেম মুস্তাফিজুর রহমান দাবানল শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান উপস্থাপক ছিলেন। তিনি রেডিও ধনিতে ‘আহকামুল জুমা’ ও রেডিও একাত্তরে জীবন ঘনিষ্ঠ প্রশ্ন উত্তর মূলক অনুষ্ঠান ‘ইসলাম ও আমরা’ -এর সঞ্চালনা করতেন।

সন্ধ্যায় মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে  ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

জানা গেছে, হাসপাতালে নেওয়ার আগে তিনি নিজেই বাসায় ফোন করে জানান তার আহত হওয়ার খবর। এরপর ঢাকা মেডিকেল থেকে খোঁজ মেলে মৃত মুস্তাফিজুর রহমানের।

দুর্ঘটনায় নিহত সবার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন নেটিজেনরা। তবে অল্প বয়সেই তরুণ বিনয়ী মুস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর খবর যেন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তার পরিচিতজনরা। শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন অনেকেই।

ইসলামি মিডিয়া অঙ্গনের নবীন, প্রবীণ অনেকেই তরুণ এই প্রতিভার মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

আরো পড়ুন: মগবাজার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তরুণ আলেম উপস্থাপক মুস্তাফিজুর রহমান

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ