রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় বেড়েছে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণ চেষ্টায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় রুলের শুনানিতে আদালত এ কথা বলেন। আদালত বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার হার কম। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হলে নির্যাতনের শিকার নারী এবং তাদের পরিবারে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

শুনানিতে পর্নোগ্রাফি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মোবাইল কোর্টের সাজা দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে এ সময় প্রশ্ন তোলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন।

গত বছরের ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার বেগমগঞ্জ উপজেলার ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীর বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দেন আদালত।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকছেন জেলা সমাজ সেবা অফিসার এবং চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজের অধ্যক্ষ। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই প্রতিবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি হয়।

আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক  বলেন, হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ জুন বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মামলার এজাহারে, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর (৩৫) ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় বাদল ও তার সংঘবদ্ধ বখাটে দল। ওই গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করে। ঘটনার ৩২ দিন পর গত বছরের ৪ অক্টোবর দুপুরের দিকে গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়। এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের।

ঘরে বসে ধর্ষণ মামলার শুনানি, সতর্ক থাকতে বললেন হাইকোর্ট: নিজের বাসায় থেকে ভার্চুয়ালি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলার শুনানির সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা যেন না শোনেন সে বিষয়ে আইনজীবীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন। শুনানির শুরু থেকেই দেবরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, প্রতিবেশীর হাতে ধর্ষণ, প্রেমের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলায় জামিন শুনানি গ্রহণ করেন আদালত।

এ রকম কয়েকটি মামলার শুনানি শেষে একপর্যায়ে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এ ধরনের মামলার শুনানি করছেন তারা পুরোপুরি আইসোলেটেড (আলাদা) থাকুন। বাসার অন্যরা যেন এসব না শোনে। এসব তো বাজে মামলা। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন সবাই? তখন সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহসহ অন্য আইনজীবীরা আদালতের পরামর্শকে সাধুবাদ জানান।

আদালত বলেন, এ কারণে বলছি যে এসব একেবারেই কোর্টের ব্যাপার। পরিবারের একেকজন শুনলে কে কীভাবে নেবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ বলেন, ঘরে বাচ্চারা শুনলে, ছেলেমেয়েরা শুনলে নিজের বিব্রত হতে হয়। আদালত বলেন, এসব মামলার শুনানির সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এরপর মামলার কার্যতালিকা অনুসারে অন্যান্য মামলার শুনানি শুরু করেন আদালত।

এনটি


সম্পর্কিত খবর