রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে টিকটক: মুফতি সাইফুল ইসলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাইফুল ইসলাম। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার মসজিদ-উত-তাকওয়ার খতীব। মাদরাসাতুল কলমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। সাড়া জাগানো সাধারণ জ্ঞানের টিভি শো ‘আলোকিত জ্ঞানী’র উপস্থাপক ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

বর্তমানে টিকটক, লাইকির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের সুপথে ফিরতে ও ফেরাতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।।


-টিকটকসহ ভাইরাল এ্যাপগুলো বর্তমানে যুব সমাজকে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন করছে বলে আপনি মনে করেন?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: যেভাবে চায়নার উহান থেকে করোনা এসে পুরো পৃথিবীকে একটি বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। ঠিক তেমনি এই ‘টিকটক’এ্যাপও মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত এই ভাইরাল এ্যাপগুলোর মাধ্যমে বর্তমানে যুব সমাজ ক্ষতির চূড়ান্ত স্তর একেবারে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে গেছে। অর্থাৎ করোনা যেভাবে মানুষকে মৃত্যুমুখে পতিত করছে ঠিক টিকটক, লাইকিও মানুষকে এক রকমের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে।

এই টিকটক, লাইকি, ভিগোর মাধ্যমে খুব কম সময়ে রাতারাতি জনপ্রিয়তা অর্জিত হয়। মাত্র ১৫ সেকেণ্ডের ভিডিওটিতে বেশি ভিউ পেয়ে ভাইরাল হওয়া যায়। এর মাঝে হেন কোন কাজ নাই, যা করা হয় না।

আমাদের চোখের সামনেই তো মাঝে মাঝে হঠাৎ এসকল বিষয়গুলো চলে আসে। তখন আমরা হতবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে, আমাদের বাংলাদেশের ছেলেদের এই অধঃপতন, যুব সমাজ কিংবা মেয়েদের এই অধঃপতন কবে থেকে শুরু হল?

-টিকটক কিংবা ডিভাইস বিনোদনের পেছনে কেনো ছুটছে তরুনরা? দাযী কারা?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: আসলে এটা আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন যে, আমাদের বাচ্চারা কেন এখন একটা টাচ স্কিনের ভিতরে তাদের বিনোদন খুঁজে বেড়াচ্ছে। সন্তানগুলো কেন মোবাইল, টেলিভিশন ও ডিভাইসকেই তাদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে ফেলেছে? এটার জন্য আসলে আমরা দায়ী। সমাজ দায়ী।

এটা এভাবে যে, প্রথমত আমাদের সন্তানদের আমরা পর্যাপ্ত পরিবেশ দিতে পারিনি। তাদের জন্য যে পরিবেশ দেয়া দরকার সে পরিবেশ দিতে পারিনি। তাদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বা মাঠের দরকার, সুন্দর পরিবেশ দানের দরকার, সেটা কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য দাযী আমরাই।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে যে, যেহেতু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। তাদের কোন পড়াশোনা নেই। কোনো ব্যস্ততা নেই। অথচ তাদের কাজ দরকার। যখন তারা কোনো কাজ পায় না তখনই ডিভাইসের টিকটক, লাইকিতে সময ব্যয় করে। এই জন্য আসলে সন্তানদের পড়ালেখার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখা প্রয়োজন।

আমার মনে হয়, রাষ্ট্রের যারা কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা বিবেচনা করবেন প্রথমত সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য। ভাল কাজে তাদের সময়গুলো ব্যয় করানোর জন্য। মোটকথা, এখন সময় এসেছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ার।

তৃতীয়ত যে বিষয়টি বলব সেটা হচ্ছে, বাচ্চাদের খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা উচিত। এদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ খেলাধুলা বিনোদন এটা তাদের এক ধরনের অধিকার। সন্তানদের অধিকার আছে খেলাধুলা করার। অভিভাবকদের উচিত তাদের সে অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এটা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।

আসলে বাচ্চাগুলো কি করবে? দেয়ালের মধ্যে থেকে থেকে তারা অন্যদিকে ধাবিত হবে-এটা স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের এ ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।

-টিকটক, লাইকির মতো এ্যাপগুলোকে কী ইসলামের জন্য ব্যবহার করা যায়? বা এর কোনো প্রক্রিয়া হতে পারে কী?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: অবশ্যই হতে পারে। আর আমরা দেখেছি যে, টিকটকের মাঝে অনেকে ইসলামিক ক্লিপও ছাড়েন। যেগুলো অনেকেই দেখে। আসলে ডিভাইসের তো কোন দোষ নেই। সে সাথে এ্যাপের তো কোন দোষ নেই। দোষটা হচ্ছে আমাদের বা ব্যবহারকারীদের। আমরা যদি এটার ভালো ব্যবহার করি তাহলে এটা ভালো। আর যদি মন্দ ব্যবহার করি তাহলে এটা খারাপ।

এজন্য আসলে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। তরুণ-তরুণীদের সচেতন করা উচিত। আর অভিভাবকদের বিশেষ করে সচেতন থাকা উচিত। কেননা আমাদের সচেতনতার অভাবেই এই পরিবেশ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

-এসব এ্যাপ থেকে যুব সমাজকে কিভাবে ফেরানো যেতে পারে?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে আমাদের মা-বাবাকে। আমাদের সমাজের অভিভাবকদেরকে। মা-বাবার খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের সন্তান আসলে কি করে? কোথায় যায়? দেখা যায় বাচ্চারা এসে বিভিন্ন রকমের কথা বলে ঘর থেকে বের হচ্ছে, কিন্তু আমরা কোন খোঁজ-খবর নিচ্ছি না। এই সময়গুলো সে কোথায় কাটায়? কিভাবে কাটায়? এই বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে। অভিভাবকরা তার সন্তানের প্রতি সচেতন হতে হবে। না হয় এর জন্য খেসারত দিতে হবে।

পাশাপাশি আমাদের সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা এখন রাস্তাঘাটে টিকটক, লাইকিতে যেভাবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ক্লিপ তৈরি করা হয়; দেখা যায়, কেউ কিছু বলে না। কেউ কোনো বাধা দেয় না। কেমন যেন এ বিষয়ে কারো কোন দায় নেই। এটা হতে পারে না। আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো, যেটা অসত্য, যেটা অসুন্দর, যেটা নোংরা, যেটা অশ্লীল সেটা যেখানেই হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে। এসব বিষয়ে আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। এটার উপর ভিত্তি করে আমি একটি ফতোয়া লিখেছিলাম অনেক আগে।

-এসব থেকে বাঁচতে এ্যাপগুলো বন্ধ করা কী সমাধান হতে পারে?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: আসলে বন্ধ করা কোনো সমাধান নয় বরং বন্ধ না করে চাইলে যুব সমাজকে বুঝিয়ে ইসলামের পক্ষে কাজ করানো যেতে পারে। কারণ আজকে টিকটক চলে গেলে আগামীকাল আরেকটা আসবে। এরপর আরেকটা আসবে। এভাবে আসতেই থাকবে। তো আপনি ঠিক কয়টা বন্ধ করবেন? বরং বন্ধ না করে যদি তাদের বুঝানো যায়, তাহলে তারা এসবের মাঝেও ইসলাম প্রচার করবে এবং অপসংস্কৃতিকে প্রমোট করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা আমরা যদি আমাদের মানসিকতা বা চিন্তা-চেতনা পরিশুদ্ধ করতে পারি তাহলে যেটাই আসুক, সেটাকেই আমরা সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে শিখব।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর