আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৬ মাস যুদ্ধের চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইয্যাদ্দিন আল কাসসাম ব্রিগেড।
হামাসের রকেট হামলায় এক ইসরায়েলি নিহত হবার কয়েক মিনিট পর এ ঘোষণা দেয়া হয়।
কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেন, আল্লাহর সাহায্যে আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৬ মাস যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রেখেছি। গাজার আবাসিক ভবনে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের জন্য শিগগিরই বড় ধরণের পরিণতি অপেক্ষা করছে।
হামাসের ছোড়া রকেট ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবের রামাত গান এলাকার একটি ভবনে আঘাত হানে। এতে এক ইসরায়েলি নাগরিক নিহত ও কয়েকজন আহত হন। এ ছাড়া তেলআবিবের কাছে আরব টাউন, রিশন লিজন এলাকায়ও রকেট বিস্ফোরিত হয়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে রকেট হামলার ছবি টুইট করে জানানো হয়, তেলআবিব মেট্রোপলিটন এলকায় রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এটি মধ্য ইসরায়েলের রামাত গান আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরিত হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, গত সোমবার থেকে গাজায় আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনিরা।
খবরে বলা হয়, এ কয়দিন গাজা থেকে যেসব রকেট ছোঁড়া হয়েছে, তাতে পরিচিত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ও একই ধরনের রকেট ছোঁড়া হয়েছিল। তবে এবার রকেট ছোঁড়ার ধরন পাল্টেছে তারা।
উজি রুবিন নামের একজন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি ফিলিস্তিনি আগের প্রযুক্তিই ব্যবহার করছে। তবে এবারের রকেটগুলোর আকার ২০১৪ সালের চেয়ে ভিন্ন। এসব রকেটে ভারী ওয়ারহেড রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ইসরায়েলের মিসাইল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের সাবেক প্রধান।
হামাসের কাছে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে?
হামাসের কাছে কী পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আছে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল হারজগ বলেছেন, তাদের কাছে ৮-১০ হাজার রকেট থাকতে পারে। হারজগ এখন ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটে একজন ফেলো।
বৃহস্পতিবার হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু ওবায়দাহ জানান, তারা নতুন আইয়াশ ২৫০ নামে নতুন একটি রকেট ব্যবহার করেছে। এটা তেলআবিবের কাছে আঘাত করেছে। মাঝারি পাল্লার এই রকেটটি ১৫০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানিয়েছে হামাস।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, হামাস এবং ইসলামি জিহাদ কি পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছে তা সঠিকভাবে জানা কঠিন। তবে তাদের ভান্ডারে অস্ত্র বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। রুবিন বলেন, ২০১৪ সালের চেয়ে মজুদ বাড়িয়েছে হামাস। তখনও তার মজুদ অনেক ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হারজগ বলেন, এই ভান্ডারে বেশিরভাগই সম্ভবত স্বল্প মাত্রার। এগুলো সীমান্ত থেকে মাত্র ৬-১২ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। তবে দূরপাল্লার রকেটের ‘ভালো পরিমাণ’ সংগ্রহে রয়েছে হামাসের। এগুলো ইসরায়েলের জনবহুল এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম।
একজন গোয়েন্দা বিশ্লেষক ফাবিয়ান হিঞ্জ বলেন, হামাস অন্যান্য নিখুঁত রকেট ব্যবস্থা তাদের ভান্ডারে যোগ করতে চাইছে। তবে তারা এটা করতে সক্ষম হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিছু কিছু রকেট তাদের টার্গেটে ভালোভাবেই আঘাত করেছে। কিন্তু সেগুলো লাকি শট হতে পারে।
কোথায় থেকে আসে হামাসের অস্ত্র?
গোয়েন্দা বিশ্লেষক হিঞ্জের মতে, কিছু অস্ত্র বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেছে হামাস। এর মধ্যে ফজর-৩ ও ফজর-৫ ইরান থেকে এবং এম৩০২ রকেট সিরিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে তারা। তবে তারা নিজেরাই এখন রকেট তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এগুলোর রেঞ্জ প্রায় ১০০ মাইল, সেক্ষেত্রে প্রায় পুরো ইসরায়েলেই আঘাত হানতে সক্ষম হামাস।
হামাস বা অন্যান্য গোষ্ঠী মিশরের সীমান্ত নিয়ে গোপনপথে অস্ত্র নিয়ে আসতো। কিন্তু ২০১৩ সালে ক্ষমতা দখলের পর প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি সেই পথ বন্ধ করে দেন। তাই বিদেশ থেকে পুরো একটি অস্ত্র আনা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য।
যদিও সেপ্টেম্বর মাসে আল জাজিরার এক অনুষ্ঠানে হামাসের নেতারা দাবি করেন তারা ফজর মিসাইল এবং রাশিয়ার করনেট অ্যান্টিট্যাংক শেল স্থল ও সমুদ্রপথে গাজায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এখন নিজেরাই অস্ত্রশস্ত্র বানাচ্ছেন হামাস।
গাজায় তাদের নিজস্ব কারখানায় এসব অস্ত্র বানায় হামাস। এজন্য দেশীয় এবং বিদেশ থেকে পাচার করে আনা সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা।
সেন্টার ফর স্ট্রাটিজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন ফেলো এবং মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর ইয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে গাজা থেকে যে রকেট ছোঁড়া হয়েছে, তাতে হামাসের অস্ত্র ভান্ডারে ইরানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এনটি