মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞ আলেম। বিশ্বের অন্যতম সেরা ইসলামী স্কলার, পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুফতি তকি উসমানি লিখিত কুরআনের বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাওজীহুল কুরআন’ এর সফল বঙ্গানুবাদক। দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার’ সিনিয়র মুহাদ্দিস। তিনি একজন সমাজ সচেতন ও রাষ্ট্রচিন্তক আলেমেদীন। তার লিখিত বইগুলোতে নজর বুলালেই তার সম্পর্কে ধারণা পাবেন পাঠকবৃন্দ। দেশসেরা খ্যাতিম্যান এ আলেম ‘নবীন আলেমদের কর্মসংস্থান তৈরি’ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন আওয়ার ইসলামের সাথে। পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকার তুলে এনেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।।
- মসজিদ-মাদরাসার বাইরে তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?
মাওলানা আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম: প্রথমত নবীন আলেমদের খেদমতকে মসজিদ-মাদরাসার বাইরেও ছড়িয়ে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা শুধু মসজিদ-মাদরাসা নিয়ে তারা পড়ে থাকবেন কেনো? বরং যার যে যোগ্যতা আছে, যে বিষয়ে তার প্রতিভা আছে, সেই বিষয়ে তিনি কাজ করবেন। নিজের মেধাকে বিকশিত করবেন।
আর নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে যে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে তা হলো, বৈধ যত পন্থা আছে, সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদের কর্মসংস্থান তৈরির ফিকির করা উচিত। এক্ষেত্রে নবীন আলেমদের প্রধান ভূমিকা অবলম্বন করতে হবে। তারা কেবল এই দুই জায়গায় (মসজিদ-মাদ্রাসায়) পড়ে থাকবেন- এটা ঠিক না। বরং তার পক্ষে যা করা সম্ভব তাই সে করবে।
এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ যদি আমি বলি তাহলে দেখা যাবে যে, তারা ব্যবসার লাইনে মেহনত করতে পারেন। কারিগরি লাইনে মেহনত করতে পারেন। কেউ যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তাহলে হতে পারেন। টেকনিক্যাল বিষয়ে যদি কারো নলেজ থাকে সেদিকেও সে নিজেকে মেলে ধরতে পারে।
অর্থাৎ যে বিষয়ে তার যোগ্যতা আছে, অভিজ্ঞতা আছে, সে বিষয়ে তিনি নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখবেন। এটা কোন দোষের কিছু নয়। বরং এটা আরো ভালো ও উত্তম কাজ। মোটকথা সে দেখবে সে কি পারে? কি কাজ করার মত যোগ্যতা তার ভেতরে আছে? সততার ভিতরে যা করার যোগ্যতা আছে সেই যোগ্যতাকেই তার কাজে লাগানো উচিত।
-নবীন আলেমদের যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দিবেন আপনি?
মাওলানা আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম: এটা যদি একা সম্ভব হয় তাহলে ভালো। একা করবে। সম্মিলিত করাটা ততো বেশি সুবিধাজনক মনে করি না। এরকম কিছু অভিজ্ঞতা আমার নজরে আছে যে, সম্মিলিত কাজ করতে গিয়ে তারা সফল হতে পারেনি। পরবর্তীতে একসাথে কাজ করতে পারেনি। মোটকথা একাকী কাজ করাটাই তার জন্য বেটার বা নিরাপদ। যদি সে আরো কয়েকজনকে নিয়ে মিলেমিশে উদ্যোক্তা হতে চায়, তাহলে তার মাঝে একটু প্রবলেমের সম্ভাবনা রয়েছে। এবং অভিজ্ঞতাও বলছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই হয়।
-নবীন ফারেগদের মাঝে কখনো একটি হতাশা কাজ করে যে, আমি এখন কি করবো? কর্মসংস্থান কোথায় হবে?তাদের এ হতাশা দূর করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মাওলানা আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম: এটা তো আসলে আমাদের একটি ব্যর্থতা যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তার উপার্জনের কোনো মাধ্যম গড়ে তুলতে পারিনি। তাকে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলতে পারিনি।
এক্ষেত্রে অবশ্য আরো একটি কথা আছে যে, ফারেগ হওয়ার পর সে আসলে হতাশ হয় কেন? সে কি ধরে নিয়েছে যে আমাকে মাদরাসায় পড়াতে হবে? অথবা মসজিদে খেদমত করতে হবে? এর বাইরে কোনো চিন্তা তার ভেতরে নেই? আর যখনই সে মাদরাসা-মসজিদে খেদমাত না পায়, তখনই সে হতাশ হয়ে পড়ে। এটা উচিত না। বরং এক্ষেত্রে সে হতাশ না ছোটখাটো যে কাজ পাবে সেটাই করবে। হালাল পন্থায়, বৈধ পন্থায় যে কাজ পাবে সেটাই করবে।
এক্ষেত্রে অনেকে আবার ভাবে যে, আমাকে কোন মানসম্মত কাজ করতে হবে। যখন মানসম্মত কাজ না পায়, তখন সে ঘোরাঘুরি করে। অথচ তার বুঝা দরকার, হালাল কাজ যদি মানসম্মসত না হয় তবুও ভালো। আর হারাম কাজ যদি মানসম্মতও হয় তবু সেটা খারাপ। মোটকথা, একজন নবীন আলেম ফারেগ হওয়ার পরে হতাশ না হয়ে হালাল পন্থায় যে কাজ পারবে, সে কাজে মনোযোগ দিবে।
-যারা মসজিদ-মাদরাসার বাইরে অন্য কোন কাজ করতে চায় তাদেরকে সমাজের অনেকেই তিরস্কার করে। এই তিরস্কারকারীদের বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
মাওলানা আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম: তিরস্কার যারা করছে তারা ঠিক করছে না। তাদেরকে বোঝানো উচিত যে, ইলমের খেদমতের অর্থ এই নয় যে, শুধু মাদরাসায়ই পড়াতে হবে! শুধু মসজিদেই খেদমত করতে হবে! ইলমের খেদমত করার জন্য মাদরাসায় পড়াতে হবে এটা জরুরি না। এর বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাঝে থেকেও ইলমের খেদমত করা যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সেক্টর হতে পারে। সে লেখালেখির মাধ্যমে ইলমের খেদমাত করতে পারে। ঘরোয়া বয়ানের মাধ্যমে ইলমের খেদমাত করতে পারে। ব্যক্তি গঠনের মাধ্যমেও সে সমাজে ইলমের খেদমতকে ছড়িয়ে দিতে পারে।
অর্থাৎ সে যাদের সঙ্গে চলবে তাদেরকে দীনের মৌলিক ইলমের সঙ্গে পরিচিত করবে। তাদেরকে জরুরিয়াতে দীন শিখাবে। ইসলামী আখলাক শিখাবে। ইসলামী আখলাকের যে ফাজায়েল আছে সেগুলো তাদের বলবে। মোটকথা একজন আলেমের কাছে তারা দীনের সব ধরনের জ্ঞান লাভ করবে। এটাও দীনেসর অনেক বড় খেদমাত।
-আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাওলানা আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
এমডব্লিউ/