রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


এনআইডি কার্যক্রম কেন নিজের কাছে রাখতে চায় ইসি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকা উচিৎ বলে মনে করেন কমিশনাররা। এই নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার বিষয়ে সরকারের জারি করা নির্দেশনার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে তারা এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এই বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে আজ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের কার্যক্রম স্থানান্তরের জটিলতা তুলে ধরা হয়।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কর্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকার পক্ষে চিঠিতে ৭ টি বিষয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. ভোটার তালিকার ডাটাবেইজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নির্বাচন কমিশন কনস্ট্রাকশন অব সার্ভিস স্টেশন ফর দ্য ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ- সিএসএসইডি প্রকল্পের মাধ্যমে ইউএনডিপি ও সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ভৌত অবকাঠামোসহ ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ সার্ভার স্থাপন করে। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এসকল ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে।

২. সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ নির্বাচন কমিশনকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মধ্য হতে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগসহ বিভিন্ন সমন্বয় কমিটি ও বিশেষ কমিটির গঠন করা হয়। এসব কমিটির তত্বাবধানে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে নিয়োগকৃত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও টিম লিডারের মাধ্যমে বয়োমেট্রিকস ডাটা সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। উপজেলা/থানা পর্যায়ে এই ডাটা সংগ্রহ ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবছর তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থাকে এ ধরনের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়নি। ফলে অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থার পক্ষে সকল মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে এ ধরনের মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হবে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২ মোতাবেক উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার রেজিস্ট্রেশন অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

৩. বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ সুচারু ও নির্ভুলভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অনুদানে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুতের জন্য মাঠ পর্যায়ের সকল অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ‘এএফআইএস ম্যাচিং সিস্টেম’ সহ ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এসকল অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে। মাঠপর্যায়ে অফিসসহ কেন্দ্রীয় ডাটাবেজসমূহের জনবল, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংশোধন, ভোটার এলাকা পরিবর্তন, মৃত ভোটার কর্তন ও ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ ইত্যাদি কাজের জন্য অপরিহার্য অবকাঠামো ছাড়া নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যাস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। এ সকল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইভিএম ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যাস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে এ সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য ডাটা প্রসেসিং, ম্যাচিং এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কাগজে ছাপানো লেমিনেটেড পরিচয়পত্র তৈরি করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এর আলোকে স্থায়ী ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে চিপস সহ প্লাস্টিক স্মার্ট কার্ড তৈরি করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভোটার তালিকার জন্য তথ্য ব্যবহার করে বিদেশি একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্মার্ট কার্ডগুলো ছাপিয়ে সরবরাহ করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র কয়েকটি প্রিন্টার ব্যবহার করে স্মার্ট ছাপানো হচ্ছে।

বর্তমান পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানের নিকট অর্পণ করা হলে নতুন করে মাঠ পর্যায় হতে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অবকাঠামো প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রয়োজন হবে, যা ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ।

৪. জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা কোন জনবল নির্বাচন কমিশনে নেই। ভোটর তালিকা প্রণয়নের জন্য থাকা জনবল ডাটা প্রসেসিং করে, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বিক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তারা স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ করছেন। এসকল কর্মকর্তা ২০০৮ সাল থেকে এ কাজের সাথে জড়িত। এই দীর্ঘ ১২ বছর সময়কালে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ ও পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত আলাদা কোন জনবল না থাকায় এ সকল কার্যক্রম অন্যকোন মন্ত্রণালয়ের নিকট ন্যাস্ত করা হলে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের বিশাল একটি জনবলের প্রয়োজন হবে, যা ব্যয় সাপেক্ষ। একইসাথে তারা দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে না উঠলে জাতীয় পরিচয়পত্রের মত একটি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনের সাথে চুক্তির অধীনে প্রায় ১৪৮টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের নিকট ন্যাস্ত করা হলে সেবা প্রদান বিঘিœত হওয়াসহ আইনানুগ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৬. জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে ২০০৯-২০১০ সালেও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে একটি সংস্থা কাজ শুরু করলেও উপরে বর্ণিত কারণসমূহের জন্য তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের নিকট রয়ে যায়। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০ এর মাধ্যমে এর কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের নিকট ন্যাস্ত করা হয়।

৭. উপরোক্ত বিষয়গুলো জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবস্থাপনায় যে কোন পরিবর্তন আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। এসকল বিষয় বিবেচনায় আনা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রাখা সমীচিন হবে মর্মে নির্বাচন কমিশন মনে করে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর