রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শরহেবেকায়ায় প্রথম রশিদিয়ার আ. কাইয়ুম ও আজমা মহিলা মাদরাসার আফিফা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর

বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের ৪৪ তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল সোমবার (১০ মে)। এতে শরহেবেকায়া জামাতের (সানাবিয়া উলইয়া) পুরুষ শাখায় মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে ফেনী জেলার জামিয়া রশিদিয়া মাদরাসার মাে. আ. কাইয়ুম। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৮। একই মারহালায় মহিলা শাখায় মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে ঢাকা জেলার জামিয়া মিল্লিয়া মাদানিয়া, মিরপুর আজমা মহিলা মাদরাসার অফিফা। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৭২।

জামিয়া রশিদিয়া মাদরাসা ফেনী জেলার অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি বেফাকের মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেছিলো। প্রতি বছরই বেফাকে ঊর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করে জামিয়া রশিদিয়া। রশিদিয়ার ছাত্রদের আমল আখলাক ও পরিবেশের বেশ সুনাম রয়েছে।

আর রাজধানীর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম মহিলা মাদরাসা জামিয়া মিল্লিয়া আজমা মহিলা মাদরাসা। (দেশে প্রথম মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের হাইলধর মহিলা মাদরাসা) মাদারাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস রহ.। তিনি গত ২৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ইন্তেকাল করেন। এটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে আছেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস রহ. এর ছেলে মাওলানা ইমরান হোসাইন কাসেমী। মাদরাসার একাউন্ট সেকশনে দায়িত্বরত মাওলানা জহিরুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সানাবিয়া উলইয়া মারহালার পুরুষ শাখায় মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকার করেছে যৌথভাবে ২ জন। তারা হলাে, কুমিল্লা জেলার দারুল উলুম বরুড়া মাদরাসার মাে. রহমত উল্লাহ, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৫। অন্যজন ঢাকা জেলার লালমাটিয়া মােহাম্মদপুর মাদরাসার মুহা. আরিফ বিল্লাহ, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৫। ৩য় স্থান অধিকার করেছে ঢাকা জেলার উম্মুল কোরা, মােহাম্মদবাগ মাদরাসার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪।

একই মারহালার মহিলা শাখায় মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার ইব্রাহীমিয়া আমিনিয়া মহিলা মাদরাসার মােসা. আয়েশা সিদ্দিকা, প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৫, ৩য় স্থান অধিকার করেছে যৌথভাবে ২ জন। তারা হলাে, কুমিল্লা জেলার ইকরা লাকসাম মহিলা মাদরাসার নাছরিন সুলতানা শিফা, প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৩। অন্যজন হলাে ঢাকা জেলার জামিয়া মিল্লিয়া মাদানিয়া, মিরপুর আজমা মহিলা মাদরাসার সাদিয়া রহমান, প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৩।

গতকাল দুপুর ৩ টা ২০ মিনিটে রাজধানীর কাজলার পাড় (ভাঙ্গাপ্রেস) বেফাক মিলনায়তনে ৪৪ তম কেন্দ্রীয় বেফাক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ ফলাফল ঘোষণা করে বেফাক। এ সময় বেফাক সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের হাতে ফলাফল তুলে দেন বেফাকের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আমিনুল হক। এ সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা সফিউল্লাহ, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, (ভারপ্রাপ্ত) মহাপরিচাল মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আমিনুল হক, বারিধারা মাদরাসার মাওলানা মকবুল আহমদ, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী প্রমূখ।

এ বছর প্রকাশিত ফলাফলে বেফাকের মোট গড় পাসের হাড় ৭৪.৪%। ফজিলত মারহালায় গড় পাসের হার পুরুষ ৮০.৩৪%, মহিলা ৬৮.৫০%, সানাবিয়া উলইয়ায় গড় পাসের হার পুরুষ ৭২.৯৪%, মহিলা ৫৬.২৫%, মুতাওয়াসসিতাহ মারহালায় গড় পাসের হার পুরুষ ৮৫.২৭%, মহিলা ৬৮.৬৪%, ইবতিদাইয়্যা গড় পাসের হার পুরুষ ৭৫.৬১%, মহিলা ৬৬.৭৭%, হিফজ মারহালায় ৯৫.১৫%, ইলমুজ তাজভীদ ও কেরাত মারহালায় ৯০.৭৪%।

বেফাকে অংশ নেওয়া মোট শিক্ষার্থীদের হিসাব:

ফজিলত মারহালা
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১৫৮১ জন। পুরুষ ১২৬৫। নারী ৩১৬ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৪৮৪০ জন। পুরুষ ৩১০৪ জন। নারী ১৭৩৬।
জায়্যিদ: মোট ৭০২৩ জন। পুরুষ ৩৮০৪। নারী ৩২১৯জন।
মকবুল: মোট ৮৩৫ জন। পুরুষ ৩৬৫৯। নারী ৪৩৭৬।

সানাবিয়্যা উলইয়া
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১৭৫৭ জন। পুরুষ ১৪৭০। নারী ২৮৭ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৩৯৮৭ জন। পুরুষ ২৫৬ জন। নারী ১৪৬১।
জায়্যিদ: মোট ৫৫৩৪ জন। পুরুষ ২৭৯৭। নারী ২৭৩৭ জন।
মকবুল: মোট ৭৭০৮ জন। পুরুষ ২৬৮২। নারী ৫০২৬।

মুতাওয়াসসিতাহ
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৮৪৭৬ জন। পুরুষ ৬৫০৯। নারী ১৯৬৭ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ১০০২৩ জন। পুরুষ ৫১৭১ জন। নারী ৪৮৫২।
জায়্যিদ: মোট ১১০৫৮ জন। পুরুষ ৩৮৮৮। নারী ৭১৬৬ জন।
মকবুল: মোট ১২০৩৫ জন। পুরুষ ৩৪৭১। নারী ৮৫৬৪ জন।

ইবতিদাইয়্যা
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৪২৮৩ জন। পুরুষ ৩৩৪৮। নারী ৯৩৫ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৮২০৯ জন। পুরুষ ৪৫৫৮ জন। নারী ৩৬৫১।
জায়্যিদ: মোট ৯৮৯১ জন। পুরুষ ৩৯১১। নারী ৫৯৮০ জন।
মকবুল: মোট ২৩৭৮২ জন। পুরুষ ৬৭৫৮। নারী ১৫০২৪ জন।

হিফজুল কুরআন
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১০৮৭২ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান: মোট ৪১১৯ জন।
জায়্যিদ: মোট ২৮০৪ জন।
মকবুল: মোট ২৩২৮।

ইলমুত তাজবিদ ওয়াল কিরাত
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৯৩ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান: মোট ২৮৬ জন।
জায়্যিদ: মোট ৩১০ জন।
মকবুল: মোট ২১৩।

উল্লেখ্য, বেফাকের ৪৪ তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো গত ১৮ মার্চ ২০২১। শেষ হয়েছে ২৫ মার্চ ২০২১। সারাদেশে বেফাকের ২ লক্ষ ৩০ হাজার নিবন্ধিত পরীক্ষার্থীর থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয় পরীক্ষায়। এবছর বেফাক শিক্ষার্থীদের খাতা দেখার জন্য করা হয়েছিল নতুন নিয়ম। সারাদেশকে ১২টি জোনে ভাগ করা হয়েছিলো। মুমতাহিনগণ নির্দিষ্ট জোনে এসেই দেখতেন পরীক্ষার্থীদের খাতা। কিন্তু করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে এবারও বাড়িতে বসেই খাতা দেখার সিস্টেম চালু করে বেফাক। এরপর চূড়ান্তভাবে নিরীক্ষণ শেষ করে আজ সোমবার ফলাফল প্রকাশ করলো বেফাক।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ