মুফতি আহসান শরিফ।।
রহমতের দশকের আর মাত্র দুদিন। এখনও আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। আমরা এখনও ব্যাকুল হতে পারছি না। আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্খায় অস্থির হতে পারছি না। প্রতিযোগিতামূলক ইবাদত করতে পারছি না। নিজেকে সপে দিতে পারছি না। আল্লাহর ভালোবাসায় উজাড় করতে পারছি না আমাদের মন ও দেহরাজ্য।
দুনিয়ার মহব্বত আমাদের আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে। এ মহব্বত আমাদের কোন কাজে আসবে না। এটা একটা চর্মরোগের মতো। চুলকাইলে ভালো লাগে। পরে কষ্ট হয়। প্রার্থিব মোহ মানুষকে সবরকম অপরাধে লিপ্ত করে। অথচ আল্লাহর মহব্বতে প্রার্থিব লাভ যেমন আছে, পরকালীন লাভও আছে। আল্লাহর ভালোবাসা মানুষকে অপরাধমুক্ত থাকতে সাহায্য করে। শান্তি ও নিরাপত্তা দেয়। অভাব দূর করে। প্রার্থিব সম্মান তো দেয় এমনকি সপ্তম আসমান ভেদ করে আল্লাহর আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। ইহ এবং পরকালীন দু জগতেই সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
আল্লামা রুমি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বেশ সুন্দর বলেছেন র্হাকে রা জামা যে এশ্কে চাক শুদ/ উ-যে র্হেচও আইবে কুল্লি পাক্ শুদ। জিস্ম-খাক আয এশ্ক বর আফলাক শুদ/ কু-হ দার রক্ছ আ-মদও চালাক শুদ। তিনি বলেন, মহব্বত ও আল্লাহ প্রেমের ক্রিয়া যার ওপর হবে সে লোভ, মোহ ও সবরকম অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে। মহব্বত আর ভালবাসার কারণেই তো মাটির দেহ সপ্তম আকাশে উঠেছে এবং এই মহব্বতের কারণেই নির্জীব পাহাড়ে প্রাণচা ল্য সৃষ্টি হয়ে নেচে ওঠার মতো দৃশ্য অবলম্বন করেছে।
নবীজীর আল্লাহর জন্য মহব্বত ছিল বলেই তো তিনি দুনিয়া জয় করে মেরাজে সাত আসমান ভেদ করে আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর মহব্বতে আল্লাহকে দেখতে চাইলেন। নশ্বর এই পৃথিবীতে তা সম্ভব নয় প্রমাণিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিসসালামকে তুর পাহাড়ের দিকে তাকাতে বললেন। মুসা আ. এশ্ক আর মহব্বত নিয়ে তুর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এ সময় আল্লাহর একটি সৃষ্টি মাত্রÑবিশেষ নূর ওই পাহাড়ের দিকে চমকাল। এতে তুর পাহাড় নেচে ওঠার মতো আন্দোলিত ও কম্পমান হয়ে ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ল আর মূসা আলাইহিসসালাম বেহুশ হয়ে সেখানেই পড়ে গেলেন। এসবই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।
এ জন্যই রহমতের দশকে আর কোন প্রতিযোগিতা নয়। কেবল আল্লাহকে ভালোবাসা আর আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করাই হবে বুদ্ধিমানদের কাজ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের কাছে রমজান এসেছে। এটি বরকতের মাস। মহান আল্লাহ এ মাসে প্রচুর রহমত দান করেন। প্রচুর ক্ষমা করেন এবং প্রচুর দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের নিয়ে গর্ব করতে থাকেনÑ তোমরা দেখ আমার বান্দারা এ মাসে কত ইবাদত করছে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতিযোগিতা দেখবেন তোমরা কত ইবাদত করতে পার। এ জন্য তোমরা আল্লাহকে দেখাও কত ভাল কাজ করতে পার। ভাল কাজ করে আল্লাহকে দেখাও। এটাতো এত বেশি রহমতের মাস, এত রহমতের সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও যে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত লাভ করতে পারল না সে আসলেই হতভাগা। [তবরানি]
আসুন, আমরা দুনিয়ার সব কিছুকে ছোট করে আল্লাহর ইবাদতে নেমে যাই। রহমত লাভে ধন্য হওয়ার প্রাণপন চেষ্টা চালাই। রাসুলের বানি নিজের জীবনে বাস্তবায়ন প্রতিযোগিতা করি। আমরা পারব তো? আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা, ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
আওয়ার ইসলামে আপনার মূল্যবান লেখাটি পাঠাতে মেইল করুন[email protected]
-এটি