আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেছেন, আধুনিক বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ ও নির্মম দমন পীড়ন ও হত্যা-গুমের এক সতত উৎস অবৈধ দখলদার কথিত রাষ্ট্র ইসরাইল রমজানের মধ্যে আবারো দানবীয় রুপে আবির্ভুত হয়েছে।
আজ শুক্রবার, বেলা ১১ টায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পরে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজরত মুসল্লীদের ওপর বর্বর ইসরাইলী আক্রমণ এবং ইসরাইলী সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও বেসামরিক মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপ‚র্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
গোটা বিশ্ব যখন করোনা মহামারিত ক্লান্ত, মুসলিম সমাজ পবিত্র রমজানের ইবাদাহ-বন্দেগীতে মশগুল তখনই অশুভ ইহুদীবাদী এই শক্তি তার বিষাক্ত নখ-দন্ত মেলে ধরেছে। ইফতারি ও নামাজ পড়ার মতো নিরিহ-শান্ত ইবাদাত চলাকালে গত সোমবার জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ঢুকে ইসরায়েলি পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস এবং নির্বিচার রাবার বুলেট ছুড়ে তিনশরও বেশি ফিলিস্তিনিকে আহত করে।
পুরো রমজান জুড়েই পুলিশের বাড়াবাড়ি ছিলো চরমে। এবং নিরবচ্ছিন্ন দখলদারীর মধ্যেই নতুন করে আদালতের মাধ্যমে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উৎখাতের বিতর্কিত একটি অপতৎপরতা শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনিরা শান্তিপ‚র্ণ ক্ষোভ প্রকাশ করতে গেলে বর্বরতার চুড়ান্ত করে ইসরাইলি বাহিনী। যাতে এখন পর্যন্ত হাজার খানেক মানুষ আহত ও শতাধিক নিহত হয়েছে। মানব সভ্যতার ক্রান্তিকালে ইসরাইলের এই দানবিক আচরণ আবারো প্রমাণ করলো যে, ইসরাইলের জন্মই একটি আজন্ম সন্ত্রাসের উৎস। এর অস্তিত্বই বিশ্ব শান্তির জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য মানবতার এবং বিশ্ব শান্তির জন্যই ইসরাইলের বিনাশ সাধন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত অর্ধশতাধিক বছর ধরে প্রতিবছর আমরা ইসরাইলীদের এমন বর্বরতা দেখে আসছি। কিন্তু জাতিসংঘসহ বিশ্ব শক্তিগুলো কার্যকর কিছুই করছে না। এমতাবস্থায় বিশ্ব সংস্থাসম‚হের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়েই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান ইহুদী তোষনকারী বিশ্বব্যবস্থা ভেঙ্গে মানবতাবাদী ও শান্তিবাদী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান পবিত্র ঈদের দিনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, ৭৩ বছর পূর্বে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে এই দিনেই দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে ১৪ মে একটি কালো দিবস। তিনি বলেন, জায়নবাদী ইসরায়েলীরা প্রকৃত ইহুদী ধর্মেও বিশ্বাসী নয়।
তারা ম‚লতঃ শয়তানের উপাসনা করে। কোন আসমানী ধর্মে বিশ্বাসী জাতি এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে না। তারা যে শুধু মজলুম ফিলিস্তিনীদের উপরই সন্ত্রাসী আক্রমণ চালায়, তা নয়। বরং তারা গোটা বিশ্বে যুদ্ধ বিগ্রহের পেছনে কলকাঠি নাড়ে। শয়তানের উপাসনাকারী জায়নবাদীরা বর্তমান পৃথিবীকে ধ্বংস করে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।
একটি বিষয়ে বাংলাদের মানুষের মধ্যে মোটামুটি জাতীয় ঐক্য আছে। বামপন্থী, ডানপন্থী, ইসলামপন্থী, সরকারী দল, বিরোধী দল সবাই অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং মজলুম ফিলিস্তিনীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে। অতএব, সরকারের এখন উচিৎ শুধু বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে, এরদোগানের মতো মজলুম ফিলিস্তিনীদের পক্ষে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহাগরের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, আমরা মুসলমানেরা হাজার বছর ধরে বাইতুল মুকাদ্দাস দেখভাল করার জিম্মাদারী পালন করেছি। তখন সকল ধর্মের মানুষ এই পবিত্র স্থানে যার যার মতো করে ইবাদত করেছে। কোন অশান্তি হয় নাই। কিন্তু যখন থেকেই এই অশুভ ইহুদী শক্তি বাইতুল মুকাদ্দাস দখল করেছে তখন থেকেই এই পবিত্র স্থানটিতে সংঘাত হচ্ছে ও রক্ত ঝড়ছে। সেজন্য বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইহুদী দখলমুক্ত করা এখন মানবতার প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বাংলাদেশ আজন্ম ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানিয়ে আসছে। কোন সরকারই এই অবস্থান পরিবর্তন করে নাই। এটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এখন সময় এসেছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের উচ্চকিত হওয়ার। আমরা চাই, সরকার প্রতিটি বিশ্বমঞ্চে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে আলাপ তুলুক এবং জোড়ালো অবস্থান গ্রহণ করুক।
সামপ্রতিক চারটি মুসলিম রাষ্ট্র কর্তৃক ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার সমালোচনা করে এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, জায়নবাদী অশুভ এই শক্তির মোকাবিলায় পাল্টা শক্তি অর্জন ও প্রয়োগই যে একমাত্র সমাধান তা বারংবার প্রমানিত হয়েছে। সেজন্য ফিলিস্তিন উদ্ধারে সম্মিলিত মুসলিম সেনাবাহিনী গড়ে তুলুন। যদি মুসলিম দেশের সরকারগুলো এতে ব্যর্থ হয় তাহলে সকল দেশের নাগরিকরা একত্রিত হয়ে ফিলিস্তিন উদ্ধারে গনবাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনসমূহহের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতার বিশাল মিছিল রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপ‚র্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে ইসরাইলের ধ্বংশ ও বিশ্ব মানবতার শান্তি প্র্রার্থনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
-এটি