রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ফ্রান্স: পথশিশু হয়েছিলেন রাজা, আর ম্যাক্রঁ খেলেন নাগরিকের থাপ্পড়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। বিভিন্ন কারণেই প্রায় সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। সম্প্রতি নিজ দেশের এক নাগরিকের হাতে প্রকাশ্যে থাপ্পড় খেয়েছেন তিনি।

এর আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ করে এক কার্টূন প্রকাশের জেরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা হয়েছিলো তার। এরপর এবার জনতার থাপ্পড় খেয়ে আবার এলেন আলোচনায়।

ফ্রান্স এমনি এক দেশ। যে দেশে ভালো-মন্দ উভয়েরই বিনিময় মিলে। যার প্রকৃত উদাহরণ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ আর বহু আগের এক রন্ধনরাজা ‘মারি আঁতোয়ান কারেম’। যিনি পথশিশু থেকে হয়েছিলেন ফ্রান্সের রন্ধনরাজা।

সে অনেকদিন আগের কথা। ফরাসি বিপ্লবের পাঁচ বছর আগে দিনমজুর বাবা-মায়ের ঘরে চৌদ্দ সন্তানের পর জন্ম নিলো আরও এক অনাহূত সন্তান। বাবা-মা নাম রাখলেন মারি আঁতোয়ান কারেম। ১৭৮৪ সালের ৮ জুন প্যারিসের এক বস্তিতে, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয় সে। কে জানতো পরবর্তীতে সেই হবে ফ্রান্সের রাজা? না! এটা মোটেও রূপকথা নয়, বানানো কোনো গল্পও নয়। একটি সত্যিকারের কাহিনি।

আঁতোয়ানের যখন আট বছর বয়স, তখন সন্তানদের খাবার জোটাতে অক্ষম পিতা নিজে সঙ্গে করে তাঁকে দূরে এক রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসেন। তারপর থেকে আর কোনো দিন পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। আজন্ম সে হয়ে যায় পথশিশু।

এরপর তার বয়স যখন মাত্র তেরো। তখন হঠাৎ করেই ভাগ্যের আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ কেটে যেতে শুরু করে। তিনি আয়ত্ত করতে লাগলেন প্যারিসের ঐতিহাসিক ‘শেফ’ বানানোর কাজ। ধীরে ধীরে তিনি বনে গেলেন ফরাসি রন্ধনশিল্পের আকাশে দ্যুতি ছড়ানো মানিক।

তার হাতেই তৈরি হতে লাগলো ফরাসি রন্ধনশৈলী, নানারকম রন্ধনপ্রণালি। ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত, করিতকর্মা এবং কর্মঠ ছিলো সে। চমৎকার সব গুণের জন্য অল্পদিনের মধ্যেই অনেকের সুনজর কাড়তে সমর্থ হয় এ বালক। বিশেষ করে প্যারিসের নামকরা কেক-পেস্ট্রি প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা সিলভান বেয়ই তাঁকে খুব পছন্দ করেন। মারি আঁতোয়ানকে তাঁর পেস্ট্রি শপে নিজের হাতে কাজ শেখাতে শুরু করেন। সিলভান এই বিস্ময় বালকটির মধ্যে আলো দেখেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন, সুযোগ পেলে একদিন সে দ্যুতি ছড়াবে।

এরপর তার রাঁধুনিতে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশী মেহমানদের আপ্যায়নের দায়িত্ব দেন তাকে। সতেরো বছর বয়সে এ চমৎকার  দায়িত্ব পেলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

এক সময় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে ইউরোপের রাজারা এক নামেই তাঁকে চিনতেন, সমাদর করতেন। মাথায় মুকুট না নিয়েই রন্ধনশিল্পের রাজার মুকুটটি ছিল তাঁর মাথাতেই। তাঁকে উপাধি দেওয়া হলো ‘রাজার শেফ, শেফের রাজা’ এবং তিনি প্রথম ব্যক্তি, যিনি এমন অসামান্য সম্মানের শিরোপা অর্জন করেছিলেন। প্রাচুর্য, অর্থ, খ্যাতি তাঁর নিত্যসঙ্গী। এক সময় বনে যান তিনি ফরাসি দেশের রাজা।

রাস্তা থেকে উঠে এসে প্রবল ইচ্ছাশক্তি, সংসক্তি, পরিশ্রম আর বিস্ময়কর প্রতিভার আলোকে জীবনকে করেছেন অর্থবহ, সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন তিনি। স্থান করে নিয়েছিলেন একেবারে রাজার আসনে। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, পথশিশু থেকে হয়েছিলেন রন্ধনরাজা।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ