।।মোস্তফা ওয়াদুদ।।
কওমি মাদরাসার আদর্শ ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, মাদরাসা খুলে দেওয়া এবং অমূলক হয়রানী বন্ধের দাবীতে আয়োজিত তাহাফফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশ (কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ) এর এক পরামর্শ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মাদরাসায় সারাদেশের মুহতামিমদের এ পরামর্শ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনটির সদস্য ও রাজধানীর আফতাবনগর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ আলীর পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করছেন সংগঠনটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এর সহকারী পরিচালক মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ।
সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান ফয়জীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামের সূচনা হয়। স্বাগত ভাষণে তিনি বলেন, সারাদেশে মাদরাসাগুলো খোলার বিষয়ে এর আগেও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার পুনরায় মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এবারও ইনফিরাদী (ব্যক্তিগতভাবে) মাদরাসা খোলার বিষয়ে চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবারের বিষয়টি একটু বিস্তৃত। কারো একার কথায় সরকার এবার মাদরাসা খুলে দিবে না।
তাই সবাই মিলেই সরকারের কাছে এবারের আবেদন করতে হবে। যাতে করে মাদরাসা সংশ্লিষ্ট কেউই যেনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের মতো কোনো পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আর না নিতে পারে।
সংগঠনের আহবায়ক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, আমরা আগেও কয়েকবার এককভাবে চেষ্টা করেছি। সরকার আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু ভাইয়ের অযাচিত বক্তব্যের কারণে সরকার মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। মাদরাসায় ছাত্র ভর্তি নেয়ার সময় কোনো রকমের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকবো না মর্মে স্বাক্ষর করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আমরা ছাত্রদের অংশ নিতে বাধ্য করাই। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের আকাবিররা রাজনীতির জন্য শুধু ছাত্রের উপর নির্ভর ছিলেন না। তাই পুনরায় আমাদের সবার সহযোগিতায় মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের মাদরাসাগুলো ঐতিহ্যের ধারায় লালিত। আমরা কখনো সরকারবিরোধী কোনো কার্যক্রমের সাথে কখনোই জড়িত নই। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অযাচিত বক্তব্যের কারণে আমাদের মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আপনাদের সমর্থন দোয়া কামনা করছি।
সিলেটের এদারা বোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা শায়খ জিয়াউদ্দীন প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজের বক্তব্য প্রদান করে বলেছেন, আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অতীতের ন্যায় এবারও হেফজখানা ও মক্তব খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। আলেম ওলামা ও দেশপ্রেমিক জনতার হয়রানী বন্ধ করা হোক। কওমি মাদরাসাকে দেওবন্দ ও আকাবিরের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার সুযোগ দেয়া হোক। পাশাপাশি কওমি মাদরাসাগুলো যেনো সরকার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করা না করে তার আহবান জানাচ্ছি।
মিরপুর-১৪ এর জামিউল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল বাশার নোমানী বলেন, মাদরাসাগুলো খুলে দিতে আপনাদের চারজন (তাহাফফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ) সরকারের সাথে যে কোনো চুক্তি করবেন; সে ব্যাপারে যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারের প্রতিশ্রুতি দিতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ঢাকার সেগুনবাগিচা মসজিদের খতীব মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী বলেন, আমরা কখনোই সরকারের শত্রু ছিলাম না। এখনও না। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের দায়ভার আমরা গ্রহণ করতে রাজী নয়। তাই মাদরাসাগুলো খোলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন করছি।
খুলনার মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী বলেন, কওমি মাদরাসায় কেবল তালীম শব্দ ব্যবহার করা হয় না। বরং তালীম ও তরবিয়াত উভয় শব্দ ব্যবহার করা হয়। সুতরাং মাদরাসাগুলো তালীমের পাশাপাশি তরবিয়তের প্রতিও মনোযোগ দেয়া হোক। কোনো বোর্ড যেনো রাজনীতির কোনো ইস্যু নিয়ে কোনো বক্তব্য তাদের প্যাডে না দেন। তার আহবান জানাচ্ছি।
মুহতামিম সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আব্দুল বাতেন শরিয়তপুর, মাওলানা আব্দুল কাদের বরিশাল, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওলানা আব্দুল হক কাউসারী, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মাওলানা জহির বিন ইসমাইলসহ সারাদেশের বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিম।
এছাড়া এতে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া দারুল উলুম বনশ্রী মাদরাসার মুহতামিম ও সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মাওলানা হেলাল উদ্দীন, ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল কাদের কাসেমী, মাওলানা শেখ আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওলানা শহিদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবু বকর বরিশাল, মুফতি কামরুজ্জামান ফরিদপুর, মাওলানা আব্দুল বাতেন, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন দাউদকান্দি, মাওলানা নূরুল্লাহ, মাওলানা মুজিবুরর রহমান সিলেট, মাওলানা সাইফুল্লাহ গাজী নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের অনেক উলামায়ে কেরাম।
এমডব্লিউ/