মুফতি আহসান শরিফ।।
রমজান মাসের পুরোটাই ইবাদত। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। এ মাসে রোজা রাখা যেমন ফজিলতের, ইফতার করাও ফজিলতের। তারাবি আদায়, সাহরি, কিয়ামুল লাইল, এতেকাফ সবই ইবাদত। কেবল ইবাদতই নয়, এ মাসে নফলও ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব। এজন্য সামর্থবানরা দান করছেন হাত খুলে। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে। নফল আদায়ে ব্যস্ত মুমিন নারী পুরুষ। তিলাওয়াতে কল্ব সতেজ করছেন হাফেজে কুরআন ও কুরআনপ্রেমী মানুষ। সব মিলিয়ে ইবাদতের মৌসুম রমজান।
মাওলার দিদার লাভের মাস রজমান। জান্নাতের পথ সুগম করার পথ রমজান। ইবাদতের প্রতিযোগিতা করার অপূর্ব সুযোগ এখনই। অন্য কোন প্রতিযোগিতা নয়। খেলার প্রতিযোগিতা নয়। ব্যবসার প্রতিযোগিতা নয়। মারামারির প্রতিযোগিতা নয়। বেপর্দা, গান বাজনা, টিভি দেখা, খেলা দেখা বা দুনিয়া নিয়ে জমে থাকার কিংবা প্রতিযোগিতা করার সময় এ মাস নয়।
এ মাসে সামান্য দানেরও সওয়াব অনেক। কী অপূর্ব মুহূর্ত। একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করালেই রোজাদারের সমান সমান সওয়াব মিলবে। সুবহাল্লাহ। তাও পেট পুরে না খাওয়ালেও এ সওয়াব। একটি খেজুর দিয়ে খাওয়ালে কিংবা এক গ্লাস শরবত বা পানীয় দিয়ে খাওয়ালেও। আল্লাহু আকবর। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন রোজাদারকে ইফতার করানোটা তার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার ওসিলা হবে।
এই ইফতার করানোর কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে ওই রোজাদারের রোজার সমতুল্য সওয়াব দান করবেন। এতে ওই রোজাদারের সওয়াব কমানো হবে না। ইফতার করানো ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তার নিজ ভাণ্ডার থেকে রোজাদারের রোজার সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইফতার করানোর মতো সঙ্গতি আমাদের সবার নেই। নবীজী বললেন, একটা খুরমা খাওয়ালে বা এক ঢোক পানি পান করালে কিংবা এক চুমুক দুধ পান করালেও এই সওয়াব পাওয়া যাবে।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পান করাবে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে কেয়ামতের ময়দানে আমার হাউজে কাউসার হতে তাকে শরবত পান করাবেন। এই হাউজে কাউসার থেকে শরবত পান করার পর জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার আর পিপাসা লাগবে না।
পাঠক, একটু ভেবে দেখুন তো। একটি রোজার সওয়াব কত! কেউ যদি জীবনভর নফল রোজা রাখে, একটি ফরজ রোজার সমান সওয়াব হয় না। অথচ সামান্য একটু ইফতার করিয়ে রমজানের একটি ফরজ রোজার সওয়াব মিলবে। এরচে বেশি আর কী চাই। আপনার সামর্থ অনুযায়ী আপনি খাওয়াবেন। পেটপুরে খাওয়ানো লাগবে না। সর্বোত্তম খাবারও জরুরি নয়। মূলত মহান আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন। সাধ্যের কতটুকু মানুষ ব্যয় করে। উত্তম খাওয়াতে পারবে না বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। আবার সাধ্য থাকলে অনুত্তম খাবারও কীভাবে খাওয়াবেন।
আমাদের দেশের বহু মানুষের এখনও প্রতিদিন সাহরির জন্য খাবার জুটে না। এক গ্লাস পানি দিয়ে ইফতার করতে হয় কারো কারো। ভালো খাবার তো পরের কথা খাবারও পায় না। খাবার পেলেও তৃপ্ত হয়ে খেতে পারে না। ঢাকার সেগুন বাগিচার মতো অভিজাত এলাকায় ড্রেন থেকে উঠিয়ে ঝুটা হাড়গুলো খেতে নিজের চোখে না দেখলে হয়ত বিশ্বাসই করতে পারতাম নাÑ এ রকম মানুষও বাংলাদেশে আছে।
কিছু মানুষের স্বদিচ্ছা হলে, আগ্রহী মানবদরদি কিছু মানুষ এগিয়ে এলে, অনেক রোজাদার তৃপ্তি পাবেন। সাহরি ও ইফতারের সুযোগ পাবেন। মহান আল্লাহ খুশি হবেন। তাকে জান্নাত দান করবেন। আমরা কি পারি না কিছু বিলাশিতা কমিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে? নবীজির সুসংবাদ লাভের জন্য রোজাদার মানুষকে ইফতার করাতে? আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক:, প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা শারমিন ভিলা, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
-এটি