আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি মায়েদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে গাজা উপত্যকার বাতাস। ইসরায়েলি আগ্রাসনে খালি হচ্ছে একের পর এক মায়ের কোল। আহত হয়ে হাসপাতালেও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বহু শিশু।
সন্তানকে বুকে আগলে রেখে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অসহায় মায়েরা। দখলদার ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় পরিবারের ৬ সদস্যের আর কেউই বেঁচে নেই। ফিলিস্তিনি এক নারীর পরিবারের। শুধু এই এক নারীরই নয়, গেল কয়েকদিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বহু মায়ের বুক খালি করেছে। রেহাই পায়নি সদ্যজাত শিশুও। চলমান সহিংসতায় প্রায় অর্ধশত শিশুর ঠিকানা হয়েছে কবর।
সংঘাতে কোণঠাসা জীবনই যখন বাস্তবতা, তখন জন্ম থেকেই যোদ্ধা এক একটি ফিলিস্তিনি শিশু। পরিবারের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। টিকে থাকার লড়াইটা এখন চলছে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলভবনে। দশ হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।
ফিলিস্তিনি এক নারী জানান, আমাদের ভবনটাতেই হামলা হয়েছে। একদল বাচ্চা তখন ঘরের ভেতর। অন্তিম মৃহূর্তে ওই ভবন থেকে বের হতে পেরেছি আমরা। যে যেভাবে পেরেছি, ছুটে পালিয়েছি।
এক শিশু জানায়, চারপাশে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ছিল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমিও শুধু ছুটেছি। শেষে জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরে এসে আশ্রয় নেই। বাবা মা কাউকে খুঁজে পাইনি আমি। আর পাবো কিনা তাও জানি না।
হাসপাতালগুলোর দৃশ্য আরও মর্মান্তিক। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকায় স্বজনহারাদের আহাজারিতে ভারী ওঠে উঠেছে বাতাস। আর আহতদের মধ্যে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন যারা তাদের আর্তনাদ যেন থামবার নয়।
ফিলিস্তিনি এক যুবক বলেন, আমি বাইরে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণ শুরু হয়। বোমা আমার বাড়ির ছাদে পড়ে। বিধ্বস্ত ভবনের ভেতর থেকে সবাইকে উদ্ধার করা যায়। কিন্তু কোন অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছিলাম না। এখন আমার পুরো পরিবার হাসপাতালে। ওরা বেঁচেও যদি যায়, পঙ্গুত্ব বরণ করেই হয়তো কাটাতে হবে বাকি জীবন।
শুধু ফিলিস্তিনিরা নয়, হামাসের রকেট হামলায় প্রাণ হারিয়েছে একাধিক ইসরাইলি শিশুও। সংঘাতপূর্ণ ইসরাইলি অঞ্চল থেকে সন্তানকে বুকে আগলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন ইহুদী মা-বাবারাও। পরিস্থিতির অবনতি হলে পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে এই সংঘর্ষ। তাহলে সীমান্তের দুই পারের সাধারণ বেসামরিক নাগরিকরাই চরম মানবিক সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এমডব্লিউ/