ইমদাদুল হক ফয়েজী ।।
দেখতে দেখতে চলে গেলো পূন্যময় রমযানের অপার মহিমার দিবস-রজনীগুলো। আজ সিয়াম-সাধনাকারী বান্দাদের পুরস্কার লাভের মহোৎসব- ঈদুল ফিতর। সাদা-কালো, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু এককথায় সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মুমিন বান্দাগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদগাহে যাবেন, সালাত পড়বেন, পাশাপাশি বসে খুৎবা শুনবেন, মোনাজাত করবেন, ঈদগাহ থেকে শুরু করে সর্বত্র একে অপরকে ভালোবাসার বুকে জড়িয়ে আনন্দ-কুশল বিনিময় করবেন।
পছন্দের জামা-কাপড় পরতে ইতোমধ্যে সামর্থ্যবানেরা ঈদ শপিং করেছেন। অবশিষ্টরাও প্রস্তুতি প্রায় সেরে নিয়েছেন। ঈদের আনন্দ সবার। অবশ্য অসংখ্য মানুষ, তাদের সাধ্যের অনুপস্থিতির কারণে তা থেকে বঞ্চিত থাকেন। নিজেদের প্রিয় সোনামণিদের মুখে এক টুকরো হাসি ফুটানোর ইচ্ছে কেবল তাদের ইচ্ছেই থেকে যায়। একজন দু’জন নয় এমন অজস্র-অগণিত মানুষ আমাদের চারপাশে রয়েছেন।
পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র আমরা তাদের দেখি। কেউ মুখ খোলে কিছু চান বা বলেন। আবার কেউ ধৈর্যের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে নীরব-নিভৃতে বসে থাকেন। নিজেকে নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখেন। আত্মমর্যাদাশীল তারা। সমাজের এমন মানুষদের মুখে হাসি ফুটাতে ইসলামের ভূমিকা অনন্য, তুলনাহীন।
যাকাত, সদকাতুল ফিতর, দান-সদকা, সাহায্য-সহযোগিতা এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এগুলো তাদের অধিকার। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- তরজমা; “আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে, অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের জন্য” -সূরা মায়ারিজ। এই আয়াত প্রমাণ করে- বিত্তবানদের সম্পদে দরিদ্রদের অধিকার রয়েছে।
বিত্তবানদের দায়িত্ব হচ্ছে, দরিদ্র লোকদের খোঁজে খোঁজে বের করা এবং কোন প্রকার অহমিকা প্রকাশ ব্যতিরেকে ফকির-মিসকিন, নিঃস্ব-দরিদ্র, অনাথ-অসহায়, এতিম-বিধবা, তথা অধিকারীদের হাতে তাদের প্রাপ্য তুলে দেয়া।
খুশির কথা হচ্ছে- এগুলোর দ্বারা শুধু অন্যের কষ্ট-ক্লেশ দূর হয়না বরং; ইবাদত ও সম্পদের ত্রুটি-বিচ্যুতিও দূর হয়, পবিত্রতা ও সমৃদ্ধি অর্জন হয়, বিপদ-আপদ দূর হয়, সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্য ও ভালোবাসা লাভ হয়।
রাসূল সা. ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন।” -বুখারি, মুসলিম।
আবার কঠিন হৃদয়ের লোকদের ব্যাপারে সতর্কবাণী হচ্ছে- “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দয়া করেন না।” -বুখারি, মুসলিম। আসুন, আমাদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। অসহায়দের সাধ পূরণে সচেষ্ট হই, সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করি। মাহে রমযানের মহান শিক্ষা- আত্মোপলদ্ধি ও সহমর্মিতায় ভরে ওঠুক পুরো পৃথিবী। নির্মল হাসি-খুশি আর পবিত্র ভালোবাসার মাহেন্দ্রক্ষণে সবার মুখে ফুটে উঠুক প্রাণখোলা হাসি।
এনটি