মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
বর্তমানে আমাদের সমাজে একটি প্রথা জঘন্য রূপ লাভ করেছে! বিবাহিত দম্পতিকে কেন্দ্র করে মেয়ে পক্ষ ছেলে পক্ষের বাড়িতে রমজান মাসে ইফতারি পাঠানো। প্রথাটি এভাবে পালিত হয়, যেন মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে ইফতারি না পাঠানো গর্হিত অপরাধ। এতে পরিবারের একজন বধুকে কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়-তা ভুক্তভোগীই জানে!
বিশেষ করে যারা গ্রামীণ সমাজের মানুষ রয়েছেন। তারা এই প্রথার কারণে বেশি ভুক্তভোগী। রমজান আসার কিছুদিন পূর্ব থেকেই মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজন বিশেষ করে ননদী, দেবর, দেবর বা ভাসুরের বউ, শাশুড়ি এমনকি স্বামীও বিভিন্নভাবে মেয়েকে বলতে থাকে, এইবার তোমার বাপের বাড়ি থেকে কেমন বড় ইফতারি আসবে দেখা যাবে? শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও জঘন্য এই মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবার ভেঙে গেছে। আবার অনেকেই আত্মহত্যা করেছে! যা হয়তো আমাদের জানার বাহিরে থাকে বা জেনেও চুপ থাকি।
এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম ‘আমরা ঢাকাবাসী’ সামাজিক সংগঠনের মহাসচিব মো. জামাল নাসের চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রকারান্তারে এটি একটি যৌতুক। আর যৌতুক দেয়া-নেয়া দুটোই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট পন্থা। যৌতুকের অভিশাপ গ্লানি থেকে লাখো গরিব অসহায় পরিবারগুলোকে বাঁচাতে যৌতুক দেয়া-নেয়ার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ঘরে ঘরে এই সামাজিক দুষ্ট ক্ষতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ ও গণঘৃণাবোধ জাগ্রত করতে হবে।
এক আলোচনায় সভায় যৌতুক বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছিলেন, যৌতুক আজ জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রমজান এলে শুশুর বাড়ি থেকে ইফতার না দিলে নিজের স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালান-সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই। এসব সামাজিক কুসংস্কার ও অবক্ষয় প্রবণতা থেকে বাঁচতে হলে জাতীয় জাগরণ ও সম্মিলিত সচেতনতা জরুরি।
সিলেট আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা শায়েখ জিয়াউদ্দীন বলেন, সমাজের এ ব্যাধিকে দূর করার জন্য কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সমন্বিত প্রয়াস। আলেম সমাজ সোচ্চার হলে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে এসব সামাজিক অভিশাপ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চাঁদপুর জেলার প্রধান মাওলানা হারুন মুসতাকিম বললেন, বাংলাদেশে যৌতুক বিরোধী আইন থাকলেও আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই। ফলে এই সামাজিক কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসা যাচ্ছে না।
সমাজের সাধারণ সচেতন অনেক নাগরিকই সচেতনতার সহিত এই সকল প্রথা বন্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন। আবার অনেকেই বলে থাকেন এর দ্বারা আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয়। বিষয়টি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। জোরজবরদস্তির মাঝে কখনো সুখ খোঁজে পাওয়া যায় না। বরং আপোষেই মিলে শান্তি।
এইসকল প্রথার কারণে যেন আর কোন মেয়ে তার শশুর বাড়ির মানুষের দ্বারা মানুষিক নির্যাতনের স্বীকার না হয় তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে আপনি, আমি এবং আমরা সবাই। আপনি আপনার ঘর থেকে শুরু করুন। কারণ আপনার বদলের মধ্য দিয়েই আপনার চারপাশ বদলাতে বাধ্য। শুধুমাত্র আত্নীয়তার বন্ধনের দোহাই দিয়ে এই প্রথাকে সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত করতে এর পক্ষ না নেই।
এমডব্লিউ/