সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোজা রেখেও দিনমুজুরির কাজ করেন তারা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর

আজ ২৫ তম রমজান। প্রভাতের স্নিগ্ধ আলো গায়ে মাখাতে হেটে যাই যাত্রাবাড়ী। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা রোডে চোখ পড়ে আমার। কয়েকজন দিন মজুর শ্রমিক বসে আছেন কারো অপেক্ষায়। যাদের কাজের লোক প্রয়োজন তারা আসবেন। পছন্দ হলে তাদের নিয়ে যাবেন কাজে। দিনশেষে কাজের মজুরি ধরিয়ে দিবেন হাতে।

রমজানের প্রথম দিন থেকেই তারা এই কাজ করে আসছেন। সারাদিন রোজা রেখে দিনমুজুরির কাজ করেন তারা। কাজ শেষে যা পান তাই দিয়ে সংসার সামলান। সারাদিনের কাজের টাকায় বাজার করে দেন ঘরের রানীকে। এভাবেই দিন কাটে তাদের। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ বা আকাশের খরতাপ; কোন কিছুই গায়ে মাখে না তাদের। ভ্রুক্ষেপ করার সুযোগ নেই রমজানের রোজার প্রতি। সারাদিন রোজা রেখে কাজ চালিয়ে যান তারা। এমনই কয়েকজন শ্রমিক এর সাথে কথা বলেছিলাম আজ। মোহাম্মদ হেলাল মোহাম্মদ বেলাল ও মোহাম্মদ নাজিমুদ্দীন তাদের অন্যতম।

দিন মজুর শ্রমিক মোহাম্মদ হেলাল আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘কি করবো? যদি কাজ না করি তাহলে তো পেটে ভাত জোটেনা। আর এখন করোনার কারণে আমাদের কাজও তেমন মিলে না। তবুও আশায় বসে থাকি। কখনো সকাল সকাল কাজ পেয়ে যাই। আবার কখনো কাজ পেতে দেরী হয়। তবে আল্লাহর শোকর আমরা প্রতিদিনই কাজ পাই এবং দিনশেষে ঘরের জন্য বাজার কিনে নিয়ে যেতে পারি।’

রোজা রেখে কাজে কষ্ট হয়? এমন প্রশ্ন করলে হাসিমুখে মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘তা কষ্ট হবে না কেন? হলেই বা কী করার আছে? আল্লাহ তালার বিধান মানতে হবে না? তাই শত কষ্টের পরও রোজা ভাঙ্গি না।’

আরেকজন দিন মজুর শ্রমিক মোহাম্মদ বেলাল। তিনি বলেন, ‘আমি আগে রিকশা চালাতাম। কিন্তু করোনাকালে একদিন রিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ রিক্সাটি ভেঙে দেয়। তারপর মালিকের থেকে কাকুতি-মিনতি করে সামান্য কিছু জরিমানা দিয়ে ছাড়া পাই। এখন আমার হাতে কিছুই নেই। তাই দিনমজুর কাজেই আমার ভরসা। করোনাকালের শুরু থেকেই আমি এভাবে দিনমজুরি করে যাচ্ছি।’

কি ধরনের কাজ করেন? এমন প্রশ্ন করলে হাসিমুখে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘যা পাই তাই। আমাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট ধরন নেই। নেই কোন নির্দিষ্ট স্থান। যেখানেই যে কাজ পাই সেখানেই সে কাজ করি।’

সবশেষ কথা বলেছিলাম মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন এর সাথে। সারাদিন কাজ করে কত টাকা পান? এমন প্রশ্ন করলে মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজের শুরুতে চুক্তি হয়। যত টাকায় চুক্তি হয় তত টাকাযই মালিকপক্ষ দিয়ে থাকেন। কাজ হিসাবে ও কাজের ধরণ হিসাবে চুক্তির কমবেশ হয়ে থাকে। যদি তিনি বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজ করান, তাহলে আমরা ১০০০ টাকা রোজ করে থাকি। আর যদি অন্য কোন কাজ করান। ভারী কোনো কাজ করান তাহলেও ১০০০ টাকা রোজে কাজ করি। আর নরমাল কোন কাজ হলে ৫০০ টাকায় করি। তবে ৫০০ টাকার নিচে কোন কাজের রোজ আমরা করি না।’

করোনাকালে এভাবে কত মানুষ রোজা রেখে কাজ করছেন তার ইয়ত্তা নেই। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে লকডাউনের এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেক মানুষ না খেয়েই প্রাণ হারাবে। তাই সরকারের প্রতি দিনমজুর এসব শ্রমিকদের আবেদন, খুলে দেওয়া হোক লকডাউন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ